নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “কিছু কিছু ব্যক্তি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন শুধুই বিদেশে অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে। তবে, ভালো মালিকও আছেন, যাদের কারণে রপ্তানি বেড়েছে।”

শনিবার (২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং শ্রমিকদের মাঝে চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

কিছু কারখানা বন্ধ থাকার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “কারখানা বন্ধের জন্য আমি দায়ী নই। কিছু মালিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এখন টাকা ফেরত দিতে পারছেন না, দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তারা কারখানা করেছেন আসলে টাকা-পয়সা এদিক-সেদিক করার জন্য।”

তিনি বলেন, “দেশে তো অনেক কারখানা এখনো চলছে। না চললে ৭-৮ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হতো কীভাবে? ভালো মালিক আছেন, যারা কখনো ডিফল্ট করেননি। শ্রমিকদের দেখভাল করছেন, নিয়মিত বেতন দিচ্ছেন। অনেক বড় বড় কারখানা এখনো কার্যকরভাবে চলছে।”

শ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “শ্রমিকরা চাইলে আন্দোলন করতেই পারেন। যে কেউ তার ন্যায্য দাবির পক্ষে রাস্তায় নামতে পারেন। আমিও পারি। এটি গণতান্ত্রিক অধিকার।”

শ্রমিক সংগঠনে নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “শ্রমিক ইউনিয়ন বা ফেডারেশনের নেতৃত্বে দেখা যায়, একজনকে সরিয়ে আরেকজন বসে গেছেন, অথচ কোনো নির্বাচন হয়নি। নৌ মন্ত্রণালয়ে এমন একজন আছেন, যিনি ২৭ বছর ধরে একই পদে আছেন। তিনি তো প্রায় স্থায়ী হয়ে গেছেন। কিন্তু, বিষয়টি তো এমন নয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই বোঝা যায়, কে কাকে বসাবে। আমরা যখন গণতন্ত্রের কথা বলি, তখন তা প্রতিটি স্তরে থাকতে হবে।”

এর আগে একই ভবনে এক গবেষণা কনফারেন্সের উদ্বোধন করেন শ্রম উপদেষ্টা। সেখানে চা বাগানের নারী শ্রমিকদের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘চা বাগানে শৌচাগার না থাকা খুবই অমানবিক। এর ফলে নারী শ্রমিকদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এমনকি সেখানে বিশুদ্ধ পানিও পাওয়া যায় না। এই অবস্থা চলতে পারে না।”

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ওমর মো.

ইমরুল মহসিন এবং রাজশাহী বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/কেয়া/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ