জামায়াতের বিক্ষোভে নেতারা: গণহত্যা বন্ধ না হলে প্রয়োজনে ফিলিস্তিনে লংমার্চ
Published: 3rd, October 2025 GMT
জাতিসংঘের আদালত ঘোষিত যুদ্ধাপরাধী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলেছেন, “আমরা প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ করছি। ত্রাণবাহী জাহাজ ও অধিকারকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। না হলে আমরা প্রয়োজনে ফিলিস্তিন অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবে। দরকার হলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।”
গাজায় ত্রাণবাহী জাহাজ ফ্লোটিলায় আক্রমণ, হামলা ও বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বাদ জুমা রাজধানীর বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন তারা।
আরো পড়ুন:
ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধ: জামায়াত
ব্রাজিল ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক
মহানগর উত্তরের সভাপতি সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম।
ত্রাণবাহী জাহাজ ও অধিকারকর্মীদের আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, ইসরায়েল বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় একের পর এক এক নিষ্ঠুর গণহত্যা পরিচালনা করছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, এই গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে নারী শিশুরা ও ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ। আমরা প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব বর্বর এই গণহত্যা, নারী শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আজ ফুঁসে উঠেছে। সর্বশেষ তারা ত্রাণবাহী জাহাজে নৃশংস হামলা করেছে। পাঁচশ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।”
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে মত দিয়েছেন, ফিলিস্তিনের গাজাকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ব মোড়ল কয়েকটি দেশ এই বর্বরবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে, সমর্থন দিয়ে মুসলামনদের রক্ত নিয়ে হোলিখেলা শুরু করেছে। খুনিরা জানে না, মুসলিম জাতি বীরত্বের সঙ্গে শহীদ হতে জানে, কিন্তু পরাজয় বরণ করে না। আমরা বিশ্বাস করি শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে ফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই।”
“গণহত্যা বন্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দিতে হবে। যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করতে হবে। ফিলিস্তিন যতদিন মুক্ত না হবে, ততদিন আমরা পাশে থাকবে, লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান জামায়াতের এই নেতা।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, “বিশ্বের মুসলামনদের কাছে ঘৃণ্য ইসরাইলি বাহিনী গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার নারী শিশু হত্যা করেছে। অভুক্ত রয়েছে হাজার হাজার বৃদ্ধ নারী শিশু।”
“কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে গাজাবাসীকে নৃশংসভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই অভুক্ত নারী শিশুদের জন্য যখন খাবার নিয়ে বিভিন্ন দেশের পাচশ অধিকারকর্মী ত্রাণ নিয়ে জাহাজ যোগে রওয়ানা দেওয়ার পর ইসরাইলি হায়েনারা সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করে ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করেছে। সেখানকার মানবাধিকার কর্মীকে আটক করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “জাতিসংঘের আদালত কুখ্যাত নেতানিয়াহুকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করেছে। আমরা জানতে চাই, এই আসামি কিভাবে বিভিন্ন দেশে সফর করতে পারে।”
"আসুন, মিছিলের মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই, ফিলিস্তিনিদের সাথে আমরা আছি। ত্রাণবাহী জাহাজ ও কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। গাজায় গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। প্রয়োজনে ফিলিস্তিন অভিমুখে লংমার্চ করবে। দরকার হলে মজলুমদের জন্য যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত রয়েছি।”
জাতিসংঘের একশ সাত চল্লিশটা দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, “স্বাধীন ফিলিস্তিন বিষয়ে ইসরাইল কর্ণপাত না করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। আমরা মনে করি, ফিলিস্তিন একটা স্বাধীন দেশ, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। গাজা মুসলমানদের সভ্যতার মূল্যবোধের অংশ। আসুন ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করি।”
সমাবশে থেকে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। মিছিলে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি পল্টন মোড় ঘুরে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কর্মসূচি শেষ করে জামায়াত।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ক ল ইসল ম খ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকরের দাবি শহীদ রাকিবুলের মা-বাবার
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ঝিনাইদহের রাকিবুল হোসেনের মা ও বাবা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আরো পড়ুন:
ফ্যাসিবাদ ও জুলুমের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায়: খেলাফত মজলিস
রায়ে খুশি শহীদ আবু সাঈদের বাবা-মা
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ের পর সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় শহীদ রাকিবুল হোসেনের বাবা আবুবকর সিদ্দিক ও মা হাফিজা খাতুন সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে উল্লিখিত দাবি জানান।
হাফিজা খাতুন বলেছেন, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। আদালতে আজ সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শহীদের মা হিসেবে আমি আজ আংশিক সন্তুষ্ট। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ, আল্লাহ যেন আমাকে হায়াত দেন। আমি যেন শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকর দেখে যেতে পারি।
আবুবকর সিদ্দিক বলেন, শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামালসহ জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সকলের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। যারা গণহত্যা চালিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। আজ আমরা খুশি। শেখ হাসিনা বহু মায়ের বুক খালি করেছে। একজন নারী হয়েও সে কীভাবে এত মায়ের সন্তানকে হত্যার আদেশ দিয়েছে, তা আমরা ভেবে পাই না।
ঢাকা/সোহাগ/রফিক