ওয়াশিংটন সফরে পরমাণু অস্ত্রসহ ট্রাম্পের কাছে আর কী কী চাইতে পারেন সৌদি যুবরাজ
Published: 18th, November 2025 GMT
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছেন, যা কাতারের সঙ্গে হওয়া চুক্তিকে ছাপিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তিনি চাচ্ছেন এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) চিপস ও এআইচালিত ড্রোন এবং সম্ভবত তাঁর দেশে মার্কিন পরমাণু অস্ত্রের মোতায়েন।
আজ মঙ্গলবার ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার মুখে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ রয়েছে, তবে তিনি সেটা ভালোভাবেই সামলে যাচ্ছেন। গত গ্রীষ্মে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সংঘাত থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি। এমনকি এই অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে তিনি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই চাহিদার ফর্দ তাঁর আত্মবিশ্বাসী মনোভাবেরই প্রকাশ।
সৌদি যুবরাজের বিপরীত পক্ষে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি তাঁর দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ পারমাণবিক এবং এআই প্রযুক্তি আলোচনার টেবিলে রাখতে প্রস্তুত।
সৌদি যুবরাজের এই সফরের সাফল্য নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মৌলিক মনোভাবের ওপর। সেটি হচ্ছে—চীন নিয়ে মার্কিন নিরাপত্তাব্যবস্থার উদ্বেগ। তারপরও মার্কিন প্রযুক্তি সুরক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রধান অর্থনীতির দেশ আছে, তাদের কারও কারও কাছে বড় অঙ্কের প্রযুক্তি বিক্রি নিশ্চিত করা। অনেক দেশের বাজেটে টানাটানি চললেও সৌদি আরবের কাছে বড় ধরনের খরচ করার মতো অর্থ রয়েছে।
এমন একটা সময় ছিল, যখন মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা মূলত বোয়িং এবং লকহিড মার্টিনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা সচল রাখার চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে হোয়াইট হাউসে আসতেন। অস্ত্র ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্বকোষের মতো জ্ঞান রাখা ইরানের শাহ এই ধরনের সফরের জন্য কুখ্যাত ছিলেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস নামেও পরিচিত) এই অত্যাধুনিক কেনাকাটার তালিকা প্রমাণ করে যে তিনি তাঁর দেশকে অনেক বেশি পরিণত ও ভবিষ্যৎমুখী হিসেবে দেখছেন।
এডেলম্যান পাবলিক অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রেসিডেন্ট আয়হাম কামেল মিডল ইস্ট আইকে বলেন, এমবিএস কোনো নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা খুঁজছেন না। বরং যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে শক্তিশালী করতে চাইছেন। এটি প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের একটি দ্বিমুখী প্রবাহ।
কামেল যোগ করেন, সৌদি আরব এখন বহুকেন্দ্রিক এক বিশ্বব্যবস্থার অংশ হতে চায়। তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতার সুবিধা নিতে তারা কৌশলগতভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।
পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা চুক্তি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষণীয় বিষয় হলো সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সুরক্ষার আওতায় আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার কয়েক দিন পরই সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে।
ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে। এই চুক্তির পর সৌদি ও পাকিস্তান দুই দেশই বলেছে, এতে সব সামরিক বিকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের পারমাণবিক আলোচনায় কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে। তবে একজন সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি আরবে সুরক্ষা বাড়িয়ে দেওয়ার একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই আলোচনা তাদের (সৌদি আরব) পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতা থেকে টেনে বের করে আনবে। কাতারের চেয়ে সৌদি আরবের জন্য ভালো কিছু হবে।’
সাবেক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মনে হয়, আগামী সপ্তাহে আলোচনায় এমন কিছু দেখা যেতে পারে, যা সৌদি আরবকে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করার ইঙ্গিত দিতে পারে।’
এর আগে মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন কাতারে ইসরায়েলের হামলার অনুমোদন দিয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের পুরোনো ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।
তবে সৌদি আরবের জন্য সেই ভাবমূর্তি দুর্বল হতে শুরু করে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে। ওই সময় সৌদি আরবের আরামকো তেল স্থাপনায় ইরান হামলা চালিয়েছিল। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের প্রশাসন তখন তেহরান বা তার মিত্র হুতি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে রাজি হয়নি। সৌদি আরব তখন হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল।
এয়াশ শো চলাকালে ইসরায়েলের আকাশে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান। ২৬ এপ্রিল ২০২৩, তেল আবিব.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ব যবস থ ইসর য় ল য বর জ র জন য আরব র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আউট’ লিখে ভিডিও দেওয়া ছাত্রদল কর্মীকে আসামি করে মামলা
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ওরফে জহির হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় ‘আউট’ লিখে ক্রিকেট খেলার ভিডিও পোস্ট করা ছাত্রদল কর্মী কাউসার মানিক বাদল ওরফে ছোট কাউসারসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
আরো পড়ুন:
রাজধানীর পল্লবীতে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা
গোপালগঞ্জে গরু চুরি: গণপিটুনে আহত আরেকজনের মৃত্যু
আরো পড়ুন: বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
পুলিশ জানায়, চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার পশ্চিম লতিফপুর এলাকা থেকে কাউসারের তিন সহযোগী হুমায়ূন কবির সেলিম (৫০), আলমগীর হোসেন (৪০) ও ইমন হোসেনকে (২১) গ্রেপ্তার করে। তাদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের আধা ঘণ্টা পর কাউসার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ‘আউট’ লিখে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকসহ একটি ক্রিকেট খেলার ভিডিও পোস্ট করেন। এই পোস্টকে কেন্দ্র করে এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয় এবং নিহত ব্যক্তির পরিবার তাকে হত্যার অন্যতম দায়ী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। হত্যা মামলায় কাউসারকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।
আবুল কালাম চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চন্দ্রগঞ্জের মোস্তফার দোকান এলাকায় তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
অভিযুক্ত কাউসার স্থানীয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য। গত বছরের ৭ আগস্ট বিভিন্ন অভিযোগে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য কাউসারকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদল। পরবর্তীতে ৩ নভেম্বর পুনরায় কাউসারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদল। এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তিনি একটি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি। এ ছাড়া ছাত্রদল নেতা কাউসারের সঙ্গে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ ছিল আবুল কালামের।
চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফয়েজুল আজীম বলেন, “নিহতের স্ত্রী খুনের ঘটনায় মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডের আবেদন করে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। কাউসারের পোস্টটি তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের সব কারণ ও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে।”
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ