কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ-এর ১৩৫তম তিরোধান স্মরণে তিন দিনের স্মরণোৎসব। এবছরই প্রথম এই আয়োজন হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। এ নিয়ে খুশি সাধু-ভক্ত ও লালন অনুসারীরা।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে এ আয়োজনের শুভ উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে এরইমধ্যে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধু-ভক্তরা ছুটে এসেছেন লালন আখড়াবাড়ি ও মাজার প্রাঙ্গণে।

শুক্রবার সাধুদের রীতিতে অনুষ্ঠান শুরু হলেও একে ঘিরে গ্রামীণ মেলা চলবে তিনদিন ধরে। সেই সাথে আলোচনাসভা ও গভীর রাত অবধি লালনের গানের আসরের আয়োজন থাকবে। মেলা শেষ হবে ১৯ অক্টোবর রবিবার। 

এবারে লালন মুক্ত মঞ্চে আলোচনাসভার পাশাপাশি প্রখ্যাত প্রয়াত লালন সংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এবার একটু আগেভাগেই লালন আখড়াবাড়িতে জড়ো হয়েছেন সাধু ভক্ত-অনুসারীরা।

আয়োজকরা বলছেন, দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আগত ভক্তরা মনে করেন, দুই হাজার বছর পূর্বে দার্শনিক সক্রেটিসের সেই বিখ্যাত বাণী ‘নো দাই সেলফ’ এর মতো মর্মকথা যেভাবে মানুষের মনে দাগ কেটেছিল এবং বিশ্ব সভ্যতার ক্রমবিকাশকে প্রভাবিত করেছিল। এতকাল পরে এসে আধ্যাত্মিক চিন্তার দার্শনিক মহামতি লালনের সংগীত ও ধর্ম-দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে মুক্ত চিন্তক গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 

যদিও এর আগে বাউল সাধক ফকির লালন শাহের জীবদ্দশা (১৭৭৪-১৮৯০) থেকে চলে আসা দোল উৎসব এবং তিরোধান দিবস স্মরণেকে (১লা কার্তিক ১২৯৭) ঘিরে এই আধ্যাত্মিক দর্শনের গুরু লালন শাহের ভক্ত অনুসারীরা একেবারেই নিজস্ব ঘরানার রীতিতে আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সাঁইজিকে স্মরণ করতে এদিনটির জন্য অপেক্ষা করেন। তারই বাঁধভাঙ্গা সাধুর জোয়ারে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাইজির তীর্থ ধাম।

সাধু আনু ফকির বলেন, “এবারে সাঁইজির অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশ বড় আকারে হচ্ছে। এতে আমরা খুশি। লালনের দর্শন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। মানুষের আনন্দের জায়গা এখন কমে এসেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবারে আগের তুলনায় বেশি লোকসমাগম হবে এবং হচ্ছে।”

মামুন সাধু বলেন, “সরকারের এমন উদ্যোগ অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। অনেক দেরীতে হলেও এত বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে লালণের বানী দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা এবং লালনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ায় আমরা সকলেই আনন্দিত।”

দর্শনাথী জেরিন বলেন, “প্রতিবছরই আমি এখানে আসি। এবারে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ নেওয়ায় দর্শনার্থীরা আগেই আশা শুরু করেছে। প্রতিবছরের তুলনায় আরো বেশি মানুষের সমাগম হবে এবার।”

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, লালন শাহের ১৩৫তম স্মরণোৎসব উদযাপনে তিন দিনের আয়োজনকে ঘিরে লালন একাডেমি, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন শ ক রব র স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

শূন্য সুখের শহর

আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখার মন্ত্রটা যখন পেয়েছি, তত দিনে রুদ্র ঘর বেঁধে ফেলেছে আকাশেরই ঠিকানায়। আর আমি মাত্র রাঙা কৈশোরের দিকে হাঁটছি, পথ পুরোটা ফুরোয়নি। কেবল ‘খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ’ লুকানো শিখে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেই তখন থেকেই ‘ভালো আছি বা ভালো থেকো’ বলার জন্য আকাশকেই বেছে নিয়েছিলাম একমাত্র ঠিকানা হিসেবে। আর এখন এই চটজলদি বার্তার যুগে তো সবার সঙ্গে সম্পর্কগুলোই হয় খুব পানসে; নয় অকারণে জটিল। সম্পর্কগুলোই যেখানে অস্থির, চিঠি লেখা সেখানে পুরোটাই এক বাহুল্য অথবা সংকোচ। ঠিকানাই–বা জানি কজনের? আর ডাকপিয়নই–বা কই যে পরম মমতায় এই চিঠি পৌঁছে দেবে কারও গন্তব্যে? তারপরেও একটা চিঠি লিখতে মন চাইল। কী আশ্চর্য চিঠি লেখার মতো কেউ কোথাও নেই। কারও আর সময় নেই, একটা চিঠির অপেক্ষায় থাকবে। যত্ন করে হলুদ খামটা ছিঁড়ে আস্তে আস্তে ভাঁজ খুলে মেলে ধরবে কারও কথার মালায় সাজানো এক টুকরো কাগুজে বায়োস্কোপ।

যে একটি নগরে দুজন থাকাটাই ছিল একটিমাত্র সুখ। সেই সুখের খঞ্জনা ছেড়ে এত দূরে এসে দেখি, বহু কিছুর ভিড়ে সুখ এখানে কেবলই শূন্য। এ এক শূন্য সুখের শহর।

সে বাস্তবে কেউ থাকুক বা না থাকুক, আমার কল্পনার রুদ্রকে লিখতে বাধা কই? সে পড়ুক বা না পড়ুক, এই উদয়পদ্মের শহর থেকে না হয় একদিন এই চিঠি পৌঁছে যাবে তার আকাশের ঠিকানায়। যে শহরে এত দিন কাছাকাছি থেকেও ‘কত দিন দেখা হয়নি’ আমাদের প্রধানতম আক্ষেপ। সে শহর ছেড়ে হাজার মাইল দূরে আসার পর মনে হলো, চাক্ষুস না হোক, কাগজে–কলমে অন্তত দেখাটা হোক। ফুল, পাখি আর মিষ্টি বকুলের জন্য ‘ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে’ রাখা শুভকামনা পৌঁছে যাক আমাদের অঞ্জনা নদীতীরের খঞ্জনা গ্রামের মতো নগরে। যে একটি নগরে দুজন থাকাটাই ছিল একটিমাত্র সুখ। সেই সুখের খঞ্জনা ছেড়ে এত দূরে এসে দেখি, বহু কিছুর ভিড়ে সুখ এখানে কেবলই শূন্য। এ এক শূন্য সুখের শহর।

নিউইয়র্ক শহরে প্রথমবার এসেছিলাম ঠিক বছর দশেক আগে। সারা দিনের জন্য। সেদিন একঝলক দেখে মনে হয়েছিল একে উদয়পদ্মের শহর। সেদিন যে এসেছিলাম, আসার কথা ছিল তারও বছর দুয়েক আগে একটু লম্বা সময়ের জন্য, একটা ফেলোশিপ নিয়ে। কিন্তু ওই যে, মায়া, খঞ্জনার সুখ। শেষ মুহূর্তে মায়ায় পড়ে আর আগানো হলো না। তবে মনে রয়ে গিয়েছিল। সে সময় এলে কোথায় আবাস হতো, কোথায় অফিস হতো, সে ছবিগুলো মনের ভেতর রয়ে গিয়েছিল বলেই সেবার দিন ভ্রমণে আসা।

নিউইয়র্ক শহরে প্রথমবার এসেছিলাম ঠিক বছর দশেক আগে। সারা দিনের জন্য। সেদিন একঝলক দেখে মনে হয়েছিল একে উদয়পদ্মের শহর। সে সময় এলে কোথায় আবাস হতো, কোথায় অফিস হতো, ভেবে দিন ভ্রমণে আসা।

এবার যখন এলাম, শরীরটা এল বটে, মনটা রয়ে গেল আমার সেই মায়া জড়ানো, স্মৃতি মাখানো ছোট্ট বসতঘরেই। যে ঘরের পরতে পরতে জমা ধূলিও আমার চেনা, আপন। যে ঘরের জানালার পর্দাটা, দরজার চৌকাঠটা, বেসিনের আয়নাটাতেও গল্প লেগে আছে। আমাদের নিজস্ব গল্প। সেই সব অজস্র গল্পকে তালাবন্ধ করে যখন এ শহরে পৌঁছালাম, তখন শহরজুড়ে ফুটে আছে রংবেরঙের টিউলিপ। আর টিউলিপ থেকে চোখ তুলে তাকালেই সাদা গোলাপি চেরিতে তখন মোহনীয় বসন্ত। যেন ফুলের শহর। চেরি ঝরার সময় দ্রুতই চলে এল, চেরি যখন যাই যাই করছে, তখন দেখি লাল ইটের বাড়িগুলোর ফ্রন্ট ইয়ার্ডে মানুষসমান উঁচু ঝোপে ঢেলে ফুটে আছে বাগানবিলাসের মতো একটা লাল গোলাপি ফুল। কোথাও–বা লম্বা গাছে ফুটেছে সাদা ঝিরঝিরে ফুল, যার গন্ধে মনে পড়ে হাস্নাহেনার কথা। অথচ এদের কারও নাম জানি না। এদের সঙ্গে দেখাই যে হলো প্রথমবার। ঘরের কাছে পার্কে হাঁটতে গেলে দেখি বকুল ফুলের মতো ফুল ফুটেছে। সে-ও আমার অচেনা। তবে চেনা ফুলও পেয়েছি, যার নাম গোলাপ। চেরি আর টিউলিপ যেই না উধাও হলো, সেই একেবারে উজাড় করে ফুটে উঠল গোলাপ। এখানে, সেখানে, যেখানে যেভাবে পারল। এখন গোলাপও বলছে যাই। আর সপ্তাহখানেক ধরে মাথা উঁচু করে জাগছে উদয়পদ্মরা।

প্রথম অস্থায়ী ঠিকানা এ দেশের যিনি প্রধান ব্যক্তি, তাঁর বিশাল সাদা বাড়ির কাছাকাছি এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবিতে প্রথমবার স্নাতকোত্তর থিসিসে ৫০ লাখ টাকা সহায়তা
  • ৩৬ বছরে প্রথমবার ব্রাজিলকে হারাল জাপান
  • বিশ্বকাপের টিকিট কেটে ইতিহাস গড়ল মাত্র ৫ লাখ জনসংখ্যার দেশ কেপ ভার্দে
  • ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ‘ফার্স্ট বয়’ হতে চান আনচেলত্তি
  • এমএলএস যেন মেসির রাজত্ব
  • শূন্য সুখের শহর
  • কাঁদতে কাঁদতে রেললাইনে বসেন তরুণ, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু
  • দেশব্যাপী টাইফয়েডের টিকাদান শুরু