‘মধুপুর ফল্টের কারণে ঢাকা উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে’
Published: 22nd, November 2025 GMT
বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের তিনটি প্রধান ভূ-ফাটলের মধ্যে প্রথমটি ‘মধুপুর ফল্ট’ নামে পরিচিত। এ কারণে টাঙ্গাইল ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০ টা ৩৮ মিনিটে টাঙ্গাইলসহ সারা দেশে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০ টা ৩৬ মিটিটেও বাইপাইলে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। দুটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। যেটি মধুপুর ফল্টের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এতে সারা দেশে অন্তত ১১ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাটেনি।
আরো পড়ুন:
সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর আবার ভূমিকম্প, উৎপত্তিস্থল রাজধানীর বাড্ডা
বাইপাইলে নয়, ৩.৩ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদী
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ২০২৪ এর জুনে এক গবেষণায় দেখা গেছে, মধুপুর ফল্টে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূকম্পনে ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধসে বা ভেঙে পড়তে পারে, যা মোট ভবনের ৪০ দশমিক ২৮ থেকে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ঢাকায় ভবন ধসের আশঙ্কার এ সর্বনিম্ন ও সর্বাধিক শতাংশের গড় করলে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
২০১২ সালে এক ভূমিকম্পে মধুপুরের অরণখোলা ইউনিয়নের বোকারবাইদ গ্রামে ভূমিকম্পে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফাটল দেখা দেয়। যার ব্যাস ছিলে ৫/৬ ইঞ্চি ও গভীরতা ২৫ থেকে ২৬ ফুট। সেই সময় থেকে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
মধুপুর এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম ফারুক বলেন, ‘‘শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১০টার পর যখন ভূমিকম্প হয়, তখন পরিবার নিয়ে বাড়িতে ছিলাম। আমাদের টিনের ঘর অনেক কেঁপেছে। চোখে যা দেখেছি, সেই আতঙ্ক এখনো আমার কাটেনি।’’
টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. জানে আলম বলেন, ‘‘ভূমিকম্পে কিছু ক্ষতি চোখে দেখা যায়, আবার কিছু ক্ষতি চোখে দেখা যায় না। শুক্রবার যে ভূমিকম্প হয়েছে, এই মাপের ভূমিকম্প আবার হলে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতি হবে। কারণ অনেক ভবণ দুর্বল হয়েছে। যা চোখের দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে না। এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মধুপুর, ধনবাড়ী, ঘাটাইল, সখীপুরসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিস অফিসে সবচেয়ে দক্ষ ও কর্মঠ কর্মীদের পদায়ন করা আছে।’’
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘‘মধুপুরের ফল্টটি অনেক পুরনো। প্রায় একশ বছর হয়েছে। এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়নি। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের বার্তা দেয়। যে কারণে মধুপুর ফল্টের আওতাধীন এলাকাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। এর প্রভাব পড়তে পারে চারদিকে ১০০ কিলোমিটার এলাকায়। এর আগে ভূমিকম্প হয়ে মধুপুরে বড় ফাঁটল হয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশের নগরায়নে যে বহুতল ভবন করা হয়, সেখানে বিল্ডিং কোড মানা হয়ই না। টাঙ্গাইল শহরেও না, ঢাকার শহরেও না। বহুতল ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী চারপাশে জায়গা রাখার কথা, সেগুলোও মানা হয় না। টাঙ্গাইলের ভবনগুলোর ক্ষেত্রেও সমীক্ষা ছাড়াই প্লান পাস করে দেওয়া হয়। যে প্লান পাস হয়, তার চেয়ে উচু ভবন তৈরি হচ্ছে। যে কোনো দুর্যোগে বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার করা যাবে না। কারণ তাদের উদ্ধার করতে যে জায়গা প্রয়োজন, সেই জায়গা রাখা হয়নি। রাস্তাগুলোও খুব সংকুচিত। তাই দুর্যোগ হলে মানুষ আটকা পড়ে প্রাণহানি ঘটবে, জীবননাশের শঙ্কা থাকবে।’’
অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘‘একবার ভূমিকম্প হলে অনেক আলোচনা হয়। পরে তা কার্যকর হয় না। ভূমিকম্পের হতাহতের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উপর থেকে র্যালিং ভেঙে পড়ে মানুষ মারা গেছে। কারণ র্যালিং নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করা ছিল না। আবার কেউ দেয়াল ভেঙে মারা গেছে। এমন তো হওয়ার কথা না। বড় ধরনের ভবন ধসে গেলে কী হবে, সেটা এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘চিলিতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মাত্র ৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। কারণ সেখানে বিল্ডিং কোড মানা হয়। প্রতিটি বিল্ডিংয়ের পাশে অতিরিক্ত জায়গা থাকার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে এক বিল্ডিংয়ের সঙ্গে আরেক বিল্ডিং লাগানো। মানুষ বিল্ডিং থেকে বের হয়ে যাবে কোথায়। বাধ্য হয়ে ওই লোকটি ভবনের নিচে পড়ে মারা যাবে। এ সব বিষয়ে মানুষকেও সচেতন করা হয় না ও গুরত্ব দেওয়া হয় না। আবার এ বিষয়ে পড়াশোনা নেই বললেই চলে।’’
ঢাকা/কাওছার/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ম কম প ম ত র র ভ ম কম প ভ ম কম প র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
শক্তিশালী কম্পন অনুভব করেছেন ঢাকার ১ কোটির বেশি মানুষ: ইউএসজিএস
ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে কাঁপল ঢাকা শহর। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায়। ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতেও।
ভূমিকম্পের প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে দেয়াল ধসে পড়েছে। কোনো ভবনের রেলিং ও অংশবিশেষ ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। অনেকেই ভয় পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে অন্তত ১০ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে ৫ জন, ঢাকায় ৪ জন ও নারায়ণগঞ্জে ১ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায় এ ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এটার উৎপত্তি।
৫ দশমিক ৭ মাত্রার মাঝারি এ ভূমিকম্পকে স্মরণকালের মধ্যে কম্পনের তীব্রতার দিক থেকে নজিরবিহীন বলছেন ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা।
ইউএসজিএস বলছে, বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ হলেও কেন্দ্রীয় অঞ্চল তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকে। ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকার ২৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ দশমিক ৫ বা তার বেশি মাত্রার ১৪টি ভূমিকম্প হয়েছে—এর মধ্যে দুটি ছিল ৬ মাত্রার। আর গতকাল নরসিংদীর মাধবদীর ভূমিকম্পটি ছিল ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে।
এ ভূমিকম্পের কম্পনের তীব্রতা কত মানুষ অনুভব করেছেন, সেটার একটা অনুমিত হিসাব দিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস। ভূমিকম্পের আড়াই ঘণ্টা পর সংস্থাটি বলেছে, এ ভূমিকম্পে ৭ কোটির বেশি মানুষ মৃদু ভূকম্পন অনুভব করেছেন। এ ছাড়া হালকা ঝাঁকুনি পেয়েছেন আরও প্রায় পৌনে ৭ কোটি মানুষ।ভূমিকম্পটির তীব্রতা এত বেশি কেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ মেহেদি আহমেদ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, এ ভূমিকম্প ঢাকার খুব কাছে হয়েছে। এর আগে এখানে ৪ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয়নি।
ভূমিকম্পের সময় ভয়ে শয্যা থেকে তুলে অসুস্থ শিশুকে কোলে জড়িয়ে আছেন মা। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকা; ২১ নভেম্বর ২০২৫