ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাজারের খাস জায়গার বন্দোবস্ত বাতিলের দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
Published: 21st, October 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী আনন্দ বাজারসংলগ্ন পুরোনো বাঁশ বাজারের খাস জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বন্দোবস্ত বাতিলের দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তাঁরা। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, জায়গাটি বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন তাঁদের নাম প্রকাশ করছে না।
আজ দুপুরে জেলা শহরের আনন্দ বাজার, টান বাজার, জগৎ বাজার, সড়ক বাজার, নিউমার্কেট, চাল বাজার ও সবজি বাজারের ব্যবসায়ীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। সেখানে মানববন্ধন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দ বাজার মাছ ও শুঁটকি মহলের সভাপতি খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো.
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাঁশ বাজারে প্রায় ২১ শতাংশ খাস জায়গা আছে। কয়েক বছর আগে বাজারটি শহরের মেড্ডায় স্থানান্তর করা হয়। পরে শহরের যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আনন্দ বাজারসহ আশপাশের ব্যবসায়ীদের মালামাল ওঠানো–নামানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জায়গাটি ছাড়া ব্যবসায়ীদের ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে আনা মালামাল ওঠানো-নামানোর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় সম্প্রতি ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশের খাস জায়গাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৩ জন অপরিচিত ব্যক্তিদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বক্তারা জনস্বার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্দোবস্ত বাতিলের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
সরেজমিনে বাঁশ বাজারে দেখা যায়, সেখানে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। চারপাশে লাল নিশানা টাঙানো হয়েছে। জায়গাটিতে উপজেলা হাটবাজার বন্দোবস্ত কমিটির পক্ষে দুটি বড় ব্যানার লাগানো।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, খাস খতিয়ানের জায়গাটি ৩৩ জনের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। জায়গাটি নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাই সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ৩৩ জনের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহু বছর ধরে জায়গাটি ময়লার ভাগাড় ছিল। ব্যবসায়ীরা জায়গাটি বন্দোবস্ত চেয়েছেন। সরকারের রাজস্ব বাড়াতে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বন্দোবস্ত পেয়েছেন, তাঁরা সেখান থেকে ১৫-২০ ট্রাক ময়লা সরিয়েছেন। বালু ফেলে সুন্দর করায় এটি অন্যদের চোখে পড়েছে। পাঁচ বছর আগে কে বা কারা সেখানে ব্যবসায়ীদের ট্রাক রাখতে বলেছেন, এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। হাটবাজারের জায়গা ট্রাক রাখার জন্য বরাদ্দ দিতে পারি না। আমাদের ঝোলানো সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনওকে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব যবস য় দ র ম আনন দ ব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইঞ্জিনসংকটে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথে ট্রেন বন্ধ, চালুর দাবিতে আলটিমেটাম
ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে জারিয়া রেলপথে চলাচল করা লোকাল ট্রেনটি ইঞ্জিনসংকটে ২১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির যাত্রীরা। বন্ধ ট্রেনটি চালুর দাবিতে ময়মনসিংহ জংশন স্টেশনে আজ সোমবার বেলা পৌনে দুইটায় মানববন্ধনের আয়োজন করেন যাত্রীরা। আগামীকালকের মধ্যে বন্ধ ট্রেন চালু না করলে কঠোর কর্মসূচির আলটিমেটামও দেওয়া হয়।
আজ বেলা পৌনে দুইটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলা মানববন্ধনে দাঁড়ানো যাত্রীদের হাতে ‘ব্রিটিশ গেল, পাকিস্তান গেল, বাংলা এল এখন কেন বন্ধ হলো?’, ‘জারিয়া লোকাল ট্রেন চলতে হবে’, ‘জারিয়া লোকাল ট্রেন পুনরায় চালু করতে হবে’, ‘ট্রেন নিয়ে তালবাহানা চলবে না’, ‘ইঞ্জিন নিয়ে প্রতারণা মানি না মানব না’, ‘জাগো জাগো জারিয়া লোকাল ট্রেনযাত্রী, ট্রেনটি চালু করুন, করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান–সংবলিত ফেস্টুন ছিল।
রেলওয়ে ও যাত্রী সূত্রে জানা যায়, জারিয়া লোকাল ট্রেনটি প্রতিদিন কোনো প্রকার সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া ময়মনসিংহ-জারিয়া রুটে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথে চারবার করে আপডাউন হিসেবে মোট আটটি ট্রিপে চলে। এই রুটে অন্য কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল না করায় শম্ভুগঞ্জ, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ, পূর্বধলাসহ আটটি স্টেশনে চলাচলকারী যাত্রীদের লোকাল ট্রেনটিই অন্যতম ভরসা। প্রতিদিনই ট্রেনটিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এ ট্রেনে করে ময়মনসিংহ মহানগরীসহ গৌরীপুর, ধোবাউড়া এবং নেত্রকোনার পূর্বধলা, দূর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। ট্রেন বন্ধ থাকায় অফিসগামী যাত্রী এবং শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চার-পাঁচ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাঁদের। এ ছাড়া ট্রেনটি বন্ধ থাকায় চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের ভোগান্তি ও ব্যবসায়ীদের ময়মনসিংহ শহরে আসা–যাওয়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া গৌরীপুরের ব্যবসায়ী মনোয়ার হাসিব বলেন, ‘ট্রেনটিতে জারিয়া থেকে অনেক শিক্ষার্থী আনন্দের সঙ্গে ময়মনসিংহ ও গৌরীপুর এসে ক্লাস করে আবার চলে যেত। ট্রেন বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়েছে। কাদের মদদে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। আমরা দ্রুত ট্রেনটি নিয়িমত চালুর দাবি জানাই।’
স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. লিমন জারিয়া থেকে গৌরীপুর এসে প্রতিদিন ক্লাস করে বাড়ি যেতেন। প্রতিদিন সকাল আটটায় জারিয়া থেকে ছেড়ে আসত এবং বিকেল পাঁচটায় গৌরীপুর থেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু ট্রেনটি বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ২৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অথচ ট্রেন চলাচল করলে মাত্র ৪০ টাকা খরচ হতো। লিমন বলেন, ‘পরিবারের আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো না যে প্রতিদিন ২৪০ টাকা খরচ করে কলেজে যাওয়া আসা করব। ট্রেন চলাচল করলে কলেজে নিয়মিত ক্লাস করতে যেতে পারতাম।’
ময়মনসিংহ শহরে ব্যবসা করেন পূর্বধলার বিজন সম্মানিত। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় যাতায়াতের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা আগামীকাল থেকেই বন্ধ ট্রেন চালু চাই। তা না হলে এ অঞ্চলের ছাত্র ও কর্মজীবীরা আগামীকাল থেকে কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’
ইঞ্জিনসংকটের কারণে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে জারিয়া লোকাল ট্রেনটি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে ময়মনসিংহ স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘আমাদের লোকাল ট্রেনের মিটারগেজের ইঞ্জিনসংকট চলছে। আমাদের যে ইঞ্জিনটি সমস্যা হয়েছিল, সেটি মেরামতের জন্য ঢাকায় পাঠানো হলেও আর ফেরত আসেনি। ইঞ্জিন পেলে পুনরায় লোকাল ট্রেনগুলো চালু করতে পারব।’