নিওফার্মার্স প্রতিদিন ৩০০ ক্রয়াদেশ পায়, এবার দেশের সীমা ছাড়াতে চায়
Published: 25th, October 2025 GMT
খাবার একটি দেশের সংস্কৃতি, অভ্যাস ও পরিচিতি তুলে ধরে। একটি শক্তিশালী জাতি গড়তে প্রয়োজন নিরাপদ খাবার। তবে বাংলাদেশে খাবারে ভেজাল দেওয়া নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। আবার খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী কৃষকেরাও তাঁদের শ্রম ও ফলনের সঠিক দাম পান না। এভাবেই দেশের খাদ্যপণ্য নিয়ে কথা বলছিলেন নিওফার্মার্সের প্রতিষ্ঠাতা তামজিদ সিদ্দিক, যিনি ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য পরিবেশন ও কৃষকদের ন্যায্য দাম দিতে ২০১৭ সালে শুরু করেন নিওফার্মার্স নামের দেশীয় খাদ্যপণ্য বিক্রির উদ্যোগ।
তিন ব্যবসায়ী মিলে প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগে শুরু করেন নিওফার্মার্স। শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি চাল, মসলা, মধু, ঘি, শর্ষের তেলসহ ৬০ ধরনের পণ্য বিক্রি করত। এখন সবমিলিয়ে ১০৫ ধরনের পণ্য বিক্রি করে তারা। আর প্রতিষ্ঠানটিতে সব মিলিয়ে বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। মূলত অনলাইন মাধ্যমেই পণ্য বিক্রি করে নিওফার্মার্স। অনলাইনে প্রতিদিন তিন শতাধিক ক্রয়াদেশ পায় প্রতিষ্ঠানটি। দেশীয় পণ্য বিক্রি করে এটি প্রতি মাসেই ভালো মুনাফা করছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
যেভাবে নিওফার্মার্সের যাত্রা শুরু
তামজিদ সিদ্দিক ১৯৯৮ সালে এইচএসসি পাসের পর থেকেই ব্যবসায়ে জড়িত হন। ২০০১ সালে তিনি গড়ে তোলেন যোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘জানালা বাংলাদেশ’। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাডভেঞ্চার ও আউটডোর অ্যাকটিভিটি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য বেজক্যাম্প বাংলাদেশ’। আর ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু হয় নিওফার্মার্সের। তখন প্রতিষ্ঠানটির স্লোগান ছিল ‘প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত, সততার সঙ্গে প্যাকেটজাতকৃত’।
সম্প্রতি আলাপকালে তামজিদ সিদ্দিক প্রথম আলোকে জানান, যখন জানালা বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন, তখন তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসহ (এনজিও) নানা ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। এর ফলে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত উপজেলায় কৃষিকাজ ও কৃষকের জীবনযাপন দুটোই কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। কীভাবে নানা ধাপে মাঠ থেকে ক্রেতার হাতে পণ্য আসে এবং কীভাবে পণ্যে ভেজাল মেশানো হয় সেটি তাঁর নজর কেড়েছিল।
দেশের ইউনিমার্ট, আগোরা, মীনাবাজারসহ মোট ৫৮টি সুপারশপে আমাদের পণ্য পাওয়া যায়। দেশের খুচরা বাজারেও পণ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করছি আমরা। এ ছাড়া ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।তামজিদ সিদ্দিক, উদ্যোক্তা, নিওফার্মার্সখাদ্যপণ্যে ভেজাল প্রসঙ্গে তামজিদ সিদ্দিক বলেন, ‘দেশের একটি বড় ব্র্যান্ডকে দেখতাম কুষ্টিয়া থেকে প্রতি কেজি ঘি ১ হাজার ২০০ টাকায় কিনে এনে ঢাকায় একই দামে বিক্রি করে। তাতেই বুঝলাম তারা ঘিয়ে ভেজাল মেশায়। এই পণ্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই ক্রেতাদের কাছে ভালো পণ্য পৌঁছে দেওয়ার চিন্তা আসে মাথায়। সে অনুযায়ী আমরা তিনজন মিলে নিওফার্মার্স প্রতিষ্ঠা করি।’
চারজন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল নিওফার্মার্স। এখন কর্মিসংখ্যা ৬৫। বর্তমানে অনলাইনে তাদের প্রায় ৭৫ হাজার নিবন্ধিত ক্রেতা রয়েছে। দেশীয় পণ্য সংগ্রহের জন্য নয় জেলার প্রায় এক হাজারের বেশি কৃষকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবসা করছে নিওফার্মার্স। তবে ক্রেতার চাহিদা মেটাতে নিবন্ধিত কৃষকের বাইরে থেকেও পণ্য সংগ্রহ করা হয়। শুরুতে নিওফার্মার্সের পণ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানার আয়তন ছিল এক হাজার বর্গফুট। এখন তাদের কারখানার আয়তন সাত হাজার বর্গফুট।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা ও গল্প নিয়ে রাজধানীর বিজয় সরণিসংলগ্ন সংসদ অ্যাভিনিউতে অবস্থিত নিওফার্মার্সের কার্যালয়ে তামজিদ সিদ্দিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রতিষ্ঠানটির নামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘লাতিন ভাষায় ‘‘নিও’’ মানে নতুন বা নতুন ধারা; আর ফার্মার মানে কৃষক। আমরা কৃষক ও ভোক্তাদের জন্য নতুন ধারা তৈরি করতে চেয়েছি। প্রথমত কৃষকেরা যেন সঠিক দাম পায়। দ্বিতীয়ত ভোক্তারা যেন ভেজাল ও বিষহীন পণ্য খেতে পারেন। কৃষক বললে যে জরাজীর্ণ মানুষের ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেটি আমরা তাঁদের শ্রমের সঠিক মূল্য দিয়ে ভাঙতে চাচ্ছি।’
পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং নিয়ে ভাবনা
নিওফার্মার্স পণ্য পরিবেশনে পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিংয়ের ওপর জোর দেয়। তাদের অধিকাংশ পণ্যের প্যাকেজিংয়ে কাগজ ও কাচের বোতল ব্যবহার করা হয়। তামজিদ সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের ৮০ শতাংশ প্যাকেজিং পরিবেশবান্ধব। ভবিষ্যতে প্যাকেজিং পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
নিওফার্মার্স থেকে কেউ চারবার পণ্য ক্রয় করলে তাঁকে একটি গ্রিন কার্ড দেওয়া হয়। এর ফলে সব পণ্যে ক্রেতা ১০ শতাংশ মূল্যছাড় পান।
তামজিদ সিদ্দিক জানান, ‘বান্দরবানের মুনলাইতে বেজক্যাম্পে আমাদের একটি কমিউনিটিভিত্তিক প্রকল্প রয়েছে। সেখানে ৫০ জন কৃষককে মরিঙ্গা বা শজনেগাছ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা আমাদের একটি পাইলট প্রকল্প। এতে সফল হলে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের কাছ থেকেই পণ্য সংগ্রহ করব। এর ফলে একটি টেকসই ব্যবসায়ী মডেল তৈরি হবে।’
‘আমাদের পণ্য নিয়ে আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসী। তাই আমাদের পণ্য ভালো না লাগলে বা আমাদের পণ্য নিয়ে যদি কেউ পছন্দ না করেন তাহলে চাইলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে’—বললেন তামজিদ সিদ্দিক। তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ইউনিমার্ট, আগোরা ও মীনাবাজারসহ মোট ৫৮টি সুপারশপে আমাদের পণ্য পাওয়া যায়। দেশের খুচরা বাজারেও পণ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করছি আমরা। এ ছাড়া ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: খ দ যপণ য ব যবস র একট
এছাড়াও পড়ুন:
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে থাকছেন না মাচাদো, অবস্থান অজানা
চলতি বছর শান্তিতে নোবেলজয়ী ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো আজ বুধবার অসলোতে অনুষ্ঠেয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সশরীর উপস্থিত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করছেন না। নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক আজই এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি কারণ হিসেবে জানান, মাচাদোর বর্তমান অবস্থান অজানা।
৫৮ বছর বয়সী ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মাচাদোর নরওয়ের অসলো সিটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করার কথা ছিল।
আরও পড়ুনভেনেজুয়েলা সরকারের হুমকির মধ্যেও নোবেল নিতে যাবেন মাচাদো০৭ ডিসেম্বর ২০২৫পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নরওয়ের রাজা হ্যারল্ড, রানি সোনজা এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই ও ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়ারের মতো লাতিন আমেরিকার নেতারা উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
অনুষ্ঠানটি আজ স্থানীয় সময় বেলা একটায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ভেনেজুয়েলার নিকোলা মাদুরো সরকারের আরোপ করা এক দশকের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নরওয়েতে অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থেকে মাচাদো এ পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি এক বছরের বেশি সময় ধরে ভেনেজুয়েলায় আত্মগোপনে রয়েছেন।
আরও পড়ুননোবেল পুরস্কার নিতে ভেনেজুয়েলা ছাড়লে ‘পলাতক’ বিবেচিত হবেন মাচাদো২১ নভেম্বর ২০২৫নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও পুরস্কার দেওয়া প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সচিব ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেন সংবাদমাধ্যম এনআরকে-কে বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, মাচাদো নরওয়েতে নেই। বেলা একটায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও অসলো সিটি হলের মঞ্চে তিনি উপস্থিত থাকবেন না।
মাচাদো কোথায় আছেন—জানতে চাইলে হার্পভিকেন বলেন, ‘আমি জানি না।’
নোবেল ইনস্টিটিউট এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করার অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি।