শিশুতোষ গল্পের জন্য চালু হলো চিলড্রেনস বুকার
Published: 25th, October 2025 GMT
শিশুতোষ গল্পের জন্য পুরস্কার দেবে দ্য বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন। পুরস্কারটির নাম হবে দ্য চিলড্রেনস বুকার প্রাইজ। গতকাল শুক্রবার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নতুন এই পুরস্কার চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২৭ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে প্রথম দ্য চিলড্রেনস বুকার প্রাইজ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। প্রসঙ্গত, এত দিন শুধু ইংরেজি ও অনুবাদ সাহিত্যে বুকার পুরস্কার দেওয়া হতো।
শিশুতোষ গল্পের জন্য পুরস্কার চালুর মধ্য দিয়ে আরেকটি প্রথমও দেখতে যাচ্ছে সাহিত্যজগতের খ্যাতনামা এই পুরস্কার। দ্য চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য বিচারকের আসনে শিশুরাও থাকবে। তারাই বাছাই করবে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা গল্পের বই।
২০২৭ সালের জন্য দ্য চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের বিচারক প্যানেলে নেতৃত্ব দেবেন ফ্র্যাঙ্ক কটরেল-বয়েস। তিনি শিশুদের জন্য লেখেন ও যুক্তরাজ্যের শিশুসাহিত্য দূতের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন আরও দুই বিচারক। তাঁদের কাজ হবে প্রথমে আটটি বইয়ের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা। এরপর এই তালিকা থেকে বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তার জন্য তিন শিশু বিচারককে এই প্যানেলে যুক্ত করা হবে।
প্রতিবছর সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ও পুরস্কারজয়ী শিশুতোষ গল্পের বইয়ের অন্তত ৩০ হাজার কপি শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিশুদের পড়ার অভ্যাস গত দুই দশকের মধ্যে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিষয়টি ভেবেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ইংরেজিতে লেখা বা অনূদিত সমকালীন শিশুসাহিত্যের মধ্য থেকে বাছাই করে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। বিশ্বের যেকোনো লেখক এই পুরস্কারের প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে পারবেন। সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রত্যেক লেখক পাবেন ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড। বিজয়ী পাবেন ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা)।
২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বইগুলো ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য বিবেচ্য হবে। ২০২৬ সালের নভেম্বরে নির্বাচিত বইয়ের সংক্ষিপ্ত তালিকা ও শিশু বিচারকদের নাম ঘোষণা করা হবে। ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হবে প্রথম দ্য চিলড্রেনস বুকার প্রাইজ বিজয়ীর নাম।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী গ্যাবি উড বলেন, ‘চিলড্রেনস বুকার প্রাইজ বিগত ২০ বছরের মধ্যে আমাদের নেওয়া সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী একটি উদ্যোগ। আমরা আশা করছি, এই পুরস্কারের প্রভাব আগামী বহু দশক ধরে সমাজ ও সাহিত্যজগতে প্রতিধ্বনিত হবে।’
শিশুতোষ গল্পের জন্য বুকার পুরস্কার চালুর খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ফ্র্যাঙ্ক কটরেল-বয়েস। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে শিশুদের জন্য তাদের পছন্দের বই খুঁজে পাওয়া আরও সহজ হবে। বিচারক বানানো ও বই উপহার দিয়ে বই পড়ার জাদুকরি জগতে আনা সম্ভব হবে হাজারো শিশুকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৭ স ল র ব চ রক
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে
২০২২ সালে সর্বশেষ যে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে তা বাতিল করা হয়। কারণ, এই শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে প্রবল জন–অসন্তোষ ছিল। বিপরীতে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। কিন্তু এ জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না।
একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার জন্য কতটুকু সময় লাগতে পারে, সেটি বলা মুশকিল। কারণ, শিক্ষাক্রমের কতটা বদল করা হবে এবং কারা, কীভাবে এই সংস্কারের কাজ করবেন, তার ওপর সময়ের ব্যাপ্তি নির্ভর করে। অন্য দেশের শিক্ষাক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে; কারণ তখন এর ভালো-মন্দ পাইলটিং করে যাচাই করার দরকার হয়। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন বা সংস্কারে অর্থের জোগানদাতা অন্য রাষ্ট্র বা বিদেশি সংস্থা হলেও সময় বেশি লাগতে পারে। আবার বিদ্যমান শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে কেবল সংশোধনের কাজ করলে সময় কম লাগে। ২০২৭ সালের শিক্ষাক্রমে বদল কতটুকু, কীভাবে আনা হবে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।২০২২ সালের শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য প্রায় চার বছর সময় লেগেছিল। এই শিক্ষাক্রমে পাঠদানের পদ্ধতি, শিখন কার্যক্রম ও মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়। মূলত ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করে এই শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল। অতীতের পাঠদানের পদ্ধতিতে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তৃতাদানের প্রাধান্য ছিল। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের ব্যাপারটি ছিল একমুখী। নতুন পদ্ধতিতে শুরুতে শিক্ষার্থীদের বিষয় উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়, যাতে এর মাধ্যমে শিক্ষক তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। শিক্ষকের পড়ানোর কাজটি এর পরে শুরু করার নির্দেশনা ছিল।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। গ্রেড ও নম্বরের বদলে যোগ্যতার স্তরভিত্তিক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু করা হয়। অভিভাবকদের সবচেয়ে আপত্তি ছিল এখানে। তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, নম্বর ও গ্রেড না থাকার কারণে বুঝতে পারছেন না শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অবস্থা কী। তবে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল শিক্ষাক্রমকে অনুসরণ করে রচিত পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন কনটেন্ট বা উপকরণ নিয়ে। যেমন সমাজ বইয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই বলেছেন, সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে একপেশে করে তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুকরণের অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ের বানান ও তথ্যগত প্রচুরসংখ্যক ভুল নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুনশিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই: পরিমার্জন ও সংস্কারের আগে যা বিবেচনায় নিতে হবে১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে পাঠ্যবই প্রণীত হয়। বর্তমানে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যেসব পাঠ্যবই পড়ানো হয়েছে কিংবা ছাপার কাজ চলছে, সেগুলো মূলত ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে রচিত। পুরোনো বই কিছু সংশোধন করেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সংশোধন-পরিমার্জনসহ অন্যান্য কাজে এবারও এত বেশি সময় লেগেছে যে আগামী শিক্ষাবছরে যথাসময়ে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না, সে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এখন যদি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ২০২৭ সালে নতুন পাঠ্যবই প্রণয়ন করতে হয়, তবে আরও আগে এর রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা হাজির করার দরকার ছিল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজে হাত না দিয়ে নতুন সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তাতে চায়। সে ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং সেই ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম রচনা ও প্রকাশের উদ্যোগ নিলে লেজেগোবরে অবস্থা হবে। তা ছাড়া এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও ২০২৪-এর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে শূন্য থেকেছে। এর ফলে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজটিও গতিশীল হয়নি। সুতরাং ভালো পরিবর্তন চাইলে আরেকটু সময় নেওয়া উচিত। আর শিক্ষাক্রমের ব্যাপারটিই এমন, একসঙ্গে সব কটি শ্রেণিতে এর প্রয়োগ করা যায় না—নিচের ক্লাস থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে হয়।
শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক