জুলাই গণ-অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে পরিবর্তনের শক্তি ব্যক্তি–নেতার নয়, সংগঠিত তরুণসমাজের ঐক্যে নিহিত। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবদের নিজেদের ইতিহাস জানতে, বুঝতে হবে। রাষ্ট্র কিংবা অন্য কেউ যাতে আত্মপরিচয় ও অধিকারের বিষয়গুলোতে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে না পারে। আর এভাবেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবদের নতুন দিনের আন্দোলন ও লড়াই-সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।

‘জাতীয় আদিবাসী যুব সম্মেলন-২৫’–এ অংশ নেওয়া যুবদের উদ্দেশে অতিথিরা এসব কথা বলেছেন। আজ শনিবার দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর আসাদগেটের সিবিসিবি সম্মেলনকেন্দ্রে। ‘শৃঙ্খলমুক্তির সংগ্রামে আদিবাসী যুবদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই হোক ন্যায়, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার’ শিরোনামে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম।

সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান ছিল নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন। কিন্তু এত ত্যাগ-তিতিক্ষার পরও সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষক-শ্রমিক-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আজও শোষিত। ধনবাদী শাসকগোষ্ঠীর হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রকৃত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তি স্বাক্ষরের পরও পাহাড়ের জনগণের জীবনে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। নিরাপত্তা, ভূমি অধিকার ও জীবিকার সংকটে অনেকে এলাকা ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছেন। পাহাড়ে যুবকদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। তাঁরা শহরে অনিশ্চিত জীবিকার সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছেন। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও জমি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। অথচ রাষ্ট্র তাঁদের সমস্যাকে এখনো জাতীয় ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করছে না।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী জাতিগত নিপীড়ন ও শ্রেণি শোষণেও জর্জরিত মন্তব্য করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমস্যাকে আলাদা না ভেবে জাতীয় সমস্যার অংশ হিসেবে দেখতে হবে। যদি এখনই ন্যায়, অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পথে ঐক্য গড়ে না তোলা যায়, তবে এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে এবং রাষ্ট্র আরও গভীর শোষণচক্রে নিমজ্জিত হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হবে, এমন আশা করা হয়েছিল; যেখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু ১৪ মাস ধরে দেখছি, সেই স্বপ্ন-আশা হতাশায় পরিণত হচ্ছে।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘এরপরও আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই, আশা করতে চাই—নতুন যে সরকার আসবে, তারা পুরোনোদের মতো অত্যাচার, অবিচার কিংবা বঞ্চনা জিইয়ে রাখার সঙ্গে লিপ্ত হবে না।.

..আমরা সেই আশা করতে চাই, স্বপ্ন দেখতে চাই।’

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে পরিবর্তনের শক্তি ব্যক্তি–নেতায় নয়, সংগঠিত তরুণসমাজের ঐক্যে নিহিত। দুর্নীতি, বৈষম্য ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন এখনো চললেও এই অভ্যুত্থান সমাজ পরিবর্তনের নতুন শিক্ষার সূচনা করেছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্ন কেবল তাদের নয়, এটি সমগ্র সমাজের ন্যায় ও সমতার দাবি।

‘রাষ্ট্র কখনোই আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেবে না’ মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, তরুণদের এই রাজনীতি বুঝতে হবে। সচেতনভাবে রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই প্রতিহত করতে হবে।

লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে আহ্বান, খুব বেশি করে নিজেদের ইতিহাস জানা-বোঝা জরুরি। কারণ, শুধু কলোনিয়াল লিগ্যাসির কিছু বই পড়ে নিজেদের ইতিহাস জানা সম্ভব নয়। নিজেদের নানা-নানি, দাদা-দাদি, গ্রামের বা এলাকার প্রবীণ, কৃষক, তাঁতি, জেলে—সবার কাছ থেকে ইতিহাস জানতে হবে। আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ইতিহাস জানা জরুরি। তাহলেই বাইরের কেউ কোনো পরিচয় চাপিয়ে দিতে পারবে না। এভাবেই আমাদের নতুন দিনে আন্দোলন, লড়াই–সংগ্রাম জীবন্ত রাখতে হবে, জারি রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মণিরা ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। সম্মেলনে বিভিন্ন আদিবাসী যুব ও ছাত্র সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বদ র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করবে বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে দেশে দুর্নীতিতে লাগাম টানার পাশাপাশি যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নির্বাচন কমিশনের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলীয় এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তারেক রহমান। বিএনপির উপস্থাপিত দেশ পরিচালনার পরিকল্পনাগুলো জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার ট্র্যাক রেকর্ড বিএনপির আছে। এ কাজটি করতে গিয়েই খালেদা জিয়া সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করেছিল। সে সময় এ কমিশনকে এতটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যে সরকারের কোনো বিষয়ে তদন্ত করতে চাইলে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন ছিল না। এই নিয়ম স্বৈরাচার সরকার পাল্টে দিয়েছিল। বিএনপি জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় এলে প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে এটি আবার পরিবর্তন করা হবে।

দুর্নীতির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাও ঠিক রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মতো আমাদের আরেকটি কাজে সফল হতে হবে। সেটাও দুর্নীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেটি হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা। যেকোনো মূল্যে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে।’

বিএনপির মূল পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন তারেক রহমান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অতীত উদাহরণ বিএনপির আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় থেকেছে তখনো দলের কোনো সদস্য অন্যায় করলে চেষ্টা করেছে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে আইন দিয়ে বিচার করতে।’

বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। আজকের এই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ওলামা দলের নেতারা অংশ নেন।

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, শিল্পে উন্নতি করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, নারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করার কাজ অতীতে সফলভাবে করার ট্র্যাক রেকর্ড একমাত্র বিএনপির আছে। প্রতিটি কাজ আবার শুরুর পরিকল্পনা একমাত্র বিএনপিই উপস্থাপন করেছে। এই পরিকল্পনাগুলো গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিএনপির কাছেই নিরাপদ দাবি করে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণ আমাদের কাছে শুধু কথার ফুলঝুরি প্রত্যাশা করে না। জনগণ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে যে আমরা কীভাবে দেশ পরিচালনা করব। জনগণের সমস্যাগুলোকে কীভাবে মিটআপ (মোকাবিলা) করব। পুরো পরিকল্পনা জনগণ আমাদের কাছে দেখতে চান।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির যেসব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে চাই, ইনশা আল্লাহ জনগণের রায় নিয়ে আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। সেই সরকারকে সফল করতে হলে সারা দেশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিএনপির লাখ লাখ নেতা–কর্মীকে সহযোগিতা করতে হবে। পরিকল্পনা গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিএনপি। শুক্রবার বাদে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলবে। এতে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আজকের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম প্রমুখ।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গত ১৫ বছর ছিল ‘মানবাধিকার সংকটের ভয়াবহ সময়’
  • একটা দল ভোটের আগেই মনে করে ক্ষমতায় চলে গেছি: গোলাম পরওয়ার
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর
  • যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান 
  • মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি: তারেক রহমান
  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলনের ১১ দফা প্রস্তাব
  • ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করবে বিএনপি
  • আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই: হাসনাত
  • জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি আবার দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত: তারেক রহমান