রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় হাসপাতালের সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে প্রথম কয়েক দিনের মতো হাসপাতালের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের তেমন ভিড় নেই।

আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাসপাতালের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। আশপাশে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও এসএসএফের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে দ্রুত এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দেশজুড়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে প্রতিদিন তাঁর খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করতেন নেতা–কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের সামনে ভিড় না করতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বিএনপির একাধিক নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে নেতা–কর্মীদের হাসপাতালের সামনে ভিড় না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে নেতা–কর্মীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করছেন।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার পর বেশ কয়েকবার তাঁর খোঁজ নিতে এসেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে নিজ অবস্থানে থেকে ম্যাডামের সুস্থতা কামনায় দোয়া করি।’

মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম আরও বলেন, ‘সব নেতা–কর্মী হাসপাতালের সামনে ভিড় করলে জটলা তৈরি হয়। অনেক সময় গণমাধ্যমে ভুল তথ্যও যায়। তাই নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ অবস্থান থেকে দোয়া করছি।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধানে যুক্ত আছেন তাঁর পুত্রবধূ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা.

জুবাইদা রহমান। প্রায় প্রতিদিনই তিনি হাসপাতালে আসা–যাওয়া করছেন।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রার জন্য উপযুক্ত নয়, বিশেষ করে হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা বেশ জটিল পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যাও অপরিবর্তিত। তাঁকে ঢাকায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিদিনই ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর প্রক্রিয়াটিও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। মেডিকেল বোর্ডের অধীন দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থাকে ‘গুরুতর’ হিসেবেই দেখছেন এবং কিডনির কার্যক্ষমতা স্থিতিশীল হওয়াকে সার্বিক উন্নতির জন্য জরুরি বলে মনে করছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র ব এনপ র অবস থ ন সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলার অবনতি: অপরাধীরা কেন এতটা বেপরোয়া

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে বা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলে যে সংবাদগুলো আমাদের সবচেয়ে বেশি বিচলিত করে, তা হলো হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও নৃশংস সব অপরাধের খবর। সাধারণ মানুষের মনে আজ এক বড় প্রশ্ন—আইনশৃঙ্খলা কি কেবলই কিতাবি বুলি? অপরাধীরা কেন দিন দিন এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের সমাজের গভীরে প্রোথিত বেশ কিছু কারণ উঠে আসে। অপরাধীদের এই ‘বেপরোয়া’ হয়ে ওঠার পেছনে কেবল একটি কারণ দায়ী নয়, বরং এটি একটি বহুমুখী সংকটের সমষ্টি।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও দীর্ঘসূত্রতা

অপরাধীদের বেপরোয়া হওয়ার প্রধান কারণ হলো ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’। যখন একজন অপরাধী দেখে, গুরুতর অপরাধ করেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে সহজেই বেরিয়ে আসা যায়, তখন তার সাহস বহুগুণ বেড়ে যায়। অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার নজির সমাজে এতটাই প্রবল যে সাধারণ মানুষ বিচার চাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলে। বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকা এবং সাক্ষীর অভাবে বিচার না হওয়া অপরাধীদের জন্য একধরনের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ হিসেবে কাজ করে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও পেশিশক্তির দাপট

আমাদের সমাজব্যবস্থায় অপরাধ ও রাজনীতির এক অশুভ আঁতাত লক্ষ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে। যখন কোনো অপরাধী জানে যে তার মাথার ওপর ‘বড় ভাই’ বা ‘গডফাদার’-এর হাত আছে, তখন সে পুলিশ বা প্রশাসনকে তোয়াক্কা করে না। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলদারি এখন ওপেন সিক্রেট। এই ক্ষমতার দম্ভই তাদের বেপরোয়া করে তোলে।

সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়

আইন দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, যদি না সমাজের মানুষের মূল্যবোধ জাগ্রত থাকে। বর্তমানে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আমরা এক চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং সন্তানদের ওপর নজরদারির ঘাটতি কিশোর অপরাধ বা ‘কিশোর গ্যাং কালচার’ তৈরির মূল কারণ। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করে, সমাজে সহনশীলতা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

মাদকের ভয়াবহ বিস্তার

অপরাধ জগতের জ্বালানি হলো মাদক। দেশের আনাচকানাচে মাদকের সহজলভ্যতা যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই অনেকে ছিনতাই, ডাকাতি, এমনকি খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, ফলে তার পক্ষে যেকোনো নৃশংস কাজ করা সম্ভব হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতা

পুলিশ বা প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও অনেক সময় জনবলসংকট, পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। আবার রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তখন অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয়।

এই অন্ধকার পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

আইনের সুশাসন: অপরাধী যে–ই হোক, তার রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় বিবেচনা না করে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশি সংস্কার: পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে একটি জনবান্ধব ও স্বাধীন সত্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সামাজিক প্রতিরোধ: পাড়া-মহল্লায় মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক সময় দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

কর্মসংস্থান: বেকারত্ব অপরাধের অন্যতম কারণ। যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।

আইনশৃঙ্খলার এই অবনতি কোনো একক গোষ্ঠীর সমস্যা নয়, এটি আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের সংকট। অপরাধীরা যখন বেপরোয়া হয়, তখন সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভূলুণ্ঠিত হয়। একটি নিরাপদ, সুন্দর ও ভীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কেবল এক অরাজকতার রাজ্য রেখে যাব। এখনই সময় রুখে দাঁড়ানোর।

হেনা শিকদার দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘১০ বছর ধরে অপেক্ষা করছি, মৃত্যুর আগে ছেলেকে ফেরত চাই’
  • নরসিংদীর রায়পুরায় বিশেষ কম্বিং অপারেশন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা রয়েছে, সংশয়ও আছে
  • ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিতে লাগাম টানার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করবে বিএনপি
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি: অপরাধীরা কেন এতটা বেপরোয়া
  • জাপাকে মাঠে নামতে না দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • হত্যা বন্ধে কোনো ম্যাজিক, সুইচ অন-অফ নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি অত্যন্ত ভালো: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 
  • সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ