হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বন কর্মকর্তাকে মারধর করে চোরাই গাছ ও কাঠ বিক্রির নিলাম বন্ধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বন কর্মকর্তা আজ বুধবার চুনারুঘাট থানায় মামলা করেছেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে, চুনারুঘাট উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম খান (৪৫) ও আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মো.

সাইফুল ইসলামকে। সাইফুল হবিগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সহসম্পাদক শাম্মি আক্তারের ছোট ভাই।

অভিযোগের বিষয়ে শাম্মি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটিয়েছেন চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক এক মেয়রের ভাই। বন কর্মকর্তা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমার ভাইকে এ ঘটনায় জড়িয়েছেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। চুনারুঘাটে আমি বা আমার পরিবারের কেউ কোনো অন্যায় কাজে জড়িত নই।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, কালেঙ্গা ও রঘুনন্দন বন রেঞ্জের জব্দ করা ২৯টি লট গাছ ও কাঠ বিক্রির জন্য নিলাম ডাকা হয়। চুনারুঘাটের সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে নিলাম শুরু হয়। এ সময় শ্রমিক দলের নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান ও বিএনপি নেতা মো. সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা নিলামের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি রেঞ্জার সৈয়দ আশিক আহমেদকে নিলাম বন্ধ করে তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী নিলাম চালাতে বলেন। এ নিয়ে বন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সাইফুল ও জাহাঙ্গীর বন কর্মকর্তা সৈয়দ আশিককে মারধর শুরু করেন। তাঁরা বন কর্মকর্তাকে বলেন, ‘তুই কে এ নিলাম ডাকার? লাথি মেরে তোর সব দাঁত ভেঙে দিব।’ এ সময় আশপাশে থাকা অন্য বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে এসে সৈয়দ আশিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, হামলার এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর আলম ডেপুটি রেঞ্জারের প্যান্টের পকেটে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার আগে নিলাম কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন এবং মামলা করলে খুন করে ফেলার হুমকিও দেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন ধরে চুনারুঘাট পূর্বাঞ্চলে গাছ পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে পাহাড়ি অঞ্চল ও বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটার অভিযোগ বহুবার উঠলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস করেননি। গত বছর ৫ আগস্ট সরকারের পতনের দিন বন বিভাগের গাছ জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। যিনি মামলা করেছেন, তিনি আসল ঘটনা আড়াল করেছেন। মামলার আরেক আসামি মো. সাইফুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, টাকা ছিনতাই করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রকাশ্য নিলামকে কেন্দ্র করে বাধা-হামলা হলে সরকারি রাজস্ব আয় ব্যাহত হয় এবং জব্দ করা মালামালও ঝুঁকিতে পড়ে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা সুষ্ঠু বন ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের হুমকি। দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম ব এনপ র ল ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাহফুজ-আসিফের পদত্যাগ কার্যকর তফসিল ঘোষণার পর

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

আরো পড়ুন:

মাহফুজ–আসিফের মঙ্গল কামনা প্রধান উপদেষ্টার

পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ

প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম। তাদের পদত্যাগ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে। এর আগ পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।”

মাহফুজ আলম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের ৩ জন প্রতিনিধি জায়গা পান।

এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম উপদেষ্টা, পরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। পরে শ্রম উপদেষ্টার পরিবর্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

মাহফুজ আলম শুরুতে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হন। পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ