মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি: তারেক রহমান
Published: 10th, December 2025 GMT
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির অন্যতম লক্ষ্য হলো দলটি কোনো মেগা প্রকল্পে যাবে না। তারেক রহমান বলেছেন, মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। রাষ্ট্রের অর্থ জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার উন্নয়নের পেছনে খরচ করা হবে।
আজ বুধবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এ কথা বলেন। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে যুবদল এবং কৃষক দলের নেতারা অংশ নেন।
বিগত স্বৈরাচারের সময় মেগা প্রকল্প হলেও উদ্দেশ্য সফল হয়নি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিগত স্বৈরাচারের সময় উন্নয়নের নামে বহু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। আইটি পার্কের নামে বহু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে এখন বিয়েশাদির মতো সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে করা হয়েছিল, সেটি সফল হয়নি।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির অন্যতম লক্ষ্য হলো আমরা কোনো মেগা প্রকল্পে যাব না। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থ জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নতির পেছনে খরচ করতে হবে। সে জন্যই বিএনপির নতুন আইটি পার্ক বানানোর পরিকল্পনা নেই। যেগুলো আছে, সেগুলো সংস্কার করে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের সুযোগ করে দেবে।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিএনপি। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। এ কর্মশালার চতুর্থ দিনে যুবদল এবং কৃষক দলের নেতারা অংশ নেন।
নেতা–কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘দল হিসেবে বিএনপির কাছে মানুষ নির্দিষ্ট পরিকল্পনা চায়। ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবে জানতে চায়। আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছি। এমন পরিকল্পনা আর কোনো দল করেনি। এখন আর বসে থাকলে চলবে না। মানুষকে এসব পরিকল্পনার কথা জানাতে হবে। পরিকল্পনার যদি ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন হবে।’
দেশ রক্ষার জন্য আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে জেতাতেই হবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে জেতাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে জণগণের পক্ষের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করতে হবে। নো কম্প্রোমাইজ।’
নেতা–কর্মীদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা এখনই মাঠে নেমে পড়ুন। মাঠে না নামলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, প্রত্যেকবার দেশকে রক্ষা করেছে বিএনপি। এখন আবার দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে। মানুষের কাছে যান।’
মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের সময় রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছিল। দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আগামীতেও ভিন্নমতাদর্শের মানুষ যাতে নিরাপদে মতামত জানাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘যার যার মতাদর্শ অনুযায়ী কথা বলবে। সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। আগামী দিনে বিএনপি চায় মতামত প্রকাশের জন্য আবরার ফাহাদের মতো যেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে না হয়।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র অন ষ ঠ ন প রকল প ব এনপ র য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
মুছাপুরে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও শীতবস্ত্র বিতরণ করলেন মাসুদুজ্জামান
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বিএনপির উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় এবং এলাকার অসহায়, শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। দোয়া মাহফিলে বক্তারা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদুজ্জামান বলেন,"দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় এই দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছি। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে অত্যন্ত সংকটময় সময় কাটাচ্ছেন। আমরা আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই, আপনারা যে ধর্মেরই হোন না কেন, দেশনেত্রীর সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান মায়ের সেবায় প্রতিনিয়ত আছেন এবং প্রতিটি মুহূর্ত তাঁকে উৎকন্ঠায় কাটাতে হচ্ছে। আমরা আপনাদের কাছে তাঁর জন্যও দোয়া চাই, যাতে সকল ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটে এবং তিনি নিরাপদে মায়ের পাশে ফিরে যেতে পারেন। একই সঙ্গে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।"
তিনি আরও বলেন, "বন্দর ও মুছাপুর ইউনিয়নের প্রধান সমস্যা হলো গ্যাসের অভাব। প্রায় ৫০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ইনশা আল্লাহ, ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় আসে, আমরা এই সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করব। এখানে মাদক একটি গুরুতর সমস্যা, যা সমাজকে অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া ইটভাটার কারণে জমির মূল্য অনেক কমে যাচ্ছে, যা এখানকার কৃষি জমি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে ৩১ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত ও সংস্কার করে। আমি রাজনীতিতে কোনো সুবিধা নিতে আসিনি। আমি আপনাদের পাশে থাকতে এসেছি, আমার বাকি জীবন আপনার কল্যাণে উৎসর্গ করতে চাই। আমি জনাব তারেক রহমানের সঙ্গে অনেকবার আলোচনা করেছি এবং বুঝতে পেরেছি, তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনা ৩১ দফায় প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণের সমস্যা দূর করা এবং একটি উন্নত ও সুরক্ষিত ভবিষ্যত নিশ্চিত করা।"
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মো. রেজা রিপন, মহানগর বিএনপির সদস্য হাজী ফারুক হোসেন, যুবদল সভাপতি মনিরুল ইসলাম সজল, বন্দর থানা বিএনপির; সভাপতি শাহেন শাহ্। আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ লিটন। এছাড়াও ওয়ার্ড বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের স্থানীয় জনগণ এই সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমন উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের মধ্যে ঐক্য, সহমর্মিতা ও মানবিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দোয়া ও শীতবস্ত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। শীতবস্ত্র হাতে পাওয়া অনেকেই স্বস্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আয়োজকরা জানান, শীতের তীব্রতা অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরও কিছু স্থানে এই ধরনের সহায়তা কর্মসূচি নেওয়া হবে।