বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের গণ–আকাঙ্ক্ষা পূরণের একটি ধাপে আমরা উপনীত হচ্ছি। এরপরের বড় চ্যালেঞ্জ সেই নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হওয়া। নির্বাচন কমিশন, সরকার, সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণ—সব স্টেকহোল্ডারকে কম্বাইন্ডলি ফেস করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’

বুধবার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা শরাফপুর ইউনিয়নের মাদারতলায় সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ–পরবর্তী ওই এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ‘একটা দল যারা নিজেদের বড় মনে করে। ভোটের আগেই মনে করে ক্ষমতায় চলে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় গিয়ে নানা আশঙ্কার কথা শুনতে পাচ্ছি। তারা এবার ভোটকেন্দ্রে যেতে দেবে না। ভোট দিতে বাধা দেবে। ব্যালট বাইরে এনে সিল মেরে নেবে।’

এ বিষয়ে গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘চব্বিশের আগস্টেই আমরা সেই বাংলাদেশকে বিদায় দিয়েছি। সেই বাংলাদেশ আর আমরা দেখতে চাই না। ’১৪, ’১৮, ’২৪-এ জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আমরা এখন জনগণকে সচেতন করছি। আমরা জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়ে এসেছি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ভোট গ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে পক্ষপাতহীন হতে হবে।’

এর আগে সকাল আটটায় ফুলতলা উপজেলার শিরোমণির ডাকাতিয়া পশ্চিম পাড়ায় অনুষ্ঠিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামী দেশের সব ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষের কাছে সবচেয়ে আস্থার দলে পরিণত হয়েছে। জামায়াত ঘোষিত ন্যায় ও ইনসাফের দেশ গড়তে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর এই ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা কেউ কেউ মেনে নিতে পারছে না। কোথাও কোথাও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই হুমকির মানে হলো কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হলেও কেউ কেউ আবার কর্তৃত্ববাদী শাসন ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের অপচেষ্টা আগামী নির্বাচনে জনগণ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে রুখে দেবে।

বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম–নির্যাতনের কথা তুলে ধরে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে একটি দল আপনাদের শুধু তাদের ভোটবাক্স হিসেবে ধরত। তারা আপনাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে আবার আপনাদের বাড়িঘর দখল, ঘের দখলসহ বিভিন্ন ধরনের জুলুম–নির্যাতন চালিয়েছিল। বর্তমানে আরেকটি দল পুরোনো ধাঁচে আপনাদের ভাবতে শুরু করেছে। আগস্ট–পরবর্তী সময়ে আপনাদের ওপর বিভিন্ন প্রকার জুলুম–নির্যাতন তারা করছে। কিন্তু আপনারা কি বলতে পারবেন দেশ স্বাধীনের পর থেকে জামায়াতের কেউ আপনাদের ওপর জুলুম, নির্যাতন, নিষ্পেষণ চালিয়েছে? বরং যখনই সুযোগ পেয়েছে, জামায়াত আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

চিত্তরঞ্জন গাইনের সভাপতিত্বে ও মানস রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য আমিনুল ইসলাম, আবু ইউসুফ মোল্যা।

দুপুরে সেনপাড়া মাদ্রাসায় মহিলা সমাবেশ হয়। জামায়াতের ইউনিয়ন সভাপতি আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে ও ইউনিয়ন সেক্রেটারি হারুন অর রশীদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণ যে পরিবর্তন আশা করছে, সেই পরিবর্তনের জন্য জামায়াতে ইসলামী প্রস্তুত রয়েছে। সে জন্য অবাধ গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের সম–অধিকার নিশ্চিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আর এ দায়িত্ব প্রশাসনের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন দ র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই: হাসনাত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, "আমরা অবশ্যই ক্ষমতায় যেতে চাই, তবে সেটি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। কোনো আনহোলি নেক্সাসকে ম্যানেজ করে, কোনো নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ক্ষমতায় যেতে চাই না। জনগণ আমাদের ম্যান্ডেট দিলে, জনগণ যদি মনে করে আমরা যোগ্য, তাহলেই আমরা যেতে চাই।"

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২ এ ‘আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়’ সাক্ষ্য দিতে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

‘আমি রাজমিস্ত্রির ছেলে, খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি’

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন নয়, হুঁশিয়ারি হাসনাতের

এ সময় তিনি বলেন, "কোনো মিডিয়াকে, বুরোক্রেসিকে বা মিলিটারিকে নিয়ন্ত্রণ করে নয়, এবং পাশের দেশ ভারতের কনসেন্ট নিয়ে আমরা কোনো ক্ষমতায় যেতে চাই না।"

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "তিনি মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরছিলেন। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কীভাবে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়, সেটিই বর্ণনা করেছেন। কীভাবে মিডিয়ার সামনে তাদের বক্তব্য বিকৃত করা হয় এবং ‘নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের’ মাধ্যমে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বক্তব্যের খণ্ডিতাংশ ও আংশিক প্রচার করে ‘আন্দোলন প্রত্যাহারের নাটক’ মঞ্চস্থ করেছিল, সে বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন।

হাসনাত বলেন, “১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি এবং রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করার পর দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। এর প্রতিবাদে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর ‘নির্মমভাবে নির্যাতন ও নিপীড়ন’ চালায়। ১৬ জুলাই সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ মিছিলে রংপুরে আবু সাঈদকে ক্যাম্পাস কম্পাউন্ডে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং চট্টগ্রামে ছাত্রদলের ওয়াসিমকেও হত্যা করা হয়। সেদিন সারা দেশে মোট ৬ জন শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।”

তিনি বলেন, “১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজা দিতে গেলে এজেন্সির চাপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগসাজশ এবং ইউজিসির নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। গায়েবানা জানাজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য সদস্য সমন্বিতভাবে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।”

এরপর তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মিটিং করার জন্য চাপ দেওয়া হয়, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি বলেন, “ব্যর্থ হয়ে সেদিন রাতেই আমাকে ‘সেফ হাউজে’ (মৎস্যভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি) নিয়ে গিয়ে সারারাত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং চাপ প্রয়োগ করা হয়। সেদিন সকালে এসে এজেন্সির একজন আমাদের হুমকি দেয় যে আমরা যেন মিটিং করে সারা দেশের সমন্বয়কদের বলি যে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। তাহলে আমাদের লাইফ সেটেল করে দেবে, বিদেশেও আমাদের লাইফ সেটেল করে দেবে।”

এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, “আমরা সেখানে বলেছিলাম রক্ত মাড়িয়ে কোনো সংলাপ নয়। শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা কোনো সংলাপ করতে পারি না। এবং আমরা বলেছিলাম শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কিন্তু কোনো গণমাধ্যম সেটি সেদিন প্রচার করেনি।”

ঢাকা/রায়হান/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর
  • যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান 
  • মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি: তারেক রহমান
  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলনের ১১ দফা প্রস্তাব
  • জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জামায়াত: গোলাম পরওয়ার
  • আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই: হাসনাত
  • ভোটের মাঠে এখনো সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়নি: জামায়াত
  • অবৈধ অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জামায়াতের