সোনারগাঁও জি.আর ব্যাচ-২০০৫ এর শিক্ষার্থীদের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন
Published: 25th, October 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌর এলাকায় অবস্থিত সোনারগাঁও জি.আর ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ২০০৫ সালের এসএসসি ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন সোনারগাঁও জি.আর ব্যাচ-২০০৫ এর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছেন বর্ণাঢ্য আয়োজনে।
“এসো সবে প্রাণের টানে, এসো সবাই প্রতিভার প্রাঙ্গণে”- এই স্লোগানকে সামনে রেখে সোনারগাঁ জি.
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সারাদিনব্যাপী এই উৎসব বসন্ত বিলাস রিসোর্টে আয়োজন করে জি.আর. ইনস্টিটিউশন ব্যাচ ২০০৫।
দিনব্যাপী এ আয়োজনে সকাল ৮টায় যাত্রা শুরু হয় সোনারগাঁও জি.আর. ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ গেইট থেকে। গাড়িতে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে টি-শার্ট বিতরণ ও কুপন বিক্রয় করা হয়। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় তারাবো পৌরসভার যাত্রামুড়া বসন্ত বিলাস রিসোর্টে পৌছান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা সকালের নাস্তা সেরে নেমে পড়েন ফুটবলা খেলায়। ক্ষনিকের জন্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেনো ফিরে যান শৈশবে।
মধ্যবয়সেও যেনো কিশোর বয়সের ন্যায় ফুটবল খেলার মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তারা। খেলার মাঠে বেশকজন আহত হয়ে নিজেরা বুঝেছেন কিশোর যুবক বয়স পাড় করে মধ্যবয়সে ফিরেছেন তারা। এরপর ছুটে যান সুইমিং পুলে। সেখানেও থেমে থাকেনি।
বাধভাঙ্গা উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সুইমিং পুলে। এবারো যেনো প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ফিরে গেলেন শিশুকালে। পরবর্তীতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সন্তানদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বল নিক্ষেপ খেলা।
দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ছিল জুমাআ নামাজের জন্য বিরতি। দুপুর ২টা থেকে ৩টি পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজ। মধ্যাহ্নভোজ শেষে বাধভাঙ্গা উল্লাস থেকে যেনো সবাই মিউয়ে পড়েন ক্লান্তিতে। এরি মাঝে শুরু হয় মেয়েদের বালিশ কার হাতে খেলা।
বাদ আসর শেষে পুরস্কার বিতরণ, আলোচনা সভা ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও বেশকটি ইভেন্ট সম্পন্ন করা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। সঙ্গে ছিল বসন্ত বিলাস রিসোর্টের বিভিন্ন রাইড ও বিনোদনমূলক আয়োজন সবার মাঝে যেনো আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলেন, “এই বন্ধুত্ব আর মিলনমেলা আমাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একসূত্রে বেঁধে রাখে। ভবিষ্যতেও এ ঐক্য ধরে রাখতে চাই। শিক্ষাজীবনের স্মৃতি আমাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ।
এই আয়োজন সেই স্মৃতিগুলোকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। আমরা শুধু প্রাক্তন শিক্ষার্থী নই, সমাজ উন্নয়নে দায়িত্বশীল নাগরিকও। সেই লক্ষ্যেই আমাদের সংগঠন কাজ করছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- আল মাহামুদ সানি, আমিরুল ইসলাম সজীব, সিফাতুল ইসলাম সিফাত, কাউসার আল মামুন রাজু, নূর মোহাম্মদ রুবেল, সাদেকুর রহমান সাদেক, হাসান মেহেদী, শাহিন কবির, মাহাবুবুর রহমান তমাল, আজহারুল ইসলাম রনি, খোরশেদ আলী, তানিয়া মৌসুমী শোভা, ফারজানা রিনা, নজরুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ, আরিফুজ্জামান আরিফ, শাহআলী, রিপন আহমেদ আশিক, সাইদুর রহমান, শরীফ হোসেন, মোহাম্মদ রাসেল, মাজহারুল ইসলাম রোকন সহ অন্যান্যরা। এ ছাড়াও প্রবাসে থাকা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ভার্চুয়ালী অংশগ্রহণ করেছেন।
উল্লেখ্য, “২০০৫ ব্যাচ” নামে একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সামাজিক সংগঠন ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই সংগঠনটি সোনারগাঁ অঞ্চলে নানামুখী সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে, যা বর্তমানে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে সোনারগাঁও জুড়ে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ ইনস ট ট উশন র ল ইসল ম ষ ঠ ত হয় অন ষ ঠ স ন রগ
এছাড়াও পড়ুন:
পারিবারিক সৌভ্রাতৃত্বের উৎসব ভাইফোঁটা
প্রথমেই পৌরাণিক কাহিনির কথা জেনে নেওয়া যাক।
দেবতা সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার এক কন্যা ও এক পুত্র। তাঁদের নাম যথাক্রমে যমুনা আর যম। সন্তানদের জন্মের পর সূর্যজায়া দেবী সংজ্ঞা সূর্যর তাপ সহ্য করতে না পেরে নিজের ছায়াকে দেবলোকে রেখে নিজে একা মর্ত্যবাসী হন। পুত্র–কন্যাদের বিমাতা ছায়া স্নেহের পরিবর্তে দুর্ব্যবহারই করতেন।
এদিকে ছায়ার মায়ায় সূর্যদেব পুত্র–কন্যার প্রতি দুর্ব্যবহারের কোনো প্রতিবাদও করতে পারতেন না। এ কারণে অত্যাচার বাড়তেই থাকে। শেষে একদিন কন্যা যমুনাকে বিমাতা ছায়া স্বর্গলোক থেকে বিতাড়িত করেন।
পরে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে ভাই যমের সঙ্গে দিদি যমুনার দেখাসাক্ষাৎ প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। এদিকে দিদিকে দেখতে না পাওয়ার দরুন যমের মন কেমন করতে থাকে। দিদি যমুনারও মন খারাপ।
দিদির ইচ্ছানুসারে যমরাজ সেই বর সবার জন্য দান করেন এবং তাঁর আহ্বানে বারবার আসার প্রতিশ্রুতি দেন। দিদি যমুনার মঙ্গল কামনায় যম অমরত্ব লাভ করেছিলেন।একদিন ভাই যম তাই ঠিক করেন, দিদির সঙ্গে দেখা করতে হবে। মর্ত্যে কালীপূজা মিটে যাওয়ার দুই দিন পর যম দিদি যমুনার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। হঠাৎ ভাইকে দেখে আনন্দে আত্মহারা দিদি যমুনা আদর–আপ্যায়ন করে খাইয়ে–দাইয়ে তাঁর সর্বাঙ্গীণ কুশল ও মঙ্গল কামনা করলেন।
এমন আপ্যায়নে মুগ্ধ হয়ে ভাই যম উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে দিদি যমুনা সব বোনের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একটি বর প্রার্থনা করেন। যমুনা বলেন, ‘এই দ্বিতীয়ার দিনে প্রত্যেক ভাই যেন তাঁর বোনের কথা স্মরণ করেন এবং প্রত্যেক বোন যেন তাঁর ভাইয়ের মঙ্গলময় দীর্ঘায়ু কামনা করেন।’
দিদির ইচ্ছানুসারে যমরাজ সেই বর সবার জন্য দান করেন এবং তাঁর আহ্বানে বারবার আসার প্রতিশ্রুতি দেন। দিদি যমুনার মঙ্গল কামনায় যম অমরত্ব লাভ করেছিলেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে ভাইফোঁটা উদ্যাপনের যে রীতি এই দ্বিতীয়ার দিনে প্রচলিত, তার আদিতে আছে এমন এক ভাই–বোনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পুরাণকথা।
আরও পড়ুনরাখিবন্ধন: ভেদাভেদ ভুলে মানবতার উৎসব০৯ আগস্ট ২০২৫অনেকে যদিও এই প্রসঙ্গে আরেকটি কাহিনির কথাও বলে থাকেন। সেখানে আছে, যমুনার সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণর দাদা বলরামের বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ের দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। বিয়ের আগে যমুনা ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে দীর্ঘায়ুর জন্য মঙ্গল কামনা করেছিলেন।
এসব পৌরাণিক কাহিনি ও এর পাশাপাশি আধুনিক কালে ভাইফোঁটার আচারকে অবশ্যই সম্প্রীতির একটি চিরন্তন উৎসব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। চলতি কথায় একে ‘ভাইফোঁটা’ বলা হলেও এর আভিধানিক নাম ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’।
পিঁড়িতে বসা ভাইয়ের কপালে সেদিন বোনেরা চন্দন, ঘি, দই বা প্রদীপের পোড়া পলতের কালো টিকা পরিয়ে দেন। বোনেরা বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে এই টিকা বা ফোঁটা দেন।ভাই–বোনের পারিবারিক, পারস্পরিক, সামাজিক বন্ধন এবং ঐক্যের এই রীতি সনাতন ধর্মের সব ভাষাভাষীর মানুষের মধ্যে প্রচলিত। শুধু প্রচলিত বললে ভুল বলা হবে, বরং বলা যেতে পারে খুবই জনপ্রিয় একটি লোকাচার।
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে কালীপূজা সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিপদে বা দ্বিতীয়া তিথিতে ঘরে ঘরে ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়। হিন্দিভাষী সনাতনীরা এই পার্বণকে ‘ভাইদুজ’ বলে থাকেন।
যেহেতু ভাইয়ের কপালে তিলক কাটা হয়ে থাকে, তাই অনেক জায়গায় বলা হয় ‘ভাইটিকা’। পিঁড়িতে বসা ভাইয়ের কপালে সেদিন বোনেরা চন্দন, ঘি, দই বা প্রদীপের পোড়া পলতের কালো টিকা পরিয়ে দেন। বোনেরা বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে এই টিকা বা ফোঁটা দেন। তিনবার ফোঁটা দিতে দিতে মন্ত্র উচ্চারণ করেন:
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।।
যমুনার হাতে ফোঁটা পেয়ে যম হলো অমর।
আমার হাতে ফোঁটা পেয়ে আমার ভাই হোক অমর।।’
আরও পড়ুনদীপাবলি: অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর উৎসব২০ অক্টোবর ২০২৫যদিও প্রতিপদে অনেক পরিবারেই ফোঁটা দেওয়ার চল আছে। সেখানে আবার মন্ত্র উচ্চারণে সামান্য তারতম্য লক্ষ করা যায়। অনেকে আবার একে মন্ত্র না বলে ছড়াও বলে থাকেন। ছড়াটি এমন:
‘প্রতিপদে দিয়ে ফোঁটা,
দ্বিতীয়াতে নিতে,
আজ হতে ভাই আমার, যমের ঘরে
নিমের অধিক তিতে।
ঢাক বাজে, ঢোল বাজে, আরও বাজে কাড়া,
বোনের ফোঁটা না নিয়ে ভাই,
না যেয়ো যমপাড়া
না যেয়ো যমের ঘর,
আজ হতে ভাই আমার রাজরাজেশ্বর।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দিই আমার ভাইয়ের কপালে ফোঁটা।
ভাইয়ের কপালে দিলুম ফোঁটা,
যমদুয়ারে পড়ল কাঁটা।’
বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলকে সনাতনধর্মীরা মহাশূন্যের প্রতীক মনে করেন। হিন্দুশাস্ত্রে আছে, পাঁচটি আঙুল পঞ্চভূতের প্রতীক। এই পঞ্চভূত হলো ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম।বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলকে সনাতনধর্মীরা মহাশূন্যের প্রতীক মনে করেন। হিন্দুশাস্ত্রে আছে, পাঁচটি আঙুল পঞ্চভূতের প্রতীক। এই পঞ্চভূত হলো ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম। যেহেতু ভাই–বোনের ভালোবাসা অসীম, তাই ব্যোমের প্রতীক কনিষ্ঠ আঙুলকেই ফোঁটা দেওয়ার উপযুক্ত মনে করেন শাস্ত্রবিদেরা।
এরপর আশীর্বাদের পালা চলে বড়দের সঙ্গে ছোটদের। আশীর্বাদের সময় ধান ও দূর্বার শিষ ব্যবহৃত হয়। সঙ্গে মিষ্টিমুখ ও উপহার তো থাকেই। আর দিনে বা রাতে ভূরিভোজের মস্ত আয়োজনও করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনভাই-বোনের মধ্যকার অনিন্দ্যসুন্দর সম্পর্ক ঘিরেই প্রচলিত ভাইফোঁটা ০৩ নভেম্বর ২০২৪