জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে নিজেদের বক্তব্য ও দাবিগুলো নতুন করে জানিয়ে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়ায় সনদে স্বাক্ষর না করার কথা কমিশনকে জানিয়েছে দলটি।

এনসিপি কমিশনের কাছে নতুন একটি দাবিও জানিয়েছে। সেটি হলো আগামী নির্বাচনের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদে সংস্কারগুলো অনুমোদিত হওয়ার পর সংবিধানের নাম হবে ‘বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬’ এবং বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের এর অধীনে নতুন করে শপথ নিতে হবে।

গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদের এলডি হলে এনসিপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। এনসিপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন ও খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা। কমিশনের পক্ষে ছিলেন সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মো.

এমদাদুল হক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এনসিপির আগ্রহে বৈঠকটি হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এনসিপির প্রতিনিধিরা ঐকমত্য কমিশনের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের কনটেন্ট (আধেয়) দেখতে চান। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, কাজ চলছে। তখন এনসিপির দিক থেকে বলা হয়, কমিশন যখন সরকারকে সুপারিশ দেবে, তখন যেন এর একটি কপি এনসিপিকেও দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে কমিশন তাদের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

এনসিপির বক্তব্যের জবাবে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, সব কিছু মাথায় রেখেই তারা খসড়া তৈরি করছে। কিন্তু খসড়ায় কী কী বিষয় থাকবে, সেটা তারা আগেই প্রকাশ করতে চায় না। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাদের প্রতিনিয়ত বৈঠক হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব, বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া প্রস্তুত হবে বলেও জানায় কমিশন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এনসিপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আগামী সংসদের দ্বৈত ভূমিকার বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনকে বলেছেন। এর আগে তাঁরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেগুলোই কমিশনের কাছে আবার ব্যাখ্যা করেছেন।

আদেশ না দেখে স্বাক্ষর নয়

১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি এনসিপি। আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না পাওয়ার যুক্তি দিয়ে তারা সনদে সই করেনি। সনদের আইনি ভিত্তির বিষয় নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছে এনসিপি। এরই অংশ হিসেবে গতকাল তারা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করল।

গতকালের বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে এনসিপিকে জুলাই সনদে সই করার অনুরোধ জানানো হয়। এনসিপির পক্ষ থেকে আগের মতোই বলা হয়, তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা দেখে তারপর স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যাতে সনদ বাস্তবায়ন আদেশটি জারি করেন, সে বিষয়েও জোর দিয়েছে এনসিপি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে এনসিপির অবস্থান হলো, গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে আদেশ জারি, এ আদেশের অধীনে গণভোট। সেই গণভোটে সনদ গণভিত্তি পাবে এবং পরবর্তী সংসদ একটা গাঠনিক ক্ষমতা পাবে।

এ প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, তাঁরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে নতুন একটি বিষয় বলেছেন। সেটি হলো আগামী সংসদে সংবিধান সংস্কার সভায় সংস্কারগুলো অনুমোদিত হওয়ার পর এটা হবে ‘বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬’ এবং সাংবিধানিক পদগুলোতে থাকা ব্যক্তিরা এর অধীনে নতুন করে শপথ নেবেন।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ প্রস্তুত করছে কমিশন, অগ্রগতি হিসেবে দেখছে এনসিপি১০ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র প পর স ব সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের বিষয়ে নিষ্পত্তির পর ভোটের দিকে যাবে এনসিপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেও জুলাই সনদে এখনো স্বাক্ষর করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালাচ্ছে। আইনি ভিত্তি পরিষ্কার হলে এনসিপি সনদে সই করবে। এরপর তারা নির্বাচনী তৎপরতায় ঢুকবে বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের চারজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা জানিয়েছেন, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আছে। জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করার বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এনসিপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। ৩১ অক্টোবরের আগেই এনসিপির জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর মধ্যে গত বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার জন্য এনসিপির প্রতি আহ্বান জানান। এনসিপির দিক থেকে আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এর পাশাপাশি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টাকে জারি করার দাবি জানায় এনসিপি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি বা আইনি ভিত্তি নিয়ে ঐকমত্য কমিশন কী সুপারিশ করে এবং তার ভিত্তিতে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখার জন্য এখন অপেক্ষা করছে এনসিপি।

১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপির কেউ যাননি। সেদিন সকালে দলটির পক্ষ থেকে তিনটি শর্তের কথা বলা হয়েছিল। সেগুলো হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ‘টেক্সট’ ও গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে; গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী, আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের ওপর প্রদত্ত গাঠনিক ক্ষমতাবলে সংবিধান সংস্কার করবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি বা আইনি ভিত্তি নিয়ে ঐকমত্য কমিশন কী সুপারিশ করে এবং তার ভিত্তিতে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখার জন্য এখন অপেক্ষা করছে এনসিপি। তাদের শর্ত বা এর কাছাকাছি সিদ্ধান্ত যাতে সরকার নেয়, সে জন্য সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে দলটি। আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করবে বলে দলটি গতরাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে এনসিপি। সনদের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব

এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা আশা করছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে তাঁদের শর্তের প্রতিফলন থাকবে। সেটি হলে ৩১ অক্টোবরের আগেই তাঁরা সনদে স্বাক্ষর করবেন। এরপর দলের নির্বাচনী কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে।

দলটির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, আগামী মাসের শুরুর দিকে এনসিপি কিছু দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে পারে। তবে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় লাগবে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরে তৃতীয় একটি জোটে গিয়ে নির্বাচন করা অথবা এককভাবে নির্বাচন করা—এই দুটোর যেকোনো একটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো বড় দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হতে পারে।

আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করবে বলে দলটি গতরাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে এনসিপি। সনদের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘হয় তুমি এ পক্ষে, নয় তুমি ও পক্ষে’—এর বাইরে কি কোনো ধারণা নেই
  • ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএ বালিকা বিদ্যালয়ে ২০২৬ সালে প্লে-গ্রুপে শিক্ষার্থী ভর্তি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ প্রস্তুত করছে কমিশন, অগ্রগতি হিসেবে দেখছে এনসিপি
  • বাস্তবায়ন আদেশের ড্রাফট দেখার পর জুলাই সনদে স্বাক্ষর: আখতার
  • ২০২৬ সালে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদন শুরু ১ নভেম্বর
  • ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি
  • জুলাই সনদের বিষয়ে নিষ্পত্তির পর ভোটের দিকে যাবে এনসিপি
  • ডিভি লটারিতে বাংলাদেশের নাম না থাকা নিয়ে বিভ্রান্তির অপচেষ্টা 
  • মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে ২০২৬ সালে পিজি শ্রেণিতে ভর্তি