রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন ছয় শিক্ষার্থী। গতকাল রোববার বেলা ৩টা থেকে আজ ১টা পর্যন্ত টানা ২২ ঘণ্টা অনশনরত অবস্থায় থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগের ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী এসে প্রশাসনের ভবনের ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমন আলী মণ্ডল, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের, ইলমুল মুনতাহা ও আয়েশা খাতুন হুমায়রা, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইমন হোসেন ও মো.

কাউছার এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাদিক হাসান। তাঁদের মধ্যে সাদিক ও ইমন গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিয়াম সাদমান বলেন, ‘আমরা তিন দাবিতে কয়েক দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে বিভাগের সভাপতির সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। অন্য বিভাগ থেকে আসায় তাঁর দায়িত্ববোধের জায়গাটা নেই। তাই আমরা সভাপতির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করি।’

রাইসুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এক দফা দাবিতে আমাদের ছয়জন ভাই-বোন অনশন করছেন। আমাদের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী এই সভাপতির পদত্যাগ চান। প্রশাসন বিভাগের সভাপতি ছাড়া বাকি শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁরা সভা শেষে বের হয়েছেন এবং দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁকে অপসারণ করে নতুন সভাপতি নিয়োগ না দেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এনামুল হক গত জুলাইয়ে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২৩ সালের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে শুধু চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান নিয়োগ পাওয়ার পর নতুন বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর নিজ বিভাগ মনোবিজ্ঞানকেও সংযুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। গত মঙ্গলবার বৈষম্যমূলক শিক্ষক নিয়োগ সংশোধনসহ তিন দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নেওয়ায় গত বুধবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন তাঁরা। এর অংশ হিসেবে তাঁরা রক্ত ব্যানার লেখা, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে বৃহস্পতিবার তাঁরা তিন দফা দাবি থেকে সরে এসে বিভাগের সভাপতির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করেন। গতকাল এক দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে ছয় শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন।

যে তিন দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন, তা হলো বৈষম্যমূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন, ইন্টার্নশিপ ভাতা চালু ও বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানকে টেকনিক্যাল ক্যাডার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন ব জ ঞ ন ব ভ গ র শ ক ষ বর ষ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনের দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা

অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সেশনজট নিরসনের দাবিতে অনশনের বসেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তারা সেমিস্টারের মেয়াদকাল সর্বসাকুল্যে ৪ মাস করার দাবি জানিয়েছেন।

শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

আরো পড়ুন:

‘কাশির সূত্র ধরে’ খাদ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, গ্রেপ্তার ৩

ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়: প্রধান বিচারপতি

এ সময় তারা হাতে থাকা প্লাকার্ডে ‘মোদের দাবি একটাই চার মাসে সেমিস্টার চাই’, ‘ডিগ্রি নিতে ১০ বছর চাকরি নিব কোন বছর’, ‘এক দফা এক দাবি ৪ মাসে সেমিস্টার দিবি’, ‘সেশনজটে পুড়ছে প্রাণ এবার চাই সমাধান’ ইত্যাদি লেখা দেখা যায়। 

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। আলোচনায় শেষে বিকেল ৪টা থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।

ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. নাঈম মিয়া বলেন, “ভেটেরিনারি অনুষদের সেশনজট নিরসনে সেমিস্টার সময়কাল ৪ মাসে করার জন্য গত ১২ অক্টোবর আমরা উপাচার্য স্যার বরাবর স্মারকলিপি জমা দেই। পরবর্তীতে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমরা জানাই ২৪ তারিখের মধ্যে আমাদের দাবি না মানা হলে ২৫ তারিখ থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছি।”

দুপুরের পর উপাচার্যের সঙ্গে হওয়া আলোচনায় তাদের দাবি না মানায় আমরণ অনশন শুরু করেন বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “আমরা তাদের দাবির প্রতি যথেষ্ঠ নমনীয়। আমরা প্রায় ২ ঘন্টা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবকিছু তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। আমরা ভাবতে পারিনি তারা অনশনে বসবে।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে যথাযথ আইন মেনে আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা বিষয়টি আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছি।”

এর আগে, গত ১২ অক্টোবর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সেশনজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সময়সীমা বেধে দেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা/কাওছার/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএম কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এক শিক্ষার্থীর অনশন
  • সভাপতির পদত্যাগ দাবিতে অনশনে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৪ শিক্ষার্থী
  • রাবি নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন, অনশন অব্যাহত
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে আমরণ অনশনে দুই শিক্ষার্থী
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনের দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা