এক সময়ের দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম নৌরুট আরিচা-কাজিরহাট। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট চালু হওয়ার পর এই  নৌরুট দেড় যুগ বন্ধ থাকে। ২০২১ সালে নৌরুটটি পুনরায় চালু হলেও আগের অবস্থা ফিরে পায়নি। তবে এখনও আরিচা-খয়েরচর নৌরুট দুই পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে সম্ভাবনার দুয়ারের আলো দেখাচ্ছে।

প্রকল্পের তথ্য বলছে, মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা ঘাট থেকে পাবনা জেলার খয়েরচর (খাসেরচর) পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে এবং সময় কম লাগবে। বর্তমানে ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যমুনা সেতু হয়ে পাবনার দূরত্ব প্রায় ২৩৩ কিলোমিটার। কাজিরহাট-আরিচা নৌপথে এ দূরত্ব মাত্র ১৪৭ কিলোমিটার। এই নৌপথে ১৭ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট এবং কাজিরহাট থেকে আরিচা আসতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট। সময় বেশি লাগায় অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও দ্রুতগতির স্পিডবোটে যাতায়াত করছেন। একটি ‘রো রো’ ফেরিতে প্রতি ঘণ্টায় জ্বালানি খরচ হয় ১২৯ লিটার এবং ছোট ফেরিতে ১২৮ লিটার। যদি আরিচা-খয়েরচর ঘাট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে দূরত্ব কমে আসবে ১০ কিলোমিটার এবং জ্বালানি খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।

জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে ঢাকা-আরিচা সড়ক চালু হওয়ার পর আরিচা থেকে যমুনা পাড় হয়ে নগরবাড়ি এবং আরিচা থেকে যমুনা-পদ্মা পাড় হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটের সঙ্গে চালু করা হয় ফেরি সার্ভিস। এতে আরিচা-নগরবাড়ি হয়ে ওঠে উত্তরবঙ্গ এবং আরিচা-গোয়ালন্দ হয়ে ওঠে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান পথ। ১৯৬৩ সালে ৩১শে মার্চ কর্ণফুলি নামে একটি ফেরি সার্ভিস দিয়ে আরিচা দৌলতদিয়া নৌরুটের যাত্রা শুরু হয়। 

দেশ স্বাধীন হওয়া পর দ্রুত বাড়তে থাকে আরিচা ঘাটের গুরুত্ব। এক পর্যায়ে আরিচা ঘাটকে নৌবন্দরের মর্যাদা দেয়া হয়। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার যানবাহন পারাপার হতো। যাতায়াত ছিল গড়ে ৫০ হাজার মানুষের। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর আরিচা ঘাটের গুরুত্ব কমে যায়। তার ওপর আরিচা ঘাটের কাছে যমুনা নদীতে নাব্যতাও কমতে থাকে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে ২০০১ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি আরিচা ফেরি ঘাট নিয়ে যাওয়া হয় পাটুরিয়াতে। এরপরই এক সময়ের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর আরিচা ঘাট তার ঐতিহ্য হারায়। শুধু রয়ে যায় কিছু লঞ্চ আর ইঞ্জিনচালিত নৌকা। বন্ধ হয়ে যায় শত শত হোটেল-রেস্টুরেন্ট। ধস নামে বোর্ডিং ব্যবসায়। বেকার হয়ে পড়ে ঘাটের শ্রমজীবী মানুষ। 

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয় জানায়, উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ২০২৪ সালের ৯ জুন একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবটিতে খয়েরচর (খাসেরচর) এলাকায় ৪টি ফেরিঘাট, ১টি লঞ্চঘাট ও ১টি স্পিডবোট ঘাট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি সেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, টার্মিনালসহ একাধিক উন্নয়ন কাজের প্রস্তাব রয়েছে। কাজের জন্য ১১০ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাবনা জেলার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কাইয়ুম পোদ্দার বলেন, ‘‘আমাদের যাতায়াতে অনেক সময় লাগে। আরিচা-কাজিরহাট ফেরি পার হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। ব্যবসায়িক কাজে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা যেতে হয়। ভীষণ কষ্ট হয়। যদি খয়েরচরে ঘাট হয়, তাহলে আমাদের কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে।’’

পাবনা জেলার ট্রাকচালক জামাল মোল্লা বলেন, ‘‘আরিচা-কাজিরহাট ফেরি পার হতে অনেক সময় লাগে। যদি আরিচা-খয়েরচর ঘাট হয়, তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হবে, তাড়াতাড়ি নদী পার হতে পারব।’’

মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার আরিচা এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, ‘‘এক সময় আমাদের এই আরিচা ঘাট ছিল খুব জমজমাট। ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসা করে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। যদি আরিচা-খয়েরচর ঘাটটি হয়, তাহলে ঘাট আবার সেই আগের রূপে ফিরে আসবে। এই ঘাট আমাদের স্বপ্ন।’’

সামাজিক সংগঠন ‘জনস্বার্থে আমরা’র সভাপতি কলেজ শিক্ষক ইয়াসিনুর রহমান বলেন, ‘‘আরিচা-খয়েরচর নৌরুট প্রকল্প বাস্তবায়নের আশায় নতুন স্বপ্নে বিভোর পদ্মা-যমুনা নদীর দুই তীরের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনই হবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো.

রিসাদ আহমেদ বলেন, ‘‘আরিচা-খয়েরচর প্রকল্পের প্রস্তাব ২০২৪ সালের ৯ জুন পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবে খয়েরচর (খাসেরচর) এলাকায় ৪টি ফেরিঘাট, ১টি লঞ্চঘাট ও ১টি স্পিডবোট ঘাট স্থাপনসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবের মোট বাজেট ১১০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হবে।’’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আব্দুল সালাম বলেন, ‘‘আরিচা-খয়েরচর ঘাট দিয়ে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১৬টি জেলার মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবে। পাশাপাশি যমুনা সেতু ও রেল সেতুর ওপর চাপও অনেকটা কমে যাবে।’’

ঢাকা/তারা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব ক জ রহ ট রচর ঘ ট ব যবস থ প রকল প আম দ র প র হত র আর চ

এছাড়াও পড়ুন:

এক বছরে পারাপারে দুর্ভোগ কতটা কমল, কী বলছেন যাত্রীরা

মধ্যযুগে লবণ ও কাঠের তৈরি জাহাজ নির্মাণের জন্য সন্দ্বীপের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ পর্যন্ত। মধ্যযুগের সেই বিখ্যাত বন্দর সন্দ্বীপের পূর্ব উপকূলের গুপ্তছড়া ঘাটকে ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর উপকূলীয় নদীবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এই সিদ্ধান্তে আনন্দে মেতে উঠেছিল প্রাচীন এই দ্বীপের চার লাখ বাসিন্দা। তবে এক বছর পার হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ দূর হয়নি পুরোপুরি।

নদীবন্দর ঘোষণার ফলে ঘাটের মালিকানা নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান হয়। এ বছরের ২৪ মার্চ ফেরি চলাচল শুরু হয় সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে।

সরকারি গেজেট প্রকাশের এক বছর পার হলেও ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সীমানা জরিপের কাজ শুরু হয়নি বলে জানা গেছে। ভৌগোলিক নানামুখী বিপত্তির মুখে ফেরি চলাচল নির্বিঘ্ন করার চ্যালেঞ্জ দূর করা সম্ভব হয়নি এই এক বছরে। করা হয়নি সম্ভাব্যতা যাচাইসহ গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা। সম্ভাব্যতা যাচাই বা আনুষঙ্গিক সমীক্ষা ছাড়া ফেরি চলাচলের মতো ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমালোচনা করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। যাত্রীরা জানিয়েছেন, এই সময়ে ফেরিঘাটের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, দেশের কোনো নদীবন্দরে এক বছরের মাথায় এত কাজ হয়নি যতটা সন্দ্বীপ নদীবন্দরে হয়েছে।

ফেরি কপোতাক্ষের বদলে এখন থেকে চলাচল করবে সি-ট্রাক এসটি নিঝুম দ্বীপ। ৭ ডিসেম্বর গুপ্তছড়া প্রান্ত থেকে তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজার বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন লাইটিং জেটি উচ্ছেদের সুপারিশ বিআইডব্লিউটিএর
  • এক বছরে পারাপারে দুর্ভোগ কতটা কমল, কী বলছেন যাত্রীরা