হাসিনা–ইনুর অডিওতে স্পষ্ট বলা আছে, কারফিউ হবে কিন্তু গুলি হবে না: আইনজীবী মনসুরুল
Published: 28th, October 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর অডিও কথোপকথনে স্পষ্ট ‘কারফিউ হবে কিন্তু গুলি হবে না’ বলা আছে বলে উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ইনুর এই আইনজীবী এ কথা বলেন।
জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) সভাপতি ইনুর বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা একটি মামলা চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ। সেই মামলায় ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তিনি আজকে এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থেকে ইনুর অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।
অব্যাহতির আবেদনের সময় ট্রাইব্যুনালে যেসব কথা বলেছেন, তা পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে জানান আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘হাসানুল হক ইনুর সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (সাবেক) শেখ হাসিনার যে টেলিফোনিক কনভারসেশন সেখান থেকে আমি উদ্ধৃতি করে দেখিয়েছি যে, উনাদের কনভারসেশনে স্পষ্টত উনারা বলেছেন, যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য আহ্বান করতে হবে। যাতে আন্দোলন বেগবান না হয়, সে জন্য কারফিউ জারি করে, যাতে করে মানুষ আনরুলি (অবাধ্য) না হয় এবং সহিংস কোনো ঘটনা না ঘটাতে পারে, সে জন্য ইনু শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছেন।’
মনসুরুল হক বলেন, ‘এবং শেখ হাসিনাও বলেছেন যে কারফিউ হবে, কিন্তু কোনো গুলি হবে না। স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। এবং বলেছেন, কেউ যদি কোনো ভায়োলেন্ট অ্যাক্ট করে তাকে অ্যারেস্ট করা হবে, থানায় নিয়ে যাওয়া হবে, টেলিভিশনে প্রচার করা হবে যে তাকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে থানায় রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এ অবস্থায় এই কনভারসেশন থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, আওয়ামী লীগ সরকারসহ ১৪ দল সাধারণ জনগণের আন্দোলন দমন করার জন্য কোনো অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই। ট্রাইব্যুনাল আমাদের কথা শুনেছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষ ইনুর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ এনেছে বলেও উল্লেখ করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, একটি সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি (শীর্ষ নেতৃত্বের দায়) এবং অন্যটি কমপ্লিসিটি (সম্পৃক্ততা)। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ করার এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত ইনুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করতে পারেনি। কমপ্লিসিটি বা সম্পৃক্ততার ব্যাপারেও তথ্য-উপাত্ত আনতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে ২৩ অক্টোবর এ মামলায় ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। আগামী ২ নভেম্বর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন র ব র দ ধ র ষ ট রপক ষ আইনজ ব বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল হলে বাকশাল ফিরে আসবে: আপিল শুনানিতে শিশির মনির
পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরো বাতিল হলে আবার বাকশাল ফিরে আসবে। সংবিধান থেকে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাদ পড়ে যাবে। যেভাবে আছে, সেভাবে থাকলে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে দেখার সুযোগ বেশি থাকবে। আর এই ব্যাপ্তিটা খোলা থাকা উচিত, গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে যেন সংবিধান সংস্কার পরিষদ বিষয়গুলোতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের করা আপিল শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আজ বুধবার এ কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ শুনানি গ্রহণ করেন। আগামীকাল শুনানির পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল হলে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে উল্লেখ করে শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শিশির মনির বলেন, জুলাই চার্টার হয়েছে। এখানে বড় ধরনের প্রক্রিয়া ও বিষয়গত প্রস্তাব এসেছে। জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ জারি হয়েছে। যেভাবে আছে, সেভাবে থাকলে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে দেখার সুযোগ বেশি থাকবে। এখন যেভাবে আছে তাতে সিজার চালিয়ে দেওয়া হলে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণের সামনে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।
শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে কে দেখবে? নবনির্বাচিত সংসদ দেখবে? তখন শিশির মনির বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ। যার মূল হচ্ছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে সংবিধান সংস্কার পরিষদের ওপরে দেওয়া হয়েছে। এ অংশ গণভোটে আবার চারটি প্রশ্ন আকারে যাচ্ছে। সংবিধান সংস্কার সভায় যদি ভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়, এমনও হতে পারে যে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে আর আলোচনার প্রয়োজন না–ও হতে পারে। কারণ, জুলাই চার্টারে প্রস্তাবিত অনেকগুলো বিষয়ই পঞ্চদশ সংশোধনীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই ব্যাপ্তিটা খোলা থাকা উচিত, গণভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে যেন সংবিধান সংস্কার পরিষদ এ বিষয়গুলোতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি–সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। রায়ে গণভোটের বিধানসংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে অন্য বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি আপিল হয়। সুজন সম্পাদকসহ চার ব্যক্তি একটি আপিল করেন। নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন একটি এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আরেকটি আপিল করেন। আপিলের ওপর ৩ ডিসেম্বর (গত বুধবার) শুনানি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর এবং আজ শুনানি হয়। আদালতে বদিউল আলম মজুমদারসহ চার ব্যক্তির পক্ষে শুরুতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
চার ব্যক্তির আইনজীবীর বক্তব্য উপস্থাপনের পর মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানিতে অংশ নেন। এরপর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।