ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) বিরুদ্ধে প্রতিটি প্রকল্পের বিপরীতে ২৫ শতাংশ নগদ টাকা ঘুষ আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা। এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার উপজেলার ১১টি ইউপির চেয়ারম্যানরা লিখিতভাবে ওই অভিযোগ করেন। পরে ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠন করেন সরিষা ইউপি চেয়ারম্যান একরাম হোসেন ভুঁইয়া।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ঈশ্বরগঞ্জের পিআইও মোহাম্মদ রেজাউল করিম দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রতারণা ও হয়রানি করছেন। তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পরও তাঁদের বিল দিতে গড়িমসি করেন। পরে ঘুষ দাবি করলে তাঁরাসহ (ইউপি চেয়ারম্যানরা) প্রকল্প সভাপতিরা তাঁকে প্রতিটি প্রকল্পের বিপরীতে ২৫ শতাংশ নগদ অর্থ ঘুষ দিতে বাধ্য হন। এ ছাড়া প্রকল্পগুলোতে ভ্যাট ও আয়কর বাধ্যতামূলক না থাকলেও সেটার জন্য তিনি প্রতিটি প্রকল্পের বিল থেকে ১৫ শতাংশ (১০ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আয়কর) টাকা কেটে রেখে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ওই টাকা তিনি জমা দেননি।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কোনো প্রকল্পের বিল জমা দেওয়ার সময় তিনি (পিআইও) একটি নির্দিষ্ট হারে বিল-ভাউচার ও মাস্টাররোল সমন্বয়ের নাম করে প্রতিটি প্রকল্প থেকে তিন হাজার টাকা হারে আদায় করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া তাঁর আচার-আচরণ কর্মকর্তাসুলভ নয়। তিনি সর্বদা উত্তেজিত অবস্থায় থাকেন এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন; যা একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবমাননাকর। এমতাবস্থায় পিআইও রেজাউল করিমের দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রতারণা ও হয়রানির বিষয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফা, উচাখিলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হাসান খান, আঠারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জুবের আলম কবির, মগটুলা ইউপি চেয়ারম্যান মো.

শিহাব উদ্দিন আকন্দ, মাইজবাগ ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পিআইও মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখার বরাদ্দের বিষয়ে আমাকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানদের নিয়ে ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) সভা করে তালিকা তৈরি করে গত বুধবার আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। নীতিমালা অনুযায়ী মিটিং করতে হবে। কিন্তু মিটিং না করেই আমাকে স্বাক্ষর করতে চাপ দিলে আমি দুই দিন সময় চাই প্রকল্পগুলোর বাস্তবতা দেখার জন্য। এতে ইউএনও আমার ওপর গরম হয়ে যান। জেলা প্রশাসকের কাছেও অভিযোগ করেন ইউএনও। সেখানে আমাকে ডাকা হলে জেলা প্রশাসকের কাছেও আমি দুই দিন সময় নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী মাঠে খোঁজ করে দেখি, অনেক ভুয়া প্রকল্প রয়েছে, ত্রুটিবিচ্যুতি রয়েছে। তখন আমি জানিয়েছি, এসব প্রকল্প চলবে না। তখন চেয়ারম্যানরা কিছু প্রকল্প পরিবর্তনও করেন। আমার অপরাধ এতটুকুই।’ ২৫ শতাংশ ঘুষ আদায়ের বিষয়ে বলেন, ‘আমার নামে যা কিছু বলতাছে, তা ভুয়া ও মিথ্যা। আমি এমন কিছু করিনি।’

অন্যদিকে পিআইওর দাবি মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও সানজিদা রহমান বলেন, প্রকল্পগুলোর ৮০ ভাগ চেয়ারম্যানরা দিয়েছিলেন। বাকি ২০ ভাগ তিনি দিয়েছিলেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাও এসেছিলেন। কোনো ভুয়া প্রকল্প পাননি তিনি, সবই ঠিক আছে। চেয়ারম্যানরা দাবি করছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভ্যাট-আয়করের নাম করে টাকা নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে বর্তমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র ব কর মকর ত কর ছ ন প আইও উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ, পরে নিজেই বিপাকে

সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার উদ্দেশে সকালে কক্সবাজারের নুনিয়াছটায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাটে হাজির হয় ১১ পর্যটকের একটি দল। তবে ঘাটে পৌঁছানোর আগেই নির্ধারিত জাহাজ ছেড়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে তাঁরা বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও ঘাটে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে। দলের একজন নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর ঘাটে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে বলেন ইউএনওকে গ্রেপ্তার করতে। যদিও বিষয়টি নিয়ে পরে বিপাকে পড়তে হয় ওই পর্যটক দলের সদস্যদের। আজ শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, বাঁকখালী নদীর জোয়ার–ভাটা একেক সময় একেক রকম। জোয়ার–ভাটা বিবেচনায় নিয়ে জাহাজ ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। ইউএনওর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা ওই পর্যটক ঘাটে এসে জাহাজ দেখতে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

হোসাইন ইসলাম বাহাদুর আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম ইব্রাহিম। তিনি হয়তো ঘাটে থাকা ইউএনওকে চিনতে পারেননি। সাধারণ নারী মনে করে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়েছেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ইউএনওর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে আরেকটি জাহাজে পর্যটকদের ওই দল সেন্ট মার্টিনে যায়।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদরের ইউএনও তানজিলা তাসনিম বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে কেন জাহাজ ছেড়ে গেছে, এ বিষয়টি নিয়ে হট্টগোল শুরু করেন ইব্রাহিম নামের ওই ব্যক্তি। এ সময় নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দাবি করে ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে বলেন, আমাকে গ্রেপ্তার করতে। এ ঘটনার ভিডিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হলেও এভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে বলার এখতিয়ার রাখেন না।’

ইউএনও বলেন, পর্যটকদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নুনিয়াছটায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ে। কয়েকটি জাহাজে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়। জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন যাতে করা না হয়, সে বিষয়টি তদারকি করে ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি।

১ ডিসেম্বর কক্সবাজার–সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে রাত্রী যাপনের সুযোগও রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পর্যটকদের সরকার ঘোষিত ১২টি নির্দেশনা মেনে চলতে হচ্ছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপটি ভ্রমণের সুযোগ থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের হুমকি পর্যটকের
  • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ, পরে নিজেই বিপাকে
  • নবাগত সদর ইউএনও’র সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়
  • বাগমারায় স্নাতকের শিক্ষার্থীকে ‘চিকিৎসক’ বানিয়ে চোখের অস্ত্রোপচারের চেষ্টা, বাবা-ছেলের দণ্ড