রাজনৈতিক প্রচারে বুটেক্স উপাচার্যের অংশগ্রহণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
Published: 28th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) উপাচার্য অধ্যাপক ড. জুলহাস উদ্দিন সম্প্রতি স্থানীয় বিএনপির একটি সভায় অংশ নেন। সেখানে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরবের পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এর আগে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। পরবর্তীতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যরা পদত্যাগ করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর তৎকালীন বুটেক্স উপাচার্য অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
সরকারি স্কুলে ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন
হিজাব নিয়ে মন্তব্য: রাবি অধ্যাপকের শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি
দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন তিনি। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রকাশিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন বা তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। পাশাপাশি উপাচার্য ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়কে সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখার অঙ্গীকার করেন।
সম্প্রতি স্থানীয় রাজনৈতিক সভায় উপস্থিত হয়ে ভোট চাওয়ার ঘটনাটি উপাচার্যের সেই অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একাংশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, উপাচার্য ওই সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন- “নিরব ভাই যদি নির্বাচিত হন, তাহলে আমাদের এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন। সামনেই যেহেতু নির্বাচন, তাই আমাদের বিষয়টি ভাবা উচিৎ।”
এদিকে, দেশের বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিকের এক প্রতিবেদনে সাইফুল আলম নিরবের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজির অভিযোগের খবর পাওয়া গেছে। এ ধরনের অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে ভোট চাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
বুটেক্সের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী লিখেছেন, “ধরা যাক, বুটেক্সের ভিসি স্যার রাজনীতি করবেন—সে ক্ষেত্রে উনি গবেষণাধর্মী রাজনীতি করতে পারেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের রাজনৈতিক ধরণ নিয়ে গবেষণা, জাতীয় পত্রিকায় কলাম লেখা, টকশো করা, দলসমূহকে পরামর্শ দেওয়া কিভাবে জনকল্যাণমূলক রাজনীতি করা যায়- এসব একজন উপাচার্যের সাথে মানানসই। এসব না করে একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজের পক্ষে ভোট চাওয়ায় তার নৈতিক স্খলন ঘটেছে এবং ভিসি পদকে কলুষিত করেছেন।”
তবে শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ ভিন্ন মত পোষণ করে জানিয়েছেন, উপাচার্যের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে এবং তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে যেকোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। তাদের মতে, এতে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সুবিধা হয়, তাহলে উপাচার্যের রাজনীতি করা দোষের কিছু নয়।
ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, “স্থানীয় সভাটি ছিল এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সভা। উপাচার্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে সেখানে অংশগ্রহণ করতেই পারেন। তবে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা দেওয়া ঠিক হয়নি বলে মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে পরিচয় রাখা প্রয়োজন—এটি বিগত ৫০ বছর ধরেই চলে আসছে।”
তিনি আরো বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাকে স্মরণ করলে দেখা যায়—আমাদের দেশের শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতারা কেবল নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবেন। ছেলেরা যখন আন্দোলন করছিল, তখন অল্প কয়েকজন শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কেবল নিজের কথা না ভেবে সবার কথা চিন্তা করতে হবে। তাহলেই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হবে এবং লেজুবৃত্তিক রাজনীতি চর্চা বন্ধ হবে।”
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান বলেন, “একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে, এটা নিয়ে সমালোচনা করার কিছু দেখি না। তবে তিনি যদি নিজেকে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ দাবি করে আবার রাজনীতি করেন, তাহলে সেটা তার নিজের ঘোষিত আদর্শের পরিপন্থি হয়ে যায়।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জুলহাস উদ্দিন বলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক সভায় যায়নি। যে সভার কথা বলা হচ্ছে, সেটি মূলত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল। যেহেতু আমি এই এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে আছি, তাই এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে আমি সভায় গিয়েছিলাম, উপাচার্য হিসেবে যাইনি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের জন্য স্থানীয়দের সহায়তাও প্রয়োজন, এ বিষয়টিও আমাদের মাথায় থাকা দরকার।”
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি প্রবেশ করানোর জন্য একটি মহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাকে একাধিকবার উপর মহল থেকে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি তা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমি বলেছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা না চাইলে ক্যাম্পাসে কখনোই রাজনীতি প্রবেশ করবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি রাজনীতি করতে চায় এবং আমার কাছে এসে বলে, তখন আমি ভেবে দেখব। কিন্তু তা কখনো হবে না, কারণ আমি জানি এখানকার শিক্ষার্থীরা রাজনীতি চায় না।”
ঢাকা/তৌকির/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র উপ চ র য র র র জন ত র জন ত ক আম দ র এল ক র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যানসার, ৩৬ অস্ত্রোপচার—গানে ফেরার গল্প শোনাবেন ‘বেজবাবা’
বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যাঁরা শুধু সংগীতের জন্য নয়—নিজেদের জীবনসংগ্রাম, অনমনীয় মানসিকতা আর সময়ের সঙ্গে লড়াই করেও আলাদা করে স্মরণীয়। সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন তেমনই এক নাম। ভক্ত–শ্রোতাদের কাছে তিনি ‘বেজবাবা সুমন’। অর্থহীন ব্যান্ডের প্রধান ভোকাল ও বেজিস্ট হিসেবে তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা ব্যান্ডসংগীতে নিজের ছাপ রেখে চলেছেন তিনি।
সুমনের সংগীতজীবন যেমন বৈচিত্র্যময়, ব্যক্তিজীবনের গল্পও তেমনি ঘটনাবহুল। স্কুলজীবন শেষ হওয়ার আগেই ব্যান্ডসংগীতের পথে যাত্রা শুরু তাঁর। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে পড়ার সময়ই গিটার ও বেজের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। সেই সময়কার স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর ক্যাসেটের যুগের ব্যান্ডসংগীত—সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে একজন সুমন।
ফিলিংস থেকে ওয়ারফেজ
এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর জীবনের এক মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনার কথা প্রায়ই স্মরণ করেন সুমন। এক বন্ধুর হাত ধরে তিনি পৌঁছে যান জেমসের কাছে। তখন জেমস ব্যস্ত, তবু নতুন একজন ছেলেকে বেজ বাজাতে বলেন। কয়েক মিনিট শুনেই জেমসের সিদ্ধান্ত—ফিলিংসে যোগ দিতে হবে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ফিলিংস ব্যান্ডে বেজিস্ট হিসেবে কাজ করেন সুমন। এই সময়টাই তাঁকে পেশাদার সংগীতজগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।