রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে উচ্ছেদের পর নিরুপায় হয়ে বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নিয়েছে কোল জনগোষ্ঠীর কয়েকটি পরিবার। আজ বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে তাঁদের খোঁজখবর নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা ও সহায়তার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন তিনি।

গত সোমবার বিকেলে উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। আদালতের প্রতিনিধি ও থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। পরিবারগুলোর সদস্যসংখ্যা ১৫ থেকে ২০। উচ্ছেদের পর তারা একটি বাঁশঝাড়ের নিচে রাত যাপন করে।

আজ সকাল সোয়া আটটায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ইউএনও। তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি জমিজমা–সংক্রান্ত কাগজপত্রও দেখেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও ছিলেন মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল ইসলাম, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসিরুল ইসলাম, বাবুডাইং আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে রুমালী হাঁসদা ইউএনওকে বলেন, ‘উচ্ছেদের আগে হামরা দুই ঘণ্টা সময় চাহিয়্যাছিনু বাড়িঘর থাইক্যা জিনিসপত্র বাহির করার লাইগ্যা। কিন্তু হামরাকে কুনু সময় না দিয়্যা ঘরবাড়ি ভাঙচুর করল। হামারঘে হাঁড়িপাতিল, দরজা-জানালা, খাট সব মাটির দেয়ালের লিচে পইড়্যা নষ্ট হয়্যা গেছে। রাঁধা ভাত-তরকারিও হামরা সরাইতে পারিনি। সারা দিন না খায়্যা ছিনু। এ ছাড়া গরু বিক্রি করা টাকাও ছিল ঘরে। সেটাও বাহির করতে পারিনি। আইজ পর্যন্তও খুঁইজ্যা পাইনি। আশ্রয় লিয়্যাছি বাঁশঝাড়ের তলে। মশার কামড়ে ঘুম আসে না।’

আরও পড়ুনচাঁপাইনবাবগঞ্জে উচ্ছেদের পর বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নিল কোল জনগোষ্ঠীর ৫ পরিবার১৮ ঘণ্টা আগে

রুমালী হাঁসদার দাবি, ‘হামরা খাসজাগা মনে কর্যা এখান বাস করছিনু। ২৫ থেকে ৩০ বছর থাইক্যা বাস করছি। পরে শুন্যাছি, এ জমিগালা হামারঘে জাত-ভাইদের ছিল। এ গাঁয়ের চরণ সাইচুরির (মাঝি) বাবা-জ্যাঠাদের (তিলক মাঝি, দিনু মাঝি, ভাদু মাঝি) নামে এ জমিটা রেকর্ড আছে। ওরাকে হিন্দু সাজিয়্যা জমি রেজিস্ট্রি লিয়্যাছে মকবুল হোসেন নামের এক লোক। মকবুল হোসেনের ওয়ারিশরা হামারঘে বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী সহকারী জজ আদালতে মামলা কর্যাছে। হামরা গরিব মানুষ। ঠিকমতন মামলার তদবির করতে পারিনি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ, পরে নিজেই বিপাকে

সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার উদ্দেশে সকালে কক্সবাজারের নুনিয়াছটায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাটে হাজির হয় ১১ পর্যটকের একটি দল। তবে ঘাটে পৌঁছানোর আগেই নির্ধারিত জাহাজ ছেড়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে তাঁরা বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও ঘাটে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে। দলের একজন নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর ঘাটে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে বলেন ইউএনওকে গ্রেপ্তার করতে। যদিও বিষয়টি নিয়ে পরে বিপাকে পড়তে হয় ওই পর্যটক দলের সদস্যদের। আজ শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাহাজমালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, বাঁকখালী নদীর জোয়ার–ভাটা একেক সময় একেক রকম। জোয়ার–ভাটা বিবেচনায় নিয়ে জাহাজ ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। ইউএনওর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা ওই পর্যটক ঘাটে এসে জাহাজ দেখতে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

হোসাইন ইসলাম বাহাদুর আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম ইব্রাহিম। তিনি হয়তো ঘাটে থাকা ইউএনওকে চিনতে পারেননি। সাধারণ নারী মনে করে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়েছেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ইউএনওর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে আরেকটি জাহাজে পর্যটকদের ওই দল সেন্ট মার্টিনে যায়।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদরের ইউএনও তানজিলা তাসনিম বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে কেন জাহাজ ছেড়ে গেছে, এ বিষয়টি নিয়ে হট্টগোল শুরু করেন ইব্রাহিম নামের ওই ব্যক্তি। এ সময় নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দাবি করে ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে বলেন, আমাকে গ্রেপ্তার করতে। এ ঘটনার ভিডিও সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হলেও এভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে বলার এখতিয়ার রাখেন না।’

ইউএনও বলেন, পর্যটকদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নুনিয়াছটায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ে। কয়েকটি জাহাজে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ রাখা হয়। জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন যাতে করা না হয়, সে বিষয়টি তদারকি করে ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি।

১ ডিসেম্বর কক্সবাজার–সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে রাত্রী যাপনের সুযোগও রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পর্যটকদের সরকার ঘোষিত ১২টি নির্দেশনা মেনে চলতে হচ্ছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপটি ভ্রমণের সুযোগ থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের হুমকি পর্যটকের
  • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ, পরে নিজেই বিপাকে
  • নবাগত সদর ইউএনও’র সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়
  • বাগমারায় স্নাতকের শিক্ষার্থীকে ‘চিকিৎসক’ বানিয়ে চোখের অস্ত্রোপচারের চেষ্টা, বাবা-ছেলের দণ্ড