টেকনাফে ঘরের দরজা ভেঙে স্থানীয় বাসিন্দাকে অপহরণ করেছে রোহিঙ্গারা
Published: 21st, November 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম লেদা এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-সংলগ্ন একটি ঘরে হামলা চালিয়ে নুরুল ইসলাম (৫০) নামের এক স্থানীয় ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গারা।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে এ হামলা হয়। অপহৃত নুরুল ইসলাম পশ্চিম লেদা এলাকার শামশু আলমের ছেলে।
আরো পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব গৃহীত
টেকনাফে অস্ত্রসহ ৩ রোহিঙ্গা ডাকাত আটক
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতে হঠাৎ একদল রোহিঙ্গা ভারী অস্ত্র নিয়ে নুরুল ইসলামের বাড়ি ঘিরে ফেলে। দরজা বন্ধ পেয়ে প্রথমে তারা বাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে ঘরের চাল ভেঙে ভেতরে ঢুকে তারা। দরজা ভেঙে নুরুল ইসলামকে টেনে-হিঁচড়ে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা এ সময় বাড়ির সদস্যদের ওপর মারধর চালায় এবং মূল্যবান মালামাল লুট করে।
অপহৃতের ছেলে কামাল হোসেন বলেছেন, “হঠাৎ সন্ত্রাসীরা আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। তারা চাল ভেঙে ঘরে ঢুকে বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের হাতে ভারী অস্ত্র ছিল। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া গুলির খোসা দেখে মনে হয়েছে, বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।”
তিনি দ্রুত তার বাবাকে উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, হামলার শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। তারা দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও এলাকায় টহল জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।
টেকনাফ ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লেদা ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম রাজু জানান, হামলার খবর জানার পরপরই তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে ৬১ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।
তিনি বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে, ক্যাম্প-সংলগ্ন পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ মিলে নুরুল ইসলামকে অপহরণ করেছে। তাকে উদ্ধারে পাহাড়ে অভিযান চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।”
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো যেন অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে এপিবিএন সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছেন বাহিনীর ওই কর্মকর্তা।
ঢাকা/তারেকুর/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপহরণ ন র ল ইসল ম সন ত র স
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি আরবে অপহরণ করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়, মাগুরা থেকে একজন গ্রেপ্তার
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী মো. রাসেলকে আটকে রেখে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে পাঁচ দিন পর গত ১৭ জানুয়ারি সেখানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি রিয়াদে ব্যবসা করতেন। অপহরণে জড়িত অভিযোগে গতকাল বুধবার মাগুরা থেকে অপহরণকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বুধবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। আগে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সিআইডির গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সকালে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে রাসেলকে সৌদি আরবের রিয়াদ শহর থেকে অপহরণ করে। পরে রাসেলের বড় ভাই ঢাকার বাড্ডার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের কাছে একটি ইমো আইডি থেকে ও ভিওআইপির মাধ্যমে ফোন করে রাসেলের জন্য ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা দেওয়া না হলে রাসেলের ক্ষতি করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। অপহরণকারীরা মুক্তিপণের অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের কয়েকটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নম্বর এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বর দেয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাইফুলসহ স্বজনেরা উপায়ন্তর না পেয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। সাইফুল ইসলাম খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকা থেকে বিভিন্ন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের নম্বরে ধাপে ধাপে ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং অপহরণকারীদের দেওয়া ব্যাংক হিসাবে মোট ২৫ লাখ টাকা পাঠান। মোট ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ পেয়ে রাসেলকে ১৭ জানুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। চলে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা রাসেলের হাতের ছাপ এবং আকামা আইডি নিজেদের হেফাজতে নেয়। অপহরণের ঘটনা ফাঁস হলে রাসেলকে খুন করা হবে বলে ভয়ভীতি দেখান অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। পরে রিয়াদের স্থানীয়দের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে গিয়ে রাসেল পরিবারকে সব খুলে বলেন। রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে থাকছেন এবং সেখানে ব্যবসা করছেন। গত ২১ জানুয়ারি রাসেলের শ্বশুর বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলার তদন্তে জানা যায়, অপহরণকারীরা যেসব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নম্বর ও ব্যাংকের হিসাব নম্বর অপহৃতের স্বজনদের দিয়েছিল, সেগুলোর তথ্যাদি পর্যালোচনা করে মো. জিয়াউর রহমান (৪২) নামের একজনের তথ্য পায় সিআইডি। গ্রেপ্তার জিয়াউর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি কর্মকর্তাদের বলেছেন, সৌদি আরবে অবস্থানরত অপহরণকারীদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে এই কাজে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিপণ হিসেবে নেওয়া টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পেয়েছেন তিনি।
সিআইডির কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, মামলাটি বর্তমানে সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে। গ্রেপ্তার জিয়াউর রহমানকে রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।