কে জানত বাবার সঙ্গে নাফিজের এটাই শেষ বেড়ানো
Published: 10th, January 2025 GMT
দুই মাস আগে দেশে আসেন ওমানপ্রবাসী। সপ্তাহখানেক পর ফিরে যাবেন। তাই দুই ছেলেকে মোটরসাইকেলে নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছিলেন। তবে বাড়িতে ফেরার সময় মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক। এতে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয় ১২ বছর বয়সী এক ছেলের।
আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় পিএবি সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম নাফিজ উদ্দিন (১২)। সে পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের কৈয়গ্রামের হাজীপাড়া এলাকার ওমানপ্রবাসী নেজাম উদ্দিনের ছেলে।
একই দুর্ঘটনায় নাফিজের আরেক ভাই নাহিদুল ইসলাম (৭) ও বাবা নেজাম উদ্দিন আহত হয়েছেন। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিহত নাফিজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাকা ঘরের সামনে চেয়ার পেতে রাখা হয়েছে। আত্মীয়স্বজনেরা দলে দলে বাড়িতে আসছেন। তবে তখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে লাশ আনা হয়নি। স্বজনেরা লাশ কখন আনা হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওমানে ফিরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে, তাই তড়িঘড়ি করে গত শনিবার দুই ছেলের খতনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নেজাম উদ্দিন। ওই দুই ছেলেকে নিয়ে গতকাল আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকত ও টানেল রোড দেখতে বের হয়েছিলেন। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় এক ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আট বছর আগে পানিতে ডুবে নেজাম উদ্দিনের এক মেয়ের মৃত্যু হয় বলেও জানান বাসিন্দারা।
নিহত নাফিজের চাচাতো ভাই তানভীর ইসলাম বলেন, শনিবার পুরো পাড়ার লোকজন নিয়ে নাফিজ ও নাহিদের খতনা অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এক সপ্তাহ না যেতেই একজনের মৃত্যু হলো। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো.
কর্ণফুলী থানার শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল গফুর বলেন, দুই ছেলে ও তাদের বাবা মোটরসাইকেলে ছিলেন। ইউটার্ন নেওয়ার সময় ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেলের পেছনে বসা এক ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি খেলোয়াড়, দেশি খেলোয়াড় চিন্তা করে বাংলাদেশ জিততে পারবে না—বললেন শমিত
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের লড়াই সামনে। মঙ্গলবার রাত আটটায় জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। ম্যাচ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুই দলের লড়াই ঘিরে উত্তেজনাও বাড়ছে।
ভারত ফুটবল দল আজ বিকেলে ঢাকায় নেমেছে, লক্ষ্য—বাংলাদেশকে হারানো। অন্যদিকে বাংলাদেশও হারাতে মরিয়া ভারতকে। সেই ২০০৩ সালে ঢাকা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে সর্বশেষ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার লক্ষ্য ২২ বছরের জয়খরা কাটানো।
১৩ নভেম্বর নেপালের বিপক্ষে শেষ দিকে গোল হজম করে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়েছে (২–২)। সেই ড্রয়ের হতাশা যেন ভারত ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের তৃঞ্চা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ বিকেলে দলের অনুশীলন শুরুর আগে মিডফিল্ডার শমিত সোমের সংবাদ সম্মেলনে যা ফুটে উঠেছে।
জুনে লাল–সবুজ জার্সি গায়ে চাপানোর পর এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচ খেলেছেন শমিত, তবে জয়ের দেখা পাননি। নিজের ৫ম ম্যাচে জয়ের জন্য কতটা মুখিয়ে আছেন কানাডাপ্রবাসী ফুটবলার, তা বোঝাতে গিয়ে শমিত বলেন, ‘আমি আসার পরে এখনো জিতিনি। আমি ও পুরো দল (উপায়) খুঁজছি, কীভাবে ভারত ম্যাচটা জিততে পারি।’
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ দলে কেমন উন্নতি দেখলেন প্রশ্নে শমিতের উত্তর, ‘চার–পাঁচ মাসে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা টিম স্পিরিট, টিম পাসিং, ম্যাচের কন্ট্রোল...এসব অনেক বেড়েছে। এখন মূল জিনিস হলো জিততে হবে।’
শমিত বলেন, ‘ভারত ভালো দল। আমরাও ভালো দল। এই ম্যাচটার অনেক অর্থ আছে। লড়াই হবে। আমরা তৈরি থাকব, আশা করি, জিততে পারব। চেষ্টা থাকবে যেন ভালো খেলতে পারি, ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারি।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘২২ বছর বোধ হয় জিতি না ওদের সঙ্গে। আমরা জানি, এই ম্যাচ জিততে হবে এবং জিতব।’
নেপাল ম্যাচের আগে হংকং ম্যাচেও শেষ সময়ে গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। কেন এমন হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে শমিত বলেন, ‘ফুটবলে এগুলো হয়। কিছুটা ভাগ্যও দরকার। নেপালের শেষ সময়ে ওই কর্নার কিক...ওটা আসলে মনে হয় অফসাইডও ছিল। জানি না, কী কারণে এগুলো হচ্ছে। তবে আশা করি, আমরা ওই ভাগ্যটা পাশে পাব, যাতে এভাবে গোল না খাই।’
তাঁর কথায়, ‘মূল বিষয় আমাদের মনোযোগী থাকতে হবে শেষ মিনিট পর্যন্ত। আমাদের একটু মনোযোগ বাড়াতে হবে। আর তৈরি থাকতে হবে। আমরা যে সর্বশেষ তিন–চার–পাঁচ ম্যাচে খেলেছি, বেশির ভাগে আমরা লিডিং পজিশনে ছিলাম। প্রতিপক্ষের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে আরও শক্ত হতে হবে। এগুলো আমরা এখনো শিখিনি। আস্তে আস্তে আরও শিখব এবং অভিজ্ঞতা পাব। আর জিততে পারব।’
বাংলাদেশ দলে এখন সাতজন প্রবাসী ফুটবলার। তাঁদের উপস্থিতি দলের শক্তি বাড়িয়েছে। ঘুরেফিরে দেশি-বিদেশি প্রসঙ্গ আলোচনায় আসছে। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শমিত বলেন,‘ আমাদের টিম ১১ জনের। দেশি–বিদেশি কোনো বিষয় নয়। আমাদের সবার একসঙ্গে থাকতে হবে যেন ম্যাচটা কীভাবে জিততে পারি। আমরা কোনো দিন চিন্তা করিনি যে বিদেশি খেলোয়াড়, দেশি খেলোয়াড়...ওভাবে তো বাংলাদেশ জিততে পারবে না। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। ওভাবে আমি চিন্তা করি না। এটা করা যায় না।’
বাংলাদেশের ফুটবলে কোচ হাভিয়ের কাবরেরাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনামুখর অনেকেই। হামজা-শমিতদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশের জন্য হাভিয়ের কাবরেরা উপযুক্ত কোচ কি না, এই প্রশ্ন অনেকের।
এ নিয়ে প্রশ্ন হলে শমিত দাঁড়িয়েছেন কোচের পাশেই, ‘কোচ তো আমাদের টিমের জন্য খুব ভালো। আমি এখানে এসে দেখছি যে সবকিছু মোটামুটি ভালো স্ট্যান্ডার্ডে রেখেছেন কোচ। কোচের মনোভাব এবং পরিকল্পনা ভালো। আমরা কোচকে বিশ্বাস করি। তিনি দলকে খেলাবেন, ট্যাকটিকস সাজাবেন। আমরা যদি তা মাঠে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে জিততে পারব।’