খেয়াল করলে দেখবেন, ক্যানসারে অনেক রোগীর ওজন কমে যায়, অর্থাৎ তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য দেহে যে স্বাভাবিক চর্বি থাকা প্রয়োজন, সেটিও থাকে না তাঁদের। তাই অন্যদের চেয়ে বেশি শীত অনুভব করেন তাঁরা। অনেকের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও কমে যায়। এ রকম অবস্থায়ও শীত বেশি অনুভূত হয়। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে কখনো একজনের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একেবারেই কমে যেতে পারে। তখন বাড়ে সংক্রমণের ঝুঁকি। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, সর্দি ছাড়াও হতে পারে নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রোগ। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে ক্যানসার রোগী ও তাঁর পরিবারের কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। জানাচ্ছেন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ক্যানসার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.

তুষার দাস

খাবারদাবারে সতর্কতা

ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই টাটকা খাবার খাওয়া উচিত। বাসি খাবারে সহজেই ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মাতে পারে। এটা ঠিক যে শীতে খাবার সহজে নষ্ট হয় না। কিন্তু এমনটাও ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই যে শীতে বাসি খাবার পুরোপুরি নিরাপদ। রোজ তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে অবশ্যই। তবে পাতলা খোসাযুক্ত ফল এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।

চাই উষ্ণতা

ক্যানসার রোগীর যাতে ঠান্ডা না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। খাওয়ার জন্য উষ্ণ পানি ভালো। রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে হালকা গরম অবস্থাতেই। হাতমুখ ধোয়া, অজু, গোসল প্রভৃতির জন্য উষ্ণ পানির ব্যবস্থা রাখুন। পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরা আবশ্যক। একাধিক স্তরের হালকা পোশাক পরা যেতে পারে, যাতে প্রয়োজনে বাইরের স্তরের পোশাক খুলে রাখা যায়। মোজা, হাতমোজা, কানটুপি বা মাফলারের মতো ছোটখাটো অনুষঙ্গের ব্যবস্থাও রাখুন।

সুস্থ থাকতে আরও যা

নিয়মমাফিক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

অপরিষ্কার হাতে খাওয়া যাবে না। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা যাবে না। খাবার রান্না ও পরিবেশনের ক্ষেত্রেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

সম্ভব হলে খানিকটা সময় শরীরচর্চা করতে হবে।

ক্যানসারের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়ে গেলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।

ক্যানসার রোগীর ক্ষেত্রে ঠান্ডা-কাশির মতো ছোটখাটো উপসর্গ অবহেলা করতে নেই। এ রকম ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যক।

আরও পড়ুন শীতে যাঁদের বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন১২ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ