মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক, দেখা করতে গিয়ে বান্ধবীসহ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার
Published: 14th, January 2025 GMT
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এক যুবকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এক তরুণী ও তাঁর বান্ধবী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার মধ্যরাতে নাঙ্গলকোট থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী তরুণীদের একজন। এতে ওই যুবকসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ৯ জানুয়ারি দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের সেবাখোলা বাজারে খোকন মিয়ার করাতকলের দোকানঘরের ভেতরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
মামলার প্রধান আসামি শহীদুল ইসলাম উপজেলার নুরপুর গ্রামের বাসিন্দা । এ ছাড়া করাতকলের মালিক খোকন মিয়াকে ২ নম্বর আসামি এবং মো.
মো. মহসিন বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের রঞ্জু মিয়ার ছেলে। তিনি বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের যুবদল নেতা হিসেবে পরিচিত। গতকাল ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকায় নেই। তাঁর মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল রাতে নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহসিন নামের ওই ব্যক্তি যুবদলের রাজনীতি করেন বলে আমার জানা নেই। আমি এখন ঢাকায় আছি, এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি এ ঘটনায় যুবদলের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত থাকেন, তাহলে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
আজ মঙ্গলবার সকালে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার চার দিন পর গতকাল রাতে এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি আগেই জানাজানি হওয়ায় আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাঁদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী পরস্পরের বান্ধবী। একজনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর, আরেকজনের বাড়ি চাঁদপুর। কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ এলাকার একটি মেসে তাঁরা ভাড়া থাকেন এবং গৃহকর্মীর কাজ করেন। নাঙ্গলকোটের নুরপুর গ্রামের শহীদুল ইসলামের সঙ্গে তাঁদের একজনের মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৯ জানুয়ারি তাঁরা শহীদুলের সঙ্গে দেখা করতে যান। সাতজনের একটি দল তাঁদের দুজনকে তুলে নিয়ে সেবাখোলা বাজারে খোকন মিয়ার স মিলে নিয়ে যান। যুবদল নেতা মহসিনের নেতৃত্বে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দলবদ্ধভাবে তাঁদের ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে রাখে। বিষয়টি কাউকে জানালে ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর করাতকলের মালিক খোকন মিয়া এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে মহসিনের বাবা রঞ্জু মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে যুবদলের রাজনীতি করে। এ জন্য একটি গ্রুপ আমার ছেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করা হয়েছিল। এখন মেয়ে দিয়ে আমার ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’
ওসি এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে অপরাধীর পরিচয় অপরাধী। থানায় মামলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।