বেপরোয়া গাড়ি জন্মদিনেই কাড়ল শিশু সাদিবের প্রাণ
Published: 24th, January 2025 GMT
পাবনার সাঁথিয়ায় বেপরোয়া গতির অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ গেছে স্কুলছাত্র সাদিবের (৮)। এদিন ছিল তার জন্মদিন। মা-বাবা প্রিয় সন্তানের জন্মদিন পালনের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছিলেন। কিন্তু জন্মদিন পালন করা হলো না। নাটোরের গুরুদাসপুরে দু’জন এবং রাজধানীর ডেমরা, চট্টগ্রামের মিরসরাই, গোপালগঞ্জ সদর, ঝালকাঠির নলছিটি ও রাজবাড়ীর পাংশায় একজন করে নিহত হয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার ছিল সাদিবের (৮) জন্মদিন। এ উপলক্ষে বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন মা-বাবা। কিন্তু কে জানত জন্মদিনেই সে চলে যাবে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে! রাস্তা পার হওয়ার সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ গেছে তার। পাবনার সাঁথিয়ার আফড়া শামুকজানি বাজার এলাকায় গতকাল দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে অটোরিকশায় থাকা ছয়জন আহত হয়েছেন।
সাদিব উপজেলার করমজা ইউনিয়নের আফড়া নদীশুকা গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে ও স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দুর্ঘটনায় অটোরিকশাচালক মাহতাব উদ্দিন গুরুতর আহত হয়েছেন। সাঁথিয়ার লক্ষ্মীপুর গ্রামে তার বাড়ি। সাঁথিয়া থেকে তিনি যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পথে সাঁথিয়া-পন্ডুরিয়া সড়কে দুর্ঘটনায় পড়েন। সাদিব হঠাৎ সড়কে এসে পড়লে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারান মাহতাব। এতে জোরে ধাক্কা লাগায় গুরুতর আহত হয় সাদিব। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। সাদিবের বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দিনটি সাদিবের জন্মদিন। এদিনই সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। এর চেয়ে দুঃখের ঘটনা আর কী হতে পারে! এ ছাড়া ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের গোকুল নগর এলাকায় গতকাল ভোরে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসতঘরে উঠে যায়। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
রাজধানীর ডেমরায় দুই কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে মো.
গোপালগঞ্জে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেল চালক ইউসুফ খান (২৫) নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। ইউসুফ গোপালগঞ্জ সদরের চন্দ্রদিঘলিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের ফারুক খানের ছেলে।
যশোর থেকে কুয়াকাটায় পিকনিকে যাওয়ার পথে ঝালকাঠির নলছিটিতে রাস্তা পার হওয়ার সময় আসাদুজ্জামান আসাদ (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে ঝালকাঠি-বরিশাল সড়কের ভৈরবপাশা ইউনিয়নের প্রতাপ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রাজবাড়ীর পাংশায় গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লেগে রাসেল মণ্ডল (১৭) নামে এক কিশোর নিহত ও আহত হয়েছেন দু’জন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার যশাই ইউনিয়নের উদয়পুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার হাটিকুমরুল এলাকার সড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে কাছিকাটা ১০ নম্বর সেতু এলাকায় গাড়িচাপায় একজন (অজ্ঞাত) ও সকালে নয়াবাজার এলাকায় দুই ট্রাকের সংঘর্ষে শাহিন আলম নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের মিসরাইয়ে পিকনিকের বাসচাপায় একজন নিহত ও ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি মানসিক প্রতিবন্ধী। গতকাল সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিঠাছড়া বাজারের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লোকটি রাস্তা পার হচ্ছিলেন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন এ দ র ঘটন র এল ক য় গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।