বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ইন্টারনেটের এই যুগে আমরা স্মার্টফোনের গেম খেলতে খেলতে সত্যিকারের খেলা প্রায় ভুলতেই বসেছি। কিন্তু খেলাধুলা করা দেহের জন্য যেমন দরকারি তেমনি মনের সুস্থতায়ও উপকারী। আর হ্যাঁ, খেলাধুলা শুধু ছোট বাচ্চাদের জন্য না, বড়দের জন্যও অনেক দরকার।

তিনি বলেন, ছোট বাচ্চাদের খেলার উপকারিতা শেখাতে গিয়ে নিজের ব্যাপারটাও ভুলে যাবেন না। ঘর ও কাজের মাঝে প্রতিদিন ৩০ মিনিট সময় বের করুন খেলার জন্য, পরিবারের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন এই ব্যাপারে। আর অবশ্যই একে বাধ্যবাধকতা না মনে করে খেলাকে শখ হিসেবে গ্রহণ করুন, পরিবারের সঙ্গে খেললে পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে সেই সঙ্গে সময়টাও আনন্দে কাটবে।

শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির শাহনগরে প্রগতি সংঘ আয়োজিত ‌শফিউল আজম স্মৃতি প্রগতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষা এমন একটি মাধ্যম, যার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক পরিপূর্ণতা, সুস্থতা ও বিকাশ সাধন সম্ভব। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলার মাঠ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। খেলাধুলার প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। অথচ বুদ্ধির বিকাশে লেখাপড়ার পাশাপাশি ভূমিকা রাখে খেলাধুলা। খেলাধুলা শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক বিকাশসহ বিভিন্ন উপায়ে শিখতে এবং বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। খেলাধুলা শিশুর সৃজনশীলতা ও কল্পনা বিকাশেও সহায়তা করে।

খেলাধুলা শুধু শারীরিক কার্যকলাপ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি একটি উন্নত শিল্পও বটে। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে। সুস্থ দেহ ও মন কাজের প্রতি আগ্রহ এবং কাজের গতি বাড়ায়। খেলাধুলার মাধ্যমে একজন মানুষ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভের পাশাপাশি ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও নেতৃত্বের গুণ অর্জন করে। কিন্তু আমাদের দেশে খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় বর্তমান প্রজন্ম শারীরিকভাবে দুর্বল হয় এবং মানসিকভাবে বিষণ্নতায় ভোগে, বিপথগামী ও মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে এবং নিজেদের কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত করে। আবার অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়।

তিনি বলেন, দেশ ও জাতিগঠনে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার স্তরগুলোয় খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। তা না হলে বছরে দুই-চারটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শারীরিক শিক্ষার প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা অবহেলিত, উপেক্ষিত, বিশেষ করে কলেজ পর্যায়ে। কলেজ পর্যায়ে শুধু শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলাই অবহেলিত নয়, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকরাও চরমভাবে অবহেলিত। কলেজ পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা বিষয়টি চালুর মাধ্যমে এ বিষয়ের শিক্ষকদের প্রভাষক পদমর্যাদায় উন্নীত করে তাদের মেধা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটনোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, মেধা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানো সম্ভব। আর এর ইতিবাচক ফল ভোগ করবে সমগ্র জাতি। 

তিনি আরও বলেন, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা আগামী দিনে একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, দক্ষ এবং অর্থনৈতিকসমৃদ্ধ দেশ গঠন করতে পারব।

প্যানেল চেয়ারম্যান সারোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক মোস্তফা কামরুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জহির আজম চৌধুরী, অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিন, এম মোরশেদ হাজারী, সৈয়দ জাহেদ কুরেশী, মুন্সী আকতার হোসেন, মাহবুবুল আলম, নাছির উদ্দিন, মোস্তফা কামাল, ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, ওসমান তাহের সম্রাট, নাসির শিকদার, আমিন তালুকদার প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ টবল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ