সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ আজ থেকে ৯ মাস বন্ধ
Published: 1st, February 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে আজ শনিবার থেকে ৯ মাস কোনো পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন না। বন্ধ থাকবে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও। সরকারি বিধিনিষেধের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
পর্যটক যাতায়াত বন্ধের পর সেন্টমার্টিন নিয়ে কী পরিকল্পনা করা হচ্ছে– জানতে চাইলে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকার সময়ে দ্বীপটি সুরক্ষায় মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর। এই কর্মসূচিতে দ্বীপটিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে প্লাস্টিক বোতলসহ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে অভিযান চালানো হবে। এর বাইরে পর্যটক নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রয়েছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও। একই সময়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করবে প্রশাসন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, শনিবার থেকে কেউ সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন কিনা, সে বিষয়ে নজরদারি করা হবে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে দ্বীপটির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে মিটিং ডাকা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শুক্রবার পর্যন্ত গত দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল– নভেম্বর মাসে পর্যটকরা দ্বীপটিতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়।
এদিকে জুন, জুলাই, আগস্ট– এই তিন মাসে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় পর্যটক ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা সেন্টমার্টিনে তেমন যান না। এই সময়ে প্রভাবশালীরা দ্বীপের ভ্রমণ নিষিদ্ধ এলাকায় রিসোর্টসহ নানা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে আসছেন। এসব স্থাপনায় ব্যবহৃত হয় সৈকত থেকে তুলে আনা পাথর। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এবার যাতে পর্যটক না থাকার সময়ে কেউ এ ধরনের স্থাপনা তৈরি করতে না পারেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে ২৩০টি হোটেল-রিসোর্ট-কটেজ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। পর্যটন বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপের মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যটক কমায় দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, দ্বীপ সুরক্ষায় মাসব্যাপী যে কর্মসূচি, তা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় লোকজনের বিকল্প জীবিকার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন টম র ট ন পর ব শ র সময় ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়কে পাকা কলার বাজার, ক্রেতারা সবাই পর্যটক
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফের দিকে যাতায়াতের সময় রাস্তার পাশে দেখা যায় রাশি রাশি কলার ছড়ি। গাড়ি থামিয়ে বাজার থেকে কলা কেনেন পর্যটকেরা। উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের রূপপতী গ্রামের টেকব্রিজ এলাকায় সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে পাকা কলা বেচাবিক্রি।
গত রোববার সকালে কলার বাজারে নেমে দেখা গেল, বাঁশের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ৪০-৪৫টি পাকা কলার ছড়া। প্রতিটি ছড়াতে ৫০ থেকে ১২০টি কলা আছে। প্রতিটি কলা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়। পাহাড়ে চাকমা সম্প্রদায়ের চাষিদের কলার বাগান রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী সেখান থেকে গাছে পাকা ফলমূল কিনে মেরিন ড্রাইভের বাজারে বিক্রি করেন। পর্যটকেরা পাকা কলা কিনে বাজারেই খেয়ে নেন, কেউ কেউ কলার ছড়া কিনে নিয়ে রওনা হন গন্তব্যে।
ঢাকার ধানমন্ডির ঠিকাদার সালাহ উদ্দিন (৪৮) বাজার থেকে ২১৫ টাকায় কিনেছেন একটি কলার ছড়া। ছড়াতে কলা আছে ৪৩টি। সালাহ উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরে বাংলা কলা খুব একটা পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও প্রতিটির দাম ১০-১২ টাকা। কক্সবাজার শহরেও প্রতিটি বাংলা কলার দাম ১২ টাকা। অথচ এখানে পাঁচ টাকা। তা–ও গাছ পাকা। সড়কের অন্য কোথাও পাকা কলা বিক্রির এ রকম বাজার চোখে পড়ে না।
দেখা গেছে, পাহাড় থেকে লোকজন পাকা কলার ছড়া কাঁধে নিয়ে বাজারের দিকে আসছেন। বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০০ ছড়া কলা বিক্রি হয় এ বাজারে। চাহিদা অনুযায়ী গাছ থেকে ছড়া কাটা হয়। পর্যটকের সমাগম বাড়লে কলা বিক্রিও বেড়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, সাত বছর আগে রূপপতী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেনের বাড়িতে একসঙ্গে চারটি গাছের বাংলা কলা পেকে যায়। এত কলা খাওয়ার লোক ঘরে নেই। উপায় না দেখে তিনটি কলার ছড়া বাড়ির পাশের মেরিন ড্রাইভের টেকব্রিজে নিয়ে আসেন। কলাগুলো সড়কের পাশে রেখে দাঁড়িয়ে থাকেন আবুল হোসেন। পর্যটকেরা পাকা কলা দেখে গাড়ি থামান। দুই ঘণ্টায় সব কলা বিক্রি হয়ে যায়। এর পর থেকে আবুল হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে পাকা কলা কিনে মেরিন ড্রাইভ সড়কে এনে বেচাবিক্রি শুরু করেন। তিন মাসের মাথায় বাজারে কলা বিক্রি শুরু করেন আরেক কৃষক আবদুল নবী। এখন বাজারে কলা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৪।
বাজারে কথা হয় মো. সেলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেরিন ড্রাইভের কয়েকটি স্থানে ডাব বিক্রি হয়। কিন্তু বাংলা কলা কোথাও বিক্রি হয় না। বাংলা কলা সব জায়গাতে পাওয়াও যায় না। রূপপতী, চেইনছড়ির পাহাড়ে চাকমাদের বসতি। সেখানে তাঁরা বাংলা কলার চাষ করেন। কলার বাজারটি চালুর পর গ্রামের পরিচিতিও দ্রুত বাড়তে থাকে। দিন দিন কলার চাহিদাও বাড়ছে।
রূপপতী গ্রামের স্কুলছাত্রী সেনুয়ারা বেগম বাজারে নিয়ে এসেছে তিনটি কলার ছড়া। সঙ্গে কিছু থোড়, ঢেঁকিশাক ও অন্য ফলমূল। সে বলে, তার বাবা দিন মজুর। সেনুয়ারা সোনারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের স্কুলে যাতায়াতে খরচ লাগে ৬০ টাকা। এ টাকা বাবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। লেখাপড়া যেন মাঝপথে বন্ধ হয়ে না যায়, সে জন্য কলার ব্যবসায় নেমেছে সে। যা আয় হয়, তা দিয়ে লেখাপড়া খরচ চলে যাচ্ছে।