প্রথমবারের মতো বইমেলার আয়োজন করছে রাবি প্রশাসন
Published: 4th, February 2025 GMT
প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হতে যাচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী একুশে বইমেলা। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যাপক মজুমদার জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হবে। তবে এটি ২৩ বা ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে কিনা, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অনুষ্ঠিত এ মেলায় ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের স্বনামধন্য প্রকাশনীগুলো অংশগ্রহণ করবে।
এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মেহেদী সজিব ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামে এক ফেসবুক গ্রুপে বইমেলা আয়োজনের প্রস্তাব দেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, “পরিবর্তিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা বেড়েছে। এবারের ফেব্রুয়ারি বেশ প্রাণবন্ত, চারদিকে বইমেলার আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে প্রশাসনের পরিকল্পিত উদ্যোগ থাকলে ফেব্রুয়ারিকে আরও সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব হতো। অন্তত একটি বইমেলা আয়োজন করা যেত।”
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ সমন্বয়ক বলেন, “প্রতি বছর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাধিক বই প্রকাশিত হয়। একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করেও নতুন বই আসছে। প্রশাসন যদি তাদের অনুপ্রাণিত করে, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো লেখক ও পাঠক তৈরি সম্ভব।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
২০ লাখ টাকার পিচে ঘাসের হাসি
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা ক্রিকেট পিচ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। বাজেট বাড়লেও মাটি ভরাটের অভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ায় খেলার সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় মাঠে পিচের এক পাশে পড়ে আছে মাটি সমান করার রোলার। কৃত্রিমভাবে লাগানো উন্নতমানের ঘাসগুলো হলুদ হয়ে আছে। উঠেছে বিভিন্ন ধরনের আগাছাও। আশপাশের মাটি থেকে উঁচুতে পিচ হওয়ায় খেলার সুযোগ নেই। মাঠের একপাশে শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলতে দেখা গেলেও ক্রিকেট থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন্দ্রীয় মাঠ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এতে মাঠের চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ক্রিকেট প্র্যাকটিস নেট ও ক্রিকেট মাঠ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু শুরু থেকেই নিম্নমানের কাজের অভিযোগ ওঠে। মান খারাপ হওয়ায় প্র্যাকটিস নেট ও ক্রিকেট পিচ প্রথমবারের পর আবার পুনরায় তৈরি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ক্রিকেট পিচ তৈরির জন্য প্রথমবার বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭৭ হাজার ২৮৮ টাকা। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় পরবর্তীতে ক্রিকেট পিচ তৈরির বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসে বিগত প্রশাসন। নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০ লাখ ১৮ হাজার ১৬৮ টাকা। এর মধ্যে নলকূপ স্থাপন, কৃত্রিম ঘাস লাগানো, মাটি ভরাট, জিট্যাক্সটাইল ফ্যাব্রিক্সসহ উন্নত মানের বিভিন্ন উপকরণ স্থাপন করা হয়। শুধু কৃত্রিম টার্ফ ঘাস লাগাতেই ব্যয় করা হয় প্রায় ৯২ হাজার টাকা। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তদারকি না থাকায় তা ইতোমধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ব্যয় করা হয় ২০ লাখ ৯২ হাজার ৮৩৭ টাকা। তবে সেটিও মাঠের চারপাশে নির্মাণ করা হয়নি। বাউন্ডারি চিহ্ন হিসেবে মাঠের চার কোণায় নির্মাণ করা হয়েছে। ক্রিকেট প্র্যাকটিস নেট তৈরিতে ব্যয় হয় ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৩ টাকা।
বাকি দুটি কাজ শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হলেও পরিপূর্ণ হয়নি ক্রিকেট মাঠ তৈরি। শুধু ক্রিকেট পিচ তৈরি করেই ফেলে রাখা হয়েছে। করা হয় না পরিচর্যা, পিচের আশপাশে মাটি না থাকায় যাচ্ছে না খেলা। ফলে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে সেটি। মাটি ভরাট ছাড়া সেখানে ক্রিকেট খেলা আয়োজন করা সম্ভব না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রিকেট দলের বোলার আব্দুল্লাহ ইউসুফ বলেন, “আমাদের সমসাময়িক বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ক্রিকেট পিচ আছে, শুধু আমাদের নেই। ফলে আমাদের ম্যাচ খেলতে হয় নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অথবা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। আমরা প্র্যাক্টিস করি মাত্র ২ মাস।”
তিনি বলেন, “এ অল্প প্রস্তুতি নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ এমন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খেলি, যাদের নিজস্ব মাঠ আছে। তারা অধিক ম্যাচ খেলার ও নিজেদের প্রস্তুত করার সুযোগ পায়।”
ফয়েজ আহমদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাগুলো ক্রিকেট বলেই অনুষ্ঠিত হয় এবং আমরা নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে থাকি। কিন্তু নিজস্ব পিচ ও গ্রাউন্ড না থাকায় নোবিপ্রবি ক্রিকেট টিম বছরে সর্বোচ্চ দুই-তিনটি প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে। এতে করে আমাদের অনেক ভালো খেলোয়াড় থাকলেও তারা নিজেদের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ইভেন্টের জন্য প্রস্তুত করতে পারছে না।”
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি শরীরচর্চা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জীব কুমার দে বলেন, “আমরা মাঠ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়ার পর প্রথমবার যাদের দিয়ে কাজ করিয়েছি, তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ বুঝে পাইনি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর ওই কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। সেখানে সেন্ট্রাল পিচের সঙ্গে মাটি ভরাটের বিষয়টি ছিল। কিন্তু তারা কেন সেটি না করে শুধু পিচ তৈরি করেছে, আমার তা জানা নেই।”
পিচের পরিচর্যা না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু মাঠ তৈরি পুরোপুরি হয়নি, তাই পরিচর্যা করলেও তা কাজে আসবে না। যখন মাঠ প্রস্তুত হয়ে যাবে, তখন পরিচর্যা স্বাভাবিকভাবেই হবে। আর আমাদের গ্রাউন্ডম্যান নেই তাই কাজ করাও সম্ভব না।”
শরীরচর্চা বিভাগের পরিচালক ড. মো. আমজাদ হোছাইন বলেন, “বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমি দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্ব পাওয়ার পর সবকিছু খোঁজখবর নিয়েছি। যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে, তা নিয়ে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা করব। আশা করি ক্রিকেট মাঠসহ বাকি কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে পারব।”
মাটি ভরাটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, “শরীরচর্চা বিভাগকে প্রথমে দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্রিকেট মাঠ নির্মাণের। তারা যখন সেটি করতে পারেনি, তখন আমাদের দেওয়া হয়। আমরা সেটা করে দিয়েছি। আমাদের শুধু পিচ তৈরির বাজেট হয়েছে, আমরা ঐটা করেছি। মাটি ভরাট করার জন্য কোন অর্থ দেওয়া হয়নি।”
তিনি শরীরচর্চা বিভাগের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “তারা একটি মাঠ রোলার দিয়ে সমান করবে সেটাও পারে না। একটা ক্রিকেট পিচ তৈরি করতে পারে না। তাহলে তাদের কাজ কি?”
নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর মাধ্যমে মানসিক বিকাশ ঘটে। ক্রিকেট পিচের বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। বিগত প্রশাসন কাজটি সম্পূর্ণ করেনি। সেটি আমি ইতোমধ্যে শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি। পিচের আশপাশে মাটি ভরাটের জন্য ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। আশা করি মাটি ভরাট হয়ে গেলে ক্রিকেট মাঠটি পরিপূর্ণতা পাবে এবং শিক্ষার্থীরা খেলতে পারবে।”
ঢাকা/মেহেদী