সালমান রুশদির সন্দেহভাজন হামলাকারীর বিচার শুরু
Published: 11th, February 2025 GMT
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক হাদি মাতার বিচার শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হাদি নিউজার্সির বাসিন্দা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা গতকাল সোমবার নিউইয়র্কের একটি আদালতে হাদির বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরেন। সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাতের পর যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল, একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে তার বিস্তারিতও তাঁরা তুলে ধরেছেন।
২০২২ সালের ১২ আগস্ট নিউইয়র্কের শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে সালমান রুশদির ওপর হামলা চালানো হয়। সে সময় পুলিশ বলেছিল, হামলাকারী মঞ্চে উঠে সালমান রুশদি ও তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ব্যক্তির ওপর হামলা চালান। রুশদির মুখমণ্ডলে ও ঘাড়ে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করা হয়। আঘাত এত গুরুতর ছিল যে রুশদির মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল।
হামলায় রুশদি এক চোখের দৃষ্টি হারান। তাঁর একটি হাতের কর্মক্ষমতাও চলে গেছে।
হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন হামলাকারী সন্দেহে হাদি নামের ২৭ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এই তরুণ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
হাদির আইনজীবী জুরিদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, হাদিকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অবশ্যই যুক্তিসংগতভাবে তাঁদের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে।
আরও পড়ুনএক চোখ হারানোর পরও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন রুশদি১৫ এপ্রিল ২০২৪হাদির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাঁর ৩০ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে।
প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, হাদি কোনো ‘দ্বিধা ছাড়াই’ একটি ছুরি বের করে সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত করেন। ফলে এই লেখক প্রায় মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিলেন।
প্রসিকিউটররা আরও বলেন, পেছন থেকে এতটা অতর্কিতে হামলা করা হয়েছিল যে রুশদি বুঝতেই পারেননি কী ঘটছিল।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী লেখক রুশদি ১৯৮১ সালে তাঁর লেখা বই ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু ১৯৮৮ সালে তাঁর চতুর্থ বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য তাঁকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
আরও পড়ুনএক চোখের দৃষ্টিশক্তি, এক হাতের কর্মক্ষমতা হারালেন রুশদি২৩ অক্টোবর ২০২২‘স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা। এটি প্রকাশের পর থেকে সালমান রুশদি হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন।
বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তাঁর মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুনসালমান রুশদির হামলাকারীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ১৩ আগস্ট ২০২২.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুর কারাগারে ‘আয়নাবাজির’ ঘটনায় আদালতে মামলা, আইনজীবীকে শোকজ
গাজীপুরে টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে জেল খাটার ঘটনায় আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বন আদালতের বেঞ্চ সহকারী রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন।
এ ছাড়া প্রকৃত আসামির পরিবর্তে অন্য ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করায় এক আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন কালিয়াকৈর উপজেলার মোথাজুরী তালচালা গ্রামের ছাত্তার মিয়া (৪৫) ও তাঁর পরিবর্তে কারাগারে থাকা একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৩০)।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার কাচিঘাটা রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা আবু শরীফ উর রহমান খান চৌধুরী গত ২৪ নভেম্বর ছাত্তার মিয়া, বাবুল হোসেন, মো. ছামাদ ও মো. হানিফের বিরুদ্ধে বন আইনে একটি মামলা করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ৭ ডিসেম্বর গাজীপুর জজ আদালতের আইনজীবী শ্যামল সরকার আসামি ছাত্তার মিয়ার পক্ষে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলা কারাগারে আসামির আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, কারাগারে যাওয়া আসামি ছাত্তার মিয়ার প্রকৃত নাম জাতীয় পরিচয়পত্রে সাইফুল ইসলাম। প্রকৃত আসামির নাম ও পরিচয় গোপন করায় অভিযুক্ত ছাত্তার মিয়া, সাইফুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পেনাল কোডের ১৯৬/২০৫/৪১৭/ ৪২০/৪৬৬/৪৬৮ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামি ছাত্তার মিয়ার পক্ষে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী শ্যামল সরকারকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
গাজীপুর বন আদালতের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জুয়েল রানা বলেন, আদালতে মামলা করা হলে বিচারক সংশ্লিষ্ট থানায় এআইআর করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আইনজীবীকে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনটাকার বিনিময়ে কারাগারে যুবক, বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃত আসামি০৯ ডিসেম্বর ২০২৫গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, ‘ওই আসামিকে আমাদের কারাগারে পাঠানো হলে তাঁর আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস নেওয়া হয়। আসামি ছাত্তারের ছাপ নেওয়ার সময় দেখা যায়, তাঁর প্রকৃত নাম সাইফুল ইসলাম। পরে জানতে পারি, তিনি অন্যজনের হয়ে আদালতে হাজির হয়েছিলেন। পরে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়েছি।’
ওই ঘটনায় মঙ্গলবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘গাজীপুর কারাগারে ‘আয়নাবাজি’: টাকার বিনিময়ে কারাগারে যুবক, বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃত আসামি’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।