জামায়াতকে উদারতা দেখিয়ে বিএনপি উপহার হিসেবে পেয়েছে মুনাফেকি: রিজভী
Published: 12th, February 2025 GMT
জামায়াতে ইসলামীর প্রতি উদারতা দেখিয়ে বিএনপি উপহার হিসেবে মুনাফেকি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বুধবার সন্ধ্যার আগে রাজশাহী বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মণ্ডলের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তাহেরপুর পৌর বিএনপির উদ্যোগে স্থানীয় স্কুল মাঠে আয়োজিত স্মরণসভায় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি সব সময় জামায়াতের প্রতি উদারতা দেখিয়েছে। এই উদারতার সুযোগ নিয়ে জামায়াত রাজনীতি করছে। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তাদের নিষিদ্ধের ঘোষণা করলেও বিএনপি সমর্থন করেছে। এই উদারতা দেখানোর পর বিএনপি উপহার হিসেবে পেয়েছে মুনাফেকি।’
রিজভী আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একসঙ্গে আন্দোলন করেছিল সব দল। তখন খালেদা জিয়ার কথা ছিল, তাঁর (এরশাদ) অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তবে মুনাফেক জামায়াত আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে যায়।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সময় মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। মতের বাইর গেলে গুম, খুন করা হয়েছে। আয়নাঘর তৈরি করে নেতা-কর্মীদের বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলা দিয়েও হয়রানি করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তিন শতাধিক মামলা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তাহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নঈম মোহাম্মদ সামসুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ (চাঁদ), সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার, মহানগরের আহ্বায়ক এরশাদ আলী, সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ, বাগমারার সদস্যসচিব কামাল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ তাঁর বক্তব্য জামায়াত-শিবিরের সমালোচনা করে ‘বেইমান’ বলে উল্লেখ করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘তাদের একটি ছাত্রসংগঠন আছে, যার আত্মপ্রকাশ হয়েছে রগ কাটার মাধ্যমে। এরা এখন ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করছে। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব র সদস য র ব এনপ ব এনপ র ল ইসল ম আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫