ভোটে নির্বাচিত হলেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদক
Published: 12th, February 2025 GMT
কাউন্সিলে কর্মী শিক্ষার্থীদের ভোটের মাধ্যমে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বুধবার বেলা ১১টা থেকে জেলা ছাত্রদলের আয়োজনে কলেজটির মুক্তমঞ্চে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে বেলা দুইটা পর্যন্ত। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
ভোট গ্রহণ শেষে বিকেল চারটার দিকে ফল ঘোষণা করা হয়। এ সময় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকারসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কলেজ ছাত্রদলের কর্মী শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ২৩৯ ভোট পেয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন জামির আহম্মেদ (মসনদ)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নয়ন পেয়েছেন ১১৯ ভোট। ১৫৫ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শিমুল হোসেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সজীব পেয়েছেন ১০৫ ভোট।
কাউন্সিলে সভাপতি পদে জামির আহম্মেদ, নয়ন আলী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শিমুল হাসান, সজীব আলী ও সামি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মেয়ে ও ছেলেশিক্ষার্থীরা আলাদা বুথে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ভোটারসংখ্যা ছিল ৪৬২।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোজাক্কির রহমান। এ সময় কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহম্মেদ ও মোকছেদুল মোমিন উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি ইতিবাচক রাজনীতির শুভসূচনা হয়েছে। সাড়ে ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক সরকার ছিল। আমরা চাইলেও কাউন্সিল করতে পারিনি। পছন্দমতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি।’
নাছির উদ্দীন আরও বলেন, ‘খুনি হাসিনা সরকারের দোসররা প্রতিটি ক্যাম্পাসে নিকৃষ্টতম মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছিল। তার বিপরীতে এখন একটি ভালো সময় উপনীত হয়েছে। আমরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চাই। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের ৩৮টি সাংগঠনিক টিম প্রথম পর্বের কাজ শেষ করে দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু করেছে। যেটি দুই দিন ধরে সারা দেশে চলছে। এই পর্বে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ প্রথম।’
দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোট নিয়ে বেশ উৎসাহ দেখা গেল। মুক্তমঞ্চের সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের ভোটার নম্বর খুঁজে পেতে সহযোগিতা করছেন প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা। সবাই নতুন ভোটার এবং প্রথমবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় বেশ আনন্দিত।
ভোটার শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের জীবনের প্রথম ভোট এটা। এর আগে কখনো তাঁরা ভোট দেননি। আগে দেখেছেন, নেতার পেছনে একজন দৌড়াদোড়ি করছেন, তখন তিনি পদ পেয়ে যাচ্ছেন। এবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেছেন।
সম্মান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘২৩ বছর বয়স হলেও কোথাও ভোট দিতে পারিনি। জাতীয় নির্বাচনে তো ভোট দেওয়ার চান্সই নেই। কারণ, স্বৈরাচার হাসিনার জন্য ভোট দিতে পারিনি। কেন্দ্রে গেলে ভোট হয়ে গেছে কিংবা সামনে ভোট দিতে হবে বলে। তাই নিজের মতো করে ভোট দেওয়ার অপশন পাইনি। আমার নিজের কলেজে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছি। এটা আমার কাছে ভালো লাগছে।’
কাউন্সিল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোজাক্কির রহমান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রশাসনের কাঁধে পা রেখে ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম, যাদের জন্ম ২০০০ সালের পর, তারা কখনো ভোট দিতে পারেনি।
বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতির জায়গা ভোটাধিকার। সারা বাংলাদেশের ক্যাম্পাসে নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করার মাধ্যমে তাঁদের দেখাতে চাইছেন যে ছাত্রদল গণতন্ত্র ও সঠিক নির্বাচনে বিশ্বাস করে।
এই ভোটের নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক হাসিবুর শহীদ বলেন, অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। যাঁরা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁরা এখানকার নিয়মিত ছাত্র।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রিয়াজ-শিবলীকে পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধসহ কঠোর সুপারিশ
পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোয়েস্ট বিডিসির (সাবেক পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার) কার্যক্রম পরিচালনায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি।
এ কারণে কোয়েস্ট বিডিসির পরিচালক, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম এবং সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে কমিটি। পাশাপাশি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ লিমিটেডের নিবন্ধন বাতিলসহ বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রেরণের সুপারিশ করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের বড় অঙ্কের অর্থদণ্ড (ন্যূনতম ১ কোটি টাকা জারিমানা), ফৌজদারি মামলা দায়ের এবং এলআর গ্লোবালের অধীনে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে ফরেনসিক অডিট সম্পন্ন করে ফান্ডের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ারও সুপারিশ করেছে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ১২টি কোম্পানির অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি অনুসন্ধানে বিএসইসির গঠিত ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’র প্রতিবেদনে এ সব সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে। অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে এমন তথ্য এসেছে।
অভিযোগ রয়েছে বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী কোয়েস্ট বিডিসির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বেশি দামে মালিকানার শেয়ার কেনা, ছয় ফান্ড থেকে নিজেসহ এলআর গ্লোবালের কর্মকর্তাদের পরিচালক পদে বসানো, যোগসাজোশ করে সম্পদের ভ্যালুয়েশন তৈরি, অবৈধভাবে তহবিলের ব্যবহার, পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো, অনুমোদনবিহীন ব্যবসা পরিচালনা করা, সিকিউরিটিজ অইন লঙ্ঘন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করার মতো গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ তুলেছে তদন্ত কমিটি।
উল্লেখ্য বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়া ও আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রীন জিরো ক্যুপন বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে অনিয়ম, প্রভাব খাটানো, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দায়িত্বশীল আচরণ না করার অভিযোগে শিবলী রুবাইয়াতকে আগেই পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএসইসি।
‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ মনে করে, রিয়াজ ইসলামের নেতৃত্বে ফান্ডের অপব্যবহার ও বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে। ফান্ডগুলোর নিবন্ধন বাতিল করে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরতের জন্য লিকুইডেশন করতে হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড আরোপ করা জরুরি। বিএসইসি যথাযথ কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলেও তদন্ত কমিটি মনে করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিএসইসির গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি ১২টি বিষয়ের উপর তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুপারিশের আলোকে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কিছু বিষয়ে অভিযুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আরো অনেক বিষয় কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে। শিগগিরই সেসব বিষয়ের উপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
রিয়াজ ও শিবলীর যোগসাজোশ
তদন্ত কমিটির ভাষ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান ও রিয়াজ ইসলামের যোগসাজোশে এলআর গ্লোবালের ছয় মিউচুয়াল ফান্ডের টাকায় পদ্মা প্রিন্টার্সের ৫১ শতাংশ শেয়ার কিনে নেওয়া হয়। উদ্যোক্তা-পরিচালকের প্রায় সব শেয়ার উচ্চ দরে প্রতিটি ২৮৯.৪৮ টাকা করে কেনা হয়। এরপর ছয় মিউচুয়াল ফান্ড থেকে নিজেসহ এলআর গ্লোবালের ছয় কর্মকর্তাকে পরিচালক পদে বসানো হয়। অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম পাদ্মা প্রিন্টার্সের মূল স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রির জন্য প্ররোচিত করেছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় পাদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ার ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে হস্তান্তরের অনুমোদন প্রদানের পুরো প্রক্রিয়াটি অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে।
অন্যদিকে এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনায় থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি ও সিকিউরিটিজে সন্দেহজনক বিনিয়োগের মাধ্যমে অপব্যবহার করেছে, যা ফান্ডগুলোর মূলধনের ক্ষতি আরও বৃদ্ধি করেছে। রিয়াজ ইসলামের নেতৃত্বে এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ডের তহবিলের সঙ্গে দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এ কারণে শিবলী ও রিয়াজকে পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত বিষয়ে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
দুদকের অভিযোগ প্রেরণ
এই অসাধু কার্যকলাপ থেকে অবৈধ অর্থ লেনদেন, দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিংয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়। যে কারণে কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং এলআর গ্লোবালের সিআইওর বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ দুদকে পাঠিয়ে বিস্তারিত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
অনুমোদনহীন পরিচালক নিযুক্ত ও অযোগ্য ঘোষণা
যেসব ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতিনিধি পরিচালক দাবি করে কোয়েস্ট বিডিসির বোর্ডে ছিলেন বা পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করেছেন, তাদের প্রত্যেককে ন্যূনতম ২০ লাখ টাকা করে জরিমানা করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। কোম্পানিটির পরিচালনায় সকল পরিচালক, যারা পদ্মা প্রিন্টার্স থেকে রূপান্তরের পর দায়িত্বে ছিলেন (মনোনীত হোক বা স্বাধীন বা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে হোক) তাদের স্থায়ীভাবে কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির পর্ষদে পরিচালক বা স্বাধীন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
অবৈধ মূলধন বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ প্রত্যাহার
কোয়েস্ট বিডিসি ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই বোর্ড রেজ্যুলেশন দিয়ে মূলধন ১.৬০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করেছে, যা ইজিএম ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। ওই বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত কোয়েস্ট বিডিসির পর্ষদ সদস্যদের (রিয়াজ ইসলাম, রেজাউর রহমান সোহাগ, শরীফ আহসান, মিসেস মদিনা আলী ও সৈয়দ কামরুল হুদা) বিরুদ্ধে পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ডের তহবিল ব্যবহার করে মূলধন বৃদ্ধি করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। এ কারণে এলআর গ্লোবালের নিবন্ধন বাতিল করার মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেডকে থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডে তাদের বিনিয়োগ অবিলম্বে বিক্রি করার নির্দেশ দেবে বিএসইসি। একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড ব্যতীত থাইরোকেয়ারের পূর্ববর্তী স্পনসর এবং পরিচালকদের পূর্ববর্তী লেনদেন/স্থানান্তরের ক্রয়/বিক্রয় মূল্যে কোয়েস্ট বিডিসি থেকে শেয়ার কিনে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
বিধিবহির্ভূত বিনিয়োগ ও অবৈধ কার্যক্রম
এলআর গ্লোবাল তাদের ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকা মিউচুয়াল ফান্ড সন্দেহজনকভাবে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপব্যবহার করতে পারে। ফলে ফান্ডগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত মূলধনের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। এই গুরুতর অনিয়মের জন্য এলআর গ্লোবালের সম্পদ ব্যবস্থাপকের নিবন্ধন বাতিলসহ কোয়েস্ট বিডিসির সব পরিচালক ও কর্মকর্তা এবং পরামর্শদাতা প্রত্যেককে আইনের একই ধারা অনুযায়ী ন্যূনতম ১ কোটি টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা প্রদান করেছে। উচ্চ আদালতের অনুমোদন ছাড়া এ কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ।
বোর্ড মিটিং মিনিটস জালিয়াতি
রেজাউর রহমান সোহাগ ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর সভার কার্যবিবরণী জাল করে নিজের পদত্যাগ অনুমোদিত হয়েছে বলে মিথ্যা কাগজ তৈরি ও দাখিল করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সিকিউরিটিজ অর্ডিন্যান্সের ধারা ১৮ অনুযায়ী এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুসন্ধান কমিটি সুপারিশ করেছে তাকে অন্তত ২৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিএসইসির কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা
বিএসইসির এসআরএমআইসি এবং ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগের কর্মকর্তারা কোয়েস্ট বিডিসির প্রয়োজনীয় শর্ত না মানার পরও অনুমোদন দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তাদের ন্যূনতম কঠোর শাস্তি আরোপের জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
ইউনিট হোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যর্থতা
মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিটহোল্ডারদের দীর্ঘমেয়াদি এবং চূড়ান্ত স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে এলআর গ্লোবাল। ফান্ডের আর্থিক অবস্থার এরূপ অবনতি ঘটেছে, তা বিনিয়োগকারীগণের স্বার্থের অনুকূলে নয়। তাই ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নিবন্ধন সনদ বাতিল করে তা লিকুইডেট করে ইউনিট হোল্ডারদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
নিরীক্ষক ও ভ্যালুয়ার উদাসীনতা
শফিক বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস কোয়েস্ট বিডিসির ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষায় যথাযথ সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। কোম্পানিটি মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন পরিবর্তনে হাইকোর্টের অনুমোদন পাওয়ার আগেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যা বেআইনি ছিল। তাই শফিক বাসাক অ্যান্ড কোং-কে তিন বছরের জন্য লিস্টেড কোম্পানি অডিট থেকে নিষিদ্ধ করাসহ ন্যূনতম ১০ লাখ টাকা জরিমানা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
কোম্পানিটির ভ্যালুয়ার হিসেবে দায়িত্বরত মার্চেন্ট ব্যাংক সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড ভ্যালুয়েশনে সুস্থ বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করেনি। আর মূল্যায়নের উদ্দেশ্য এবং এর সম্ভাব্য অপব্যবহার সম্পর্কে উদাসীন ছিল, যা একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত। তাই সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেডকে কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোর শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।
ফরেনসিক অডিট
বিএসইসি কর্তৃক এলআর গ্লোবালের অধীনে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিজিআইসি) নির্দেশ দেওয়া উচিত যে, যাতে তারা অবিলম্বে উক্ত ফান্ডগুলোর (এনসিসিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড-১, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, এআইবিএল ১ম ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এমবিএল ১ম মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ ১ম মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং গ্রিন ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড) সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে এবং বর্তমান আর্থিক অবস্থা নির্ধারণে ফরেনসিক হিসাব নিরীক্ষা পরিচালনা করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোয়েস্ট বিডিসির চেয়ারম্যান ও এলআর গ্লোবালের উপদেষ্টা রেজাউর রহমান সোহাগ রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমি একজন অনরারি চেয়ারম্যান। আমার কোনো শেয়ার নেই, আমি শেয়ারহোল্ডার নই। আমি এ কোম্পানিতে থেকে পরামর্শক হিসেবে শুধু বেতন পাই। এর বাহিরে আমার কোনো ইনভলভমেন্ট নেই। কি অনিয়ম হয়েছে বা কি হয়নি তা বিস্তারিত বলতে পারবেন, যারা সরাসরি কোম্পানি পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আর যে অভিযোগের কথা বললেন, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”
ঢাকা/এনটি/তারা