সংবিধান সংস্কার কমিশন বড় ধরনের কাঠামোগত সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তাই তাদের সুপারিশের বাস্তবায়ন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করবে। দলগুলো ঐকমত্য হলে নির্বাচনে আগে-পরে করা সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। 

সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে আশু করণীয় প্রস্তাব নেই বলে বলে জানান কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ একটা আরেকটার সঙ্গে সংযুক্ত। স্কেল হয়তো ডাউন করা যেতে পারে, কিন্তু পুরো বাদ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। সেই বিবেচনায় প্রধান করণীয় হচ্ছে- ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, তার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ঐক্য এবং প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা যে, তারা ক্ষমতায় গেলে সংস্কারের জন্য কাজ করবে। 

সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা যেহেতু বড় ধরনের কাঠামোগত সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলোর ক্ষেত্রে প্রথমে দরকার জাতীয় ঐকমত্য। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু নির্বাচন করবেন, দেশ চালাবেন তাদের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া জরুরি। সেটা নিশ্চিত করতে হবে আগে। তারা যদি ঐকমত্য পৌঁছান, তাহলে সেটি কি এখন করতে চান, নাকি নির্বাচনের পরে করতে চান, নাকি নতুন সংসদে করতে চান, নাকি গণভোটের মাধ্যমে করতে চান- সেটা তারাই নির্ধারণ করবে। 

সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রস্তাব দিয়েছেন। দীর্ঘ এক দশক ধরে আলোচনা চলছে। বছর তিনেক আগে একটি রাজনৈতিক দল তাদের সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা রাজনৈতিক দলগুলোর এ ব্যাপারে আন্তরিকতা আছে। 

৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদের কারণে প্রধানমন্ত্রীকে সরানোর কোনো প্রক্রিয়া হাতে নেই। বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী একের ভেতর চার। তার অভাবনীয় ক্ষমতা। তিনি চাইলে রাষ্ট্রপতিকে দিয়েও অনেক কিছু করতে পারেন। এ রকম ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে কীভাবে অপসারণ করবেন, যদি অনাস্থা প্রস্তাব না আনা যায়। ৭০ অনুচ্ছেদ অবিকৃত রেখে মৌলিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবেন বলে আমাদের মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‌‘যে ব্যক্তি একবার প্রধানমন্ত্রী হলে নিজের দলের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে নন, এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার পথটা কি? ৭০ অনুচ্ছেদ অবিকৃত রেখে কোনো পদ্ধতি আবিষ্কার করা যায়নি। এটা ৫২ বছরের অভিজ্ঞতা।’ 

গণভোটের সুপারিশ যৌক্তিক বলে মনে করেন আলী রীয়াজ। তার মতে, দেশে সংবিধান সংশোধন হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যদের ভোটে কিন্তু তারা কখনও দেশের ৫০ শতাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। আলী রীয়াজ বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ থেকে বেরিয়ে আসার পথ হচ্ছে অধিকতর জনগণের নিশ্চিত করা। বাহাত্তরের সংবিধানে গণভোট না থাকলেও জনগণের মতামত নিতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়। আর বাংলাদেশে যেসব ক্ষমতাসীন দল সংবিধান সংশোধন করেছে, তারা কখনও নির্বাচনের আগে জনগণের মতামত নেননি। 

মনোনয়নে ১০ শতাংশ তরুণ ও ২১ বছরে বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচনের সুপারিশ শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছি ১০ শতাংশ মনোনয়ন যেন তরুণ-তরুণীদের দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। একইভাবে আমরা ২১ বছরের কথাও বলেছি। সেটা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলেও এ শিক্ষার্থীরাই যে মনোনয়ন পাবেন সেই নিশ্চয়তা তো কেউ করতে পারে না, আমরাও না। ফলে বিশেষভাবে একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি হবে, সেই বিবেচনা করে করা হয়নি।’ তরুণ কারা সেটা আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে বলে জানান কমিশনের সদস্য ড.

শরীফ ভূঁইয়া। 

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে কিনা- এমন প্রশ্নে আলী রীয়াজ বলেন, গণভোটের মাধ্যমে হবে কিনা, সেটা সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। সেই সুপারিশ দেওয়ার এখতিয়ার আমাদের কর্মপরিধির মধ্যেই নেই। 

বহুত্ববাদ সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভাষা, সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, ধর্ম সমস্ত কিছুর মধ্যে যে পার্থক্যগুলো আছে, সেগুলোকে শুধুমাত্র স্বীকার বা স্বীকৃতি নয়, তাদের যেন সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়। সে কারণে বহুত্ববাদিতার কথা রয়েছে। আমাদের কাছে বহুত্ববাদিতা ধারণাটা মনে হয়েছে আরও আরেক বেশি ব্যাপক, যাতে বিভিন্ন মত-পথ, পরিচয়কে সংশ্লিষ্ট করা যায়। বহুত্ববাদের বিষয়টি ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বলে জানান তিনি। 

সুপারিশের প্রায় সবক্ষেত্রে কমিশনের সদস্যরা ঐকমত্য হলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সুপারিশে হয়নি বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আমাদের অংশীজনের একটি ব্যাপক অংশ এটি রাখার কথা বলেছেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এটা বলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য সুমাইয়া খায়ের, ইমরান সিদ্দিক, মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ড. শরীফ ভূঁইয়া, এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ, মো. মুসতাইন বিল্লাহ।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল র য় জ র য় জ বল ন ন শ চ ত কর গণভ ট র ঐকমত য জনগণ র আম দ র ক ষমত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে।”

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন ঘিরে সরগরম কেরাণীগঞ্জের রাজনীতি

হেভিওয়েটদের বিপক্ষে এনসিপির প্রার্থী হচ্ছেন যারা

তারেক রহমান বলেন, “সামনের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে। জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এই দেশ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়-মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষাই আজ সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি।”

তারেক রহমান বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের ঘটনা ঘটেছে।”

তিনি বলেন, “শত শত মানুষ হত্যা, গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হয়েছে বহু মানুষকে। অনেকে ফিরে আসেনি। যারা ফিরেছে, তাদের শরীরে নির্যাতনের নির্মমতা লেগে রয়েছে।”

বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আইটি পার্ক ও অবকাঠামোর নামে যেসব প্রকল্প হয়েছে, তার অনেকগুলোই আজ অব্যবহৃত পড়ে আছে—সেখানে গরু-ছাগল চরে বেড়াচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরব। প্রয়োজনে এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধও করব।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা চাই না আর কোনো আবরার নির্মম হত্যার শিকার হোক। আমরা চাই না শহিদুল আলমের মতো কাউকে রাজনৈতিকভাবে নির্যাতনের মুখে পড়তে হোক। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবন ও সম্মান রক্ষাই আমাদের প্রথম কাজ।”

তারেক রহমান জানান, জাতীয়তাবাদী দর্শনই মানুষের সম্মান, নিরাপত্তা ও সমতার অধিকার নিশ্চিত করে। মানুষের মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠাই বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি।

নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাদের পক্ষে রায় দিলে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালুর মাধ্যমে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করব। নারীসমাজকে শক্তিশালী না করলে দেশ এগোবে না।”

শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে কর্মসংস্থানে সংকটে না পড়ে। দেশের ডাটাবেইস ধরে বিদেশে কর্মসংস্থানের পথও উন্মুক্ত করা হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের খাল খনন করতে হবে, পরিবেশ রক্ষায় ২৫ কোটি গাছ লাগাতে হবে।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল, ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, আমিনুল হক, হাসান জাফির তুহিন, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, এস এম জিলানী প্রমুখ।

ঢাকা/আলী/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোটের মাঠে জোটের ভিড়ে জনপ্রত্যাশা কোথায় গেল 
  • পার্বত্য ৩ আসনে প্রার্থী না দিতে জাতীয় দলগুলোর প্রতি আহ্বান ইউপিড
  • শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান ইসলামী ফ্রন্টের
  • তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • ‘নির্বাচন সহজ হবে না, পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে’
  • আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে: নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
  • বাবুগঞ্জে এবি পার্টির ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর
  • যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান