অনিবার্য সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে: জহির উদ্দিন স্বপন
Published: 16th, February 2025 GMT
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, ‘যে ক্ষমতাবলে জনগণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, সেই ক্ষমতার বলেই তাঁরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেহেতু জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত নয়, তাই জনগণ তাঁদের ভোটাধিকারের ক্ষমতা আগে সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন—এটাই রীতি। কিন্তু জনগণের ক্ষমতাকে স্থগিত রেখে যদি অন্য কিছু আদায় করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তাতে ঘাটতি থেকেই যাবে।’
আজ রোববার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘অবাধ মুক্ত তথ্যপ্রবাহ জনগণের অধিকার আমাদের অঙ্গীকার’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জহির উদ্দিন স্বপন এই মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকতার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থায় আধুনিক সাংবাদিকতার ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
মতবিনিময় চলাকালে জহির উদ্দিন স্বপন সাংবাদিকদের অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কর্মসূচি, নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক মতবিরোধ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সাম্প্রতিক মতানৈক্য প্রসঙ্গে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘জামায়াত ও বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্পর্ক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করেছিল। আবার ১৬ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াতসহ অন্যান্য ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই মুহূর্তে দেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আগামীতে জরুরি সংস্কার শেষে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিত আমরা আমাদের রাজনীতি করব, আর জামায়াত তাদের রাজনীতি করবে।’
এই প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে জামায়াতের পক্ষ থেকে দু-এক নেতা বলেছেন, সংস্কারের আগে জাতীয় নির্বাচন নয়। এ ব্যাপারে বিএনপির দু-এক নেতা পাল্টা আমাদের যুক্তি তুলে ধরেছেন। আমরা মনে করি, জনগণের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের জন্য অনিবার্য যেসব সংস্কার দরকার, তা অবশ্যই করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার পর যে নির্বাচিত সরকার আসবে তারা বাকি সংস্কার করবে। এভাবে আমরা সংস্কার কার্যক্রমকে দুইভাবে ভাগ করেছি। কিন্তু জামায়াত আপাতত সংস্কারের কথা এমনভাবে বলছে, যেভাবে শেখ হাসিনা উন্নয়নের নামে নির্বাচনকে প্রলম্বিত করেছিল। সংস্কারের নামে জনগণকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার প্রবণতা কাজ করতে পারে বলে আমাদের অনুমান। এটা আমাদের কেবল একটি গণতান্ত্রিক বিতর্ক, কোনো শত্রুতা নয়।’
এ বিষয়ে জহির উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা চাই, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হোক। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই ভবিষ্যৎ সরকার গঠিত হবে, যা জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ২০২২ সালে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি সভায় বলেছিলেন, বিএনপি একা ক্ষমতায় যেতে চায় না। সব রাজনৈতিক দল, বরেণ্য বুদ্ধিজীবী এবং প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার ঘোষণা তিনি দিয়েছেন। তারেক রহমান সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার পরিকল্পনার কথা বলেছেন। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তিনি ৩১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন রোববার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স ক র কর র জন ত ক ব এনপ র জনগণ র র র জন বর শ ল আম দ র সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ