বোরো আর আমনের বিরতিতে শর্ষে চাষ, তাতেই কৃষকের বাজিমাত
Published: 17th, February 2025 GMT
একসময় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ফসলি জমিতে কেবল আবাদ হতো ধানের। বোরো ও আমন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ফেলে রাখা হতো ফসলি জমি। এখন দুই ফসলি এসব জমিকে চার ফসলি করে গড়ে তুলতে কৃষকেরা রবিশস্যের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে শর্ষের চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষকদের মধ্যে।
গত বছরই প্রথম টেকনাফ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে শর্ষের চাষ শুরু হয়। প্রথমবারে আবাদ হয় ৭০ হেক্টর জমিতে। অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ জমিতে কৃষকেরা শর্ষের আবাদ করেছেন। চলতি রবি মৌসুমে শর্ষের চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে।
কৃষকেরা জানিয়েছেন, এবার শর্ষের ফলন যেমন ভালো হয়েছে, দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে শর্ষের চাষাবাদ আরও বাড়াবেন বলে জানান তাঁরা। উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমাপাড়ার কৃষক লাকিংউ চাকমা বলেন, গত বছরের মতো এবারও তিন বিঘা জমিতে শর্ষের চাষ করেছেন তিনি। সাধারণত আমন ধান কাটার পর বোরো ধান লাগানোর আগপর্যন্ত সময়ে এসব জমি খালি পড়ে থাকত। এখন এই সময়টাতে চাষাবাদের মাধ্যমে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একই এলাকার চাষি এতাইন চাকমা বলেন, ‘এবার এক একর জমিতে শর্ষের চাষ করেছি। এতে আমার ৫-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবাদের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন এসেছে। এক হেক্টর জমিতে দুই থেকে আড়াই টন শর্ষে পাওয়া যায়।’ তিনি বলেন, প্রতি কেজি শর্ষে ৬০-৮০ টাকা বিক্রি করা যায়। তিন কেজি শর্ষে থেকে এক কেজি তেল এবং এক কেজি খৈল পাওয়া যায়। খৈল গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক কেজি তেলের দাম প্রায় ২০০ টাকা এবং এক কেজি খৈল ২৫-৩৫ টাকায় বিক্রি করা যায়। শর্ষের পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতে মৌ চাষ করার পরিকল্পনা করছেন।
একই গ্রামের কান্তি লাল চাকমা বলেন, ‘অন্য কৃষকদের মুখে লাভের কথা শুনে আমি এবারই প্রথম শর্ষের চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে, দামও ভালো রয়েছে। তাই বেশ লাভ হবে মনে হচ্ছে।’
আরেক চাষি লালং চাকমা বলেন, ‘এবার শর্ষেতে পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ ছিল না। তাই ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৫-৬ মণ করে শর্ষে হচ্ছে। চাষাবাদে সব খরচ বাদ দিলেও বিঘায় ন্যূনতম তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে লাভ হবে।’
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, শর্ষে চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। চাষাবাদে পরিশ্রমও তেমন নেই। এ কারণে এলাকার অনেক জমিতে কৃষকেরা শর্ষের চাষ করেছেন। হলুদে ছেয়ে যাওয়া এসব শর্ষেখেত দেখতেও সুন্দর।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, শর্ষে চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের সরকারিভাবে বিনা মূল্যে সার-বীজ বিতরণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে হত্যা, ফাঁদ পেতে ধরা হলো প্রেমিককে
পাবনার চাটমোহর উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামে ক্যানসার আক্রান্ত স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে।
দশদিন পর ঘটনা জানাজানি হলে অভিযুক্ত স্ত্রী শারমিন খাতুন ও তার প্রেমিককে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর চাটমোহরের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত স্বামী শের আলী (৩৫) দক্ষিণপাড়া গ্রামের ভোলা প্রামানিকের ছেলে। শারমিন খাতুন (২৬) কাটেঙ্গা গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে। এবং তার প্রেমিক অনিক (২২) একইগ্রামের মহাজন সরকারের ছেলে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ নভেম্বর শের আলীর মৃত্যু হয়। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তার মৃত্যুর পর বিষয়টি স্বাভাবিক হিসেবে শুরুতে মেনে নিলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুকে ঘিরে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।
জানা যায়, শের আলীর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ইউটিউবারদের মাধ্যমে চিকিৎসা সহায়তার অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, সেই অর্থের একটি বড় অংশ শারমিন অনিককে দিয়েছেন।
মৃত শের আলীর ফুপাতো ভাই এনামুল হোমেনের দাবি, শারমিন ও অনিকের মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে হওয়া কথোপকথন ঘেঁটে টাকা লেনদেনের একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। সেখান থেকেই প্রথম সন্দেহের সূত্রপাত।
এরপর ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পরিবারের সদস্যরা কৌশল অবলম্বন করেন। শারমিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে অনিককে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আসতে বলে মেসেজ পাঠানো হয়। অনিক এই ফাঁদে পা দেন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অনিকে টাকা নিতে এলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন বক্তব্য ও পরস্পরবিরোধী তথ্য দিলে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। পরে অনিক ও শারমিন স্বীকার করেন, প্রায় চার মাস ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।
শারমিন এ সময় জানান, গত ৩০ নভেম্বর একসঙ্গে দশটি ঘুমের ওষুধ শের আলীকে তিনি খাইয়েছিলেন। এতে শের আলীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং কিছু সময়ের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
শের আলীর মা শিরীনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমার অসুস্থ ছেলেকে ওর বউ ঘুমের ওষুধ খাইয়েছে। সে সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে এসে দেখি আমার ছেলে আর বেঁচে নেই। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’’
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘মৃত ব্যক্তির পরিবারে পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি বা মামলা করেনি। যেহেতু ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে, সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের পাবনা আদালতে সোপর্দ করেছে।’’
ঢাকা/শাহীন//