একসময় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ফসলি জমিতে কেবল আবাদ হতো ধানের। বোরো ও আমন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ফেলে রাখা হতো ফসলি জমি। এখন দুই ফসলি এসব জমিকে চার ফসলি করে গড়ে তুলতে কৃষকেরা রবিশস্যের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে শর্ষের চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষকদের মধ্যে।

গত বছরই প্রথম টেকনাফ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে শর্ষের চাষ শুরু হয়। প্রথমবারে আবাদ হয় ৭০ হেক্টর জমিতে। অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ জমিতে কৃষকেরা শর্ষের আবাদ করেছেন। চলতি রবি মৌসুমে শর্ষের চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, এবার শর্ষের ফলন যেমন ভালো হয়েছে, দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে শর্ষের চাষাবাদ আরও বাড়াবেন বলে জানান তাঁরা। উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমাপাড়ার কৃষক লাকিংউ চাকমা বলেন, গত বছরের মতো এবারও তিন বিঘা জমিতে শর্ষের চাষ করেছেন তিনি। সাধারণত আমন ধান কাটার পর বোরো ধান লাগানোর আগপর্যন্ত সময়ে এসব জমি খালি পড়ে থাকত। এখন এই সময়টাতে চাষাবাদের মাধ্যমে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একই এলাকার চাষি এতাইন চাকমা বলেন, ‘এবার এক একর জমিতে শর্ষের চাষ করেছি। এতে আমার ৫-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবাদের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন এসেছে। এক হেক্টর জমিতে দুই থেকে আড়াই টন শর্ষে পাওয়া যায়।’ তিনি বলেন, প্রতি কেজি শর্ষে ৬০-৮০ টাকা বিক্রি করা যায়। তিন কেজি শর্ষে থেকে এক কেজি তেল এবং এক কেজি খৈল পাওয়া যায়। খৈল গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক কেজি তেলের দাম প্রায় ২০০ টাকা এবং এক কেজি খৈল ২৫-৩৫ টাকায় বিক্রি করা যায়। শর্ষের পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতে মৌ চাষ করার পরিকল্পনা করছেন।

একই গ্রামের কান্তি লাল চাকমা বলেন, ‘অন্য কৃষকদের মুখে লাভের কথা শুনে আমি এবারই প্রথম শর্ষের চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে, দামও ভালো রয়েছে। তাই বেশ লাভ হবে মনে হচ্ছে।’

আরেক চাষি লালং চাকমা বলেন, ‘এবার শর্ষেতে পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ ছিল না। তাই ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৫-৬ মণ করে শর্ষে হচ্ছে। চাষাবাদে সব খরচ বাদ দিলেও বিঘায় ন্যূনতম তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে লাভ হবে।’

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, শর্ষে চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। চাষাবাদে পরিশ্রমও তেমন নেই। এ কারণে এলাকার অনেক জমিতে কৃষকেরা শর্ষের চাষ করেছেন। হলুদে ছেয়ে যাওয়া এসব শর্ষেখেত দেখতেও সুন্দর।

উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.

শফিউল আলম কুতুবী বলেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে শর্ষের চাষাবাদ ও ফলন হয়। চলতি মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলায় শর্ষের চাষাবাদ হয়েছে। আগামী মৌসুমে শর্ষের চাষ দুই থেকে তিন গুণ বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, শর্ষে চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের সরকারিভাবে বিনা মূল্যে সার-বীজ বিতরণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ক জ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ