পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী রেলপথের হলদীবাড়ী এলাকা থেকে ট্রেনে কাটা অবস্থায় ভরত চন্দ্র রায় (৪৮) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। এসময় তার দুই হাত প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিল।

নিহত ভরত চন্দ্র রায় চন্ডিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি চন্ডিপুর ইউনিয়নের কালিকাবাড়ী কুমার পাড়া গ্রামে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, তাকে হত্যা করে অথবা হাত বেঁধে রেললাইনে ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে ঢাকা থেকে পার্বতীপুরগামী কোনো এক ট্রেনে দেহ থেকে তার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এ ঘটনায় দিনাজপুর সিআইডির এএসপি ফারুক আহম্মেদ, এএসপি সার্কেল জিন্নাহ আল মামুন, ডিবির ওসি সোহেল রানা, রেলওয়ে থানার ওসি ফকরুল ইসলাম ও মডেল থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নিহতের ছোট ছেলে রিপন চন্দ্র জানান, তার বাবা ভরত চন্দ্র রায় রেলওয়েতে খালাসি পদে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করতেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সোমবার সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। প্রতিদিন সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফিরলেও সেদিন রাত ৭টার দিক থেকে তার ফোন আমরা বন্ধ পাই। সারারাত বাড়িতে না ফেরায় সকালে খুঁজতে এসে জানতে পারি বাবাকে কে বা কারা রশি দিয়ে হাত বেঁধে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রেখে গেছে।

তিনি আরো জানান, তার বাবার দেড় লাখ টাকা বকেয়া বেতন পাওয়ার কথা ছিল সোমবার। ওই টাকা দিয়ে আজ মঙ্গলবার চাচাতো বোনের বিয়ের জন্য মোটরসাইকেল কিনতে যাওয়ার কথা ছিল।

ভরত চন্দ্রের স্ত্রী ভারতী বানী জানান, আমার স্বামীর কোনো শত্রু আছে বলে আমার জানা নেই। কী কারণে তাকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে তা বুঝতে পারছি না। আমার প্রয়াত দেবরের মেয়ে সোনামনির বিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার। আজ মঙ্গলবার মোটরসাইকেল কিনতে যাওয়ার কথা। এখন সব চুরমার হয়ে গেল।

রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকরুল ইসলাম বলেন, রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়া অবস্থায় ভরত চন্দ্রের মরদেহ উদ্ধার কারা হয়েছে। তার দু’হাত প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। মরদেহ উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্ততি চলছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য পুলিশ কাজ করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ন ত র মরদ হ আওয় ম র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে হত্যা, ফাঁদ পেতে ধরা হলো প্রেমিককে

পাবনার চাটমোহর উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামে ক্যানসার আক্রান্ত স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। 
দশদিন পর ঘটনা জানাজানি হলে  অভিযুক্ত স্ত্রী শারমিন খাতুন ও তার প্রেমিককে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। 

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর চাটমোহরের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত স্বামী শের আলী (৩৫) দক্ষিণপাড়া গ্রামের ভোলা প্রামানিকের ছেলে। শারমিন খাতুন (২৬) কাটেঙ্গা গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে। এবং তার প্রেমিক অনিক (২২) একইগ্রামের মহাজন সরকারের ছেলে। 

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ নভেম্বর শের আলীর মৃত্যু হয়। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তার মৃত্যুর পর বিষয়টি স্বাভাবিক হিসেবে শুরুতে মেনে নিলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুকে ঘিরে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়।
জানা যায়, শের আলীর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ইউটিউবারদের মাধ্যমে চিকিৎসা সহায়তার অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, সেই অর্থের একটি বড় অংশ শারমিন অনিককে দিয়েছেন। 

মৃত শের আলীর ফুপাতো ভাই এনামুল হোমেনের দাবি, শারমিন ও অনিকের মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে হওয়া কথোপকথন ঘেঁটে টাকা লেনদেনের একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। সেখান থেকেই প্রথম সন্দেহের সূত্রপাত। 

এরপর ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পরিবারের সদস্যরা কৌশল অবলম্বন করেন। শারমিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে অনিককে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আসতে বলে মেসেজ পাঠানো হয়। অনিক এই ফাঁদে পা দেন।  

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অনিকে টাকা নিতে এলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন বক্তব্য ও পরস্পরবিরোধী তথ্য দিলে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। পরে অনিক ও শারমিন স্বীকার করেন, প্রায় চার মাস ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। 

শারমিন এ সময় জানান, গত ৩০ নভেম্বর একসঙ্গে দশটি ঘুমের ওষুধ শের আলীকে তিনি খাইয়েছিলেন। এতে শের আলীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং কিছু সময়ের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। 

শের আলীর মা শিরীনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমার অসুস্থ ছেলেকে ওর বউ ঘুমের ওষুধ খাইয়েছে। সে সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে এসে দেখি আমার ছেলে আর বেঁচে নেই। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’’

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘মৃত ব্যক্তির পরিবারে পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি বা মামলা করেনি। যেহেতু ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে, সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের পাবনা আদালতে সোপর্দ করেছে।’’ 

ঢাকা/শাহীন//

সম্পর্কিত নিবন্ধ