ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলন্ত বাসে ডাকাতির যে বর্ণনা দিলেন যাত্রীরা
Published: 20th, February 2025 GMT
ঢাকায় ফেরি করে সুপারি ও খেজুরের গুড় বিক্রি করেন সোহাগ হোসেন (২৩) ও ওমর আলী (৫২)। দুজনে ১১ দিনে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছিলেন। গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে নাটোরের বড়াইগ্রামের বাড়িতে ফিরতে ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে উঠেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে চলন্ত বাসে তাঁদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে একদল ডাকাত। বাসের অন্য যাত্রীরাও ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পাননি।
ইউনিক রোড রয়েলসের আমরী ট্রাভেলস নামের একটি বাসে (নম্বর ময়নসিংহ-ব-১১-০০৬৯) এই ডাকাতি হয়েছে। বাসের দুই নারী যাত্রীকে ধর্ষণের কথা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, গাজীপুরের চান্দুরা থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার ভেতরে ডাকাতি হয়েছে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, ডাকাতি হওয়া বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় পৌঁছানোর পর দুই নারী যাত্রী পুলিশের কাছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। তবে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন, নারী যাত্রীদের নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনার কথা কেউ তাঁকে বলেননি। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
বাসের যাত্রী সোহাগ হোসেন, ওমর আলী, মজনু আকন্দ (৭৩) এবং তাঁদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফ বাস আটকানোর পর থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বড়াইগ্রাম থানায় অবস্থান করছিলেন। তাঁরা মামলা করতে চাইছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল মির্জাপুর থানা এলাকা হওয়ায় সেখানেই মামলা হবে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার সময় ওমর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে নাটোরের পুলিশ সুপার তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে গেছেন। মির্জাপুর থানার পুলিশ বড়াইগ্রাম থানার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার ওসি মো.
বাসযাত্রীরা বলছেন, ৪০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে মঙ্গলবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে বাসটি ছাড়ে। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসে ডাকাতি শুরু হয়। তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে ঘুরিয়ে একই জায়গায় বাসটি নিয়ে গিয়ে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে ডাকাতেরা নেমে যান। তখন যাত্রীরা দেখতে পান, তাঁদের অবস্থান মির্জাপুর থানা এলাকার একটি পেট্রলপাম্পের পশ্চিম দিকে। সেখানে বাসচালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজার গন্তব্যে না যেতে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। তবে যাত্রীদের চাপের মুখে তাঁরা বাস ছাড়েন। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে বাসটি যাত্রীদের চাপের মুখে বড়াইগ্রামে থানায় ঢোকানো হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোহাগ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ার সময় পেছনের সিটে তিনজন ডাকাত উঠেছিলেন। বাসের লোকজনের সঙ্গে এই তিনজন কথা বলে কিছু দূর এসে আরও পাঁচজনকে বাসে ওঠানো হয়। তারপর ডাকাতদের একজন বাসের স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এই ডাকাতেরা একজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে তাঁর সাদা জামা রক্তে ভিজে যায়। তখন ওই যাত্রী তাঁর টাকাসহ সবকিছু বিনা বাক্যে দিয়ে দেন। আরেকজনের হাতে ছুরি দিয়ে পোজ দেয়। তাঁর হাতের মাংস কেটে ফাঁক হয়ে যায়। এই ভয়ে যাত্রীরা যাঁর কাছে যা ছিল সব দিয়ে দেন।
প্রত্যেক যাত্রীকে ডাকাতেরা পাঁচ–সাতবার করে তল্লাশি করেন উল্লেখ করে সোহাগ আলী বলেন, তাঁকে একজন ডাকাত বাসের সিটের মাঝখানে ফেলে দিয়ে বুকের ওপর পা তুলে দিয়ে দাঁড়ায়। এই সময় তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার ওমর আলীর গলায় ছুরি ধরে ২০ হাজার টাকা বের করে নেয়। এ সময় ওমর আলী এক লাখ টাকার বান্ডিলটি নিচে ফেলে দেন। পরেরবার তল্লাশি করতে এসে ডাকাতেরা সেই টাকাটাও পেয়ে যায়। কোনো যাত্রীর মোবাইল ডাকাতেরা রেখে যায়নি। শুধু তাঁর ফোনটি নিচে পড়ে যাওয়ার কারণে তাঁরা বুঝতে পারেনি।
আরেক যাত্রী বড়াইগ্রামের মৌখাড়া গ্রামের মজনু আকন্দের ৪৬ হাজার টাকার সব কেড়ে নিয়েছে ডাকাতেরা। তিনি বলেন, ‘বাসে মেয়েদের তারা (ডাকাতেরা) একেবারে বেইজ্জত করে ফেলেছে। মেয়েরা এমনভাবে চিক্কর দিয়েছে যে তাঁরা অনুভব করেছেন ডাকাতেরা তাঁদের ক্ষতি করে ফেলেছে।’ তিনি আরও বলেন, তিন ঘণ্টা ধরে বাস শুধু ওই এলাকায় ঘুরিয়ে সব যাত্রীর টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকারসহ সবকিছু লুট করে নেওয়ার পরে ডাকাতদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বাসের লোকজন টালবাহানা করতে থাকেন। তাঁরা বলেন, তাঁদের গাড়িতে তেল নেই। টাকাপয়সা নেই। তাঁরা যেতে পারবেন না। তাঁদের সেখানেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই সময় যাত্রী এক হয়ে ঘোষণা দেন তাঁরা কেউ বাস থেকে নামবেন না। তাঁরা মরলে বাসের মধ্যেই মরবেন। এই ঘোষণার পরে তাঁরা বাস ছাড়েন।
মজনু আকন্দ বলেন, ‘বাসের লোকজন বলল, তাদের টাকাপয়সাও ডাকাতেরা কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু টোল প্লাজায় (যমুনা সেতু) এসে ঠিকই তারা টোল দিল। নাশতা খেল। এ টাকা তারা কোথায় পেল?’ যাত্রীদের অভিযোগ, বাসের লোকজনে যোগসাজশেই এই ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে।
ওমর আলী বলেন, ‘দুই নারী যাত্রী তাদের কাছে একাধিকবার বলেছেন যে ডাকাতেরা তাদের শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে। তারা ঘটনাটি বড়াইগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার শরিফুলের (এসআই শরিফুল ইসলাম) কাছেও বলেছেন।’
এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, দুজন নারী যাত্রী তাঁদের গায়ে হাত দিয়ে গয়নাপত্র খুলে নেওয়ার কথা বলেছেন। যেভাবে খুলে নেওয়া হয়েছে, তাতে তাঁদের শ্লীলতাহানি ঘটেছে।
বাসচালকসহ তিনজন জামিনে মুক্তডাকাতির ঘটনায় আটক বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় জামিন পেলেও বিষয়টি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত সূত্রে বিষয়টি জানা যায়। নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলী আদালত সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম থানার এসআই শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চালান মূলে ঢাকা-রাজশাহী চলাচলকারী ইউনিক রোড রয়েলস বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫), চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) ও সুপারভাইজার মাহবুল আলমকে (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাঁদের আদালতের সামনে হাজির করলে আদালত শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোস্তফা কামাল বলেন, মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার হওয়ায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো ধর্তব্য অপরাধের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না থাকায় আদালত তাঁদের জামিনের আদেশ দেন।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাসের যাত্রীরা মৌখিকভাবে পুলিশকে ডাকাতি হওয়ার কথা বলেছেন। অনেক যাত্রীই রাস্তায় নেমে গেছেন। দুজন নারী যাত্রী এসেছিলেন। তাঁদের একজনের বাড়ি নাটোরের লালপুরে, আরেকজনের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার দিকে। তাঁরা তাঁদের নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। তাঁরা চলে গেছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরও তাঁর কাছে নেই। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘ধর্ষণের এই খবর কে কীভাবে ছড়াল, এটা নীতিনৈতিকতার ব্যাপার তো মানতে হয়।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স র ল কজন ল ইসল ম বল ছ ন কজন র
এছাড়াও পড়ুন:
হামজাদের কোচিং স্টাফ বাড়ছে
পাঁচজন ডাটা অ্যানালিস্টের সঙ্গে সহকারী ফিজিও আছেন চারজন। প্রধান কোচ, সহকারী কোচসহ সিঙ্গাপুর দলের কোচিং স্টাফের সংখ্যা ১৯। তাদের বিপরীতে প্রধান কোচসহ বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ মাত্র পাঁচজন। এর মধ্যে ফিজিও আছেন একজন। অনেক সময় একসঙ্গে কয়েকজন ফুটবলার ইনজুরিতে পড়লে বেকায়দায় পড়তে হয় একমাত্র ফিজিওকে। সিঙ্গাপুর দলের কোচিং স্টাফের সংখ্যা দেখে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও এই দিকে মনোযাগ দিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দলে কোচিং স্টাফ বাড়ানোর কথা শনিবার মিট দ্য প্রেসে বলেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল।
বাংলাদেশের কোচিং স্টাফের তালিকা খুবই ছোট। প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার সঙ্গে সহকারী হিসেবে আছেন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার হাসান আল মামুন এবং স্পেনের ডেভিড গোমেজ। গোলরক্ষক কোচ মিগুয়েল অ্যাংগেল এবং ফিটনেস কোচ হিসেবে আছেন পেলো। তারা দু’জনই স্পেনের। ফিজিও আবু সুফিয়ান সরকারকেই ফুটবলারদের চোট এবং খেলার সময় আঘাত পেলে দৌড়ে মাঠে যেতে হয়।
একটা দেশের জাতীয় দলে এত কম সংখ্যক কোচিং স্টাফ থাকতে পারে না বলে মনে করেন তাবিথ, ‘যখন আমরা কোনো অফিসিয়ালদের তালিকা তৈরি করি, তখন নানা রকমের অভিযোগ এবং কথা শুনতে হয় যে এত মানুষ কেন যাচ্ছে। তারা ঘুরতে যাচ্ছে কিনা, তাদের কাজটা কী? এসব প্রশ্নও শুনতে হয়। আসলে আপনারা বিশ্লেষণ করে জানবেন যে ২৩ জন প্লেয়ারের পেছনে কিন্তু আরও অনেক অফিসিয়াল দরকার হয়। একটা প্লেয়ার ইনজুরিতে পড়লে কিংবা খেলার পরে তাঁর ম্যাসাজ দরকার হয়। একজন ফিজিও দিয়ে কী আমরা ১৮ ফুটবলারকে সহযোগিতা করব? তাই আমাদের কোচিং স্টাফ, টেকনিক্যাল স্টাফ এবং অ্যাসিসট্যান্স স্টাফ বাড়াব। টিমকে আমরা জোরালোভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাব যেন আমরা কোনোভাবেই অন্য ইন্টারন্যাশনাল দলের তুলনায় পিছিয়ে না থাকি। এতে আমাদের কোয়ালিটিও বাড়বে আর র্যাঙ্কিংও বাড়বে।’
শুধু কোচিং স্টাফ বাড়ানোই নয় নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবলে। বিশেষ করে, ফুটবলারদের তথ্য পেতে গেলে সমস্যা পড়তে হয় সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে ফুটবলপ্রেমীদের। তাই এবার বাফুফে চালু করতে যাচ্ছে মোবাইল অ্যাপ। এই অ্যাপ ছাড়াও আগামী ছয় মাসের মধ্যে খেলোয়াড়দের তথ্য সমৃদ্ধি করতে চায় দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আর নতুন একটা সফটওয়্যার নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে বাফুফে টেকনিক্যাল কমিটি। যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করার কাজ করছে বাফুফে। কয়েকদিনের মধ্যেই তা জানাবে ফেডারেশন।