কামরাঙ্গীরচরে ৫৫ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার
Published: 25th, February 2025 GMT
কামরাঙ্গীরচর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনবহুল জনপদ। সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল দেখেছে, কামরাঙ্গীরচরে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ও কিশোর–কিশোরীদের ৫৫ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। বিষণ্নতা ও উদ্বেগ এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সাধারণ মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার নারীরা নিয়মিত যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল (মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স–এমএসএফ) কামরাঙ্গীরচর সম্পর্কে এ তথ্য দেয়। এমএসএফ ২০১৪ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচরে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। তাদের কাজের এক দশক পূর্ণ হয়েছে। এখন তারা কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে। মূলত সেই উপলক্ষে আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এমএসএফ কামরাঙ্গীরচর হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ক্রিস্টফ ফ্রিডল বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচরে এমএসএফের উপস্থিতি শেষ হলেও আমরা আশা করি, অন্যান্য সংস্থাগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে বেঁচে ফেরাদের যত্ন এবং পেশাগত স্বাস্থ্যসেবার বিদ্যমান ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসবে। আমাদের তৈরি করা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য সেবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।’
অনুষ্ঠানে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচরে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস। এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে ৩১ শয্যার একটি হাসপাতাল করে দিয়েছে। আলীনগর ও মাদবর বাজারে দুটি ক্লিনিক পরিচালনা করে এমএসএফ। এ ছাড়া তারা ৩১ শয্যার হাসপাতালেও সহায়তা করেছে। শিশুপুষ্টি, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য, সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং কারখানার শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে এমএসএফ। ১০ বছরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করা ৭৭ হাজারের বেশি মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে এমএসএফ। এর মধ্যে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু ছিল ১ হাজারের বেশি।
অনুষ্ঠানের প্রথম উপস্থাপনায় ড.
দ্বিতীয় উপস্থাপনায় বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যৌন ও অন্যান্য সহিংসতার শিকার ১১ হাজার ২৯৫ জন ব্যক্তি তাদের সেবা বা সহায়তা নিয়েছেন, তাঁর মধ্যে পুরুষ ৩১ জন। তাঁদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩০ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৩ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৩ শতাংশ বা ৫ হাজার ৯২৪ জন। নানা ধরনের অপরাধ খুব বেশি হলেও মানুষ পুলিশের কাছে যান না বা অভিযোগ করেন না। এমএসএফ পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলছে, ঘটনার শিকার ৮৩ শতাংশ মানুষ পুলিশকে কিছু জানান না।
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক এম এইচ ফারুকী বলেন, শ্রমিকদের ব্যাপারে আলোচনায় দুর্ঘটনা বা মৃতের সংখ্যাই শুধু গুরুত্ব পায়। শ্রমিকদের রোগগ্রস্ততা বা দীর্ঘদিন রোগে ভোগার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। পেশাগত রোগ শনাক্ত হতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। যখন শনাক্ত হয়, তত দিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
এমএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচর থেকে কাজ গুটিয়ে নিলেও বাংলাদেশে তাদের কাজ শেষ হচ্ছে না। ঢাকায় তাদের অফিস থাকছে। এ ছাড়া কক্সবাজার এলাকায় তাদের ছয়টি প্রকল্প চলমান আছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।