বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত নতুন ছাত্রসংগঠনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী আবু বাকের মজুমদার। সদস্যসচিব করা হয়েছে আরেক সাবেক সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ আহসানকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে গতকাল বুধবার নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিক্ষোভ, ধস্তাধস্তি এবং পরে অন্তত দুই দফা মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে আহত অন্তত দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিশু আলী ও আকিব আল হাসান।

বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা নতুন ছাত্রসংগঠনের কমিটিতে তাঁদের ‘সঠিক প্রতিনিধিত্ব’ চান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছিলেন, কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদকে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার দাবি করছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিফাত রশীদকে নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব করা হয়েছে।

এদিকে নতুন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম, মুখ্য সংগঠক হিসেবে তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী ও মুখপাত্র পদে আশরেফা খাতুনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির আহ্বায়ক পদে আবদুল কাদের, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে লিমন মাহমুদ হাসান, সদস্যসচিব পদে মহির আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে আল আমিন সরকার, মুখ্য সংগঠক পদে হাসিব আল ইসলাম ও মুখপাত্র পদে রাফিয়া রেহনুমা হৃদিকে মনোনীত করা হয়।

নতুন ছাত্রসংগঠনের নেতারা গতকাল সংবাদ সম্মেলনে হট্টগোলের মধ্যে সংগঠনের উদ্দেশ্য, নীতি ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি। তবে বিগত কয়েক দিনে তাঁরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, নতুন ছাত্রসংগঠনের নীতি হবে ‘স্টুডেন্টস ফার্স্ট’ ও ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’। ছাত্র-নাগরিকের স্বার্থ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করবেন তাঁরা। নতুন ছাত্রসংগঠন কারও লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো ‘মাদার পার্টির’ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না।

আবু বাকের মজুমদার ও জাহিদ আহসান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব স ব ক সমন

এছাড়াও পড়ুন:

লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান

১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।

কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!

দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।

কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।

আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।

অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।

এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।

একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।

বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান

সম্পর্কিত নিবন্ধ