এআইভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনের কারণে নিউজ ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলোর ট্রাফিক আশঙ্কাজনক হারে কমছে। প্রচলিত গুগল সার্চের তুলনায় ওপেনএআই, পারপ্লেক্সিটি ও গুগলের এআই সার্চ টুল থেকে সংবাদমাধ্যম ও ব্লগগুলো ৯৬ শতাংশ কম রেফারেল পাচ্ছে। কনটেন্ট লাইসেন্সিং প্ল্যাটফর্ম টোলবিটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এআই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মডেলের প্রশিক্ষণের জন্য ওয়েবসাইট থেকে আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় তথ্য সংগ্রহ করছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬০টির বেশি জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম, প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ও কেনাকাটাবিষয়ক ব্লগ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওপেনএআই, পারপ্লেক্সিটি ও মেটা ওই সময়সীমায় ওয়েবসাইট ব্যবহার করেছে প্রায় ২০ লাখ বার। প্রতিটি ওয়েব পেজ গড়ে সাতবার করে স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। এআই প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েব ক্রলার বা এআই বট ব্যবহারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু বেশির ভাগ ওয়েবসাইট মালিক বা প্রকাশকের কাছে এটি অজানা থাকে। কারণ, এসব বটের কার্যক্রম স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয় না।

টোলবিটের গবেষণায় দেখা গেছে, পারপ্লেক্সিটি একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ৫০০ বার স্ক্র্যাপ করলেও ওই ওয়েবসাইটে পাঠানো রেফারেলের সংখ্যা মাত্র ১০ হাজার। এর আগে পারপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগে বলা হয়, তারা অজ্ঞাত ওয়েব ক্রলার ব্যবহার করে ওয়েবসাইট স্ক্র্যাপ করছে এবং ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত রোবটস ডট টিএক্সটি নির্দেশিকা মানছে না।

ওয়েবসাইটে ক্রমাগত এআই বটের প্রবেশ বাড়তে থাকায় নিউজ সাইটগুলোর সার্ভার খরচও বেড়ে যাচ্ছে। টোলবিটের প্রধান নির্বাহী তোষিত পানিগ্রাহী বলেন, ব্যবহারকারী যখন কোনো প্রশ্ন করেন, তখন অসংখ্য বট একসঙ্গে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে।

প্রকাশকদের কনটেন্টের চাহিদা এআইভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মানুষের তথ্য গ্রহণের ধরন আর এআইয়ের ধরন এক নয়। একজন পাঠক সাধারণত একটি লিংকে ক্লিক করেন, এরপর দ্বিতীয়টিতে যান, তারপর অন্য কোথাও চলে যান। কিন্তু এআই একটি উত্তর পাওয়ার জন্য ১০ থেকে ২০টি লিংক বিশ্লেষণ করে।

এর আগে ওপেনএআই ও পারপ্লেক্সিটি দাবি করেছিল, তাদের এআই প্রযুক্তির সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইটগুলোয় আরও বেশি ট্রাফিক পাঠাবে এবং প্রকাশকদের জন্য নতুন আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। তবে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গার্টনারের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৬ সালের মধ্যে এআই চ্যাটবট ও ভার্চ্যুয়াল এজেন্টের কারণে ওয়েবসাইটের সার্চ ট্রাফিক ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে।

নিউজ সাইটের ট্রাফিক কমে যাওয়ার পাশাপাশি এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগও বাড়ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এডটেক প্রতিষ্ঠান চেগ গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, গুগলের এআই দিয়ে তৈরি সারাংশ তাদের ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কমিয়ে দিয়েছে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চেগের দাবি, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তাদের সার্চ ট্রাফিক ৪৯ শতাংশ কমেছে, যেখানে ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এই হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। এ সময় গুগল এআই ওভারভিউস চালু করে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম ওপেনএআই ও পারপ্লেক্সিটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছে। ভারতের দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের করা এক মামলায় সংবাদ সংস্থা এএনআই অভিযোগ করেছে, ওপেনএআই তাদের কপিরাইট-সুরক্ষিত কনটেন্ট এআই প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করেছে। এ বছরের শুরুতে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভিসহ একাধিক ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন জানিয়েছে।

তবে কিছু সংবাদমাধ্যম কপিরাইট বিতর্ক এড়াতে সরাসরি এআই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, অ্যাক্সেল স্প্রিংগার ও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ওপেনএআইয়ের সঙ্গে কনটেন্ট লাইসেন্সিং চুক্তি করেছে। অন্যদিকে রয়টার্স ও অ্যাক্সিওস তাদের কনটেন্ট মেটাকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এসব কনটেন্ট এআই চ্যাটবটের উত্তরের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কনট ন ট ব যবহ র র জন য স ইট র র এআই এআই প

এছাড়াও পড়ুন:

এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনবেন যেভাবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই–মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে অনেক এআই মডেল মানুষের লেখার মতোই সাবলীলভাবে লিখতে পারায় সেগুলো মানুষ না এআই লিখেছে, তা সহজে বোঝা যায় না। তবে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে এআই দিয়ে লেখা বার্তা বা লেখা শনাক্ত করা সম্ভব। এআই দিয়ে তৈরি লেখা চেনার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।

এম ড্যাশ ব্যবহার

বিভিন্ন এআই টুলে যে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রায়ই এম ড্যাশের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে আমরা এম ড্যাশ ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে কোনো লেখায় এম ড্যাশের উপস্থিতি থাকলে তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই মডেলগুলো মূলত নিজস্ব তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এম ড্যাশ সাধারণত বই বা লেখা ছাপানোর সময় বিরতি বা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। এআই বিভিন্ন প্রকাশিত বইপত্রের লেখার শৈলী অনুকরণ করে বলে এম ড্যাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর তাই লেখায় অতিরিক্ত এম ড্যাশ ব্যবহার হলে তা এআই দিয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুনএআই দিয়ে বানানো ছবি চিনবেন কীভাবে২২ আগস্ট ২০২৪যান্ত্রিক শব্দচয়ন

এআই মডেলগুলো প্রায়ই কিছু প্যাটার্ন ও শব্দকে পুনরাবৃত্ত করে, আর তাই এআই দিয়ে লেখায় পুনরাবৃত্তিমূলক বাক্য গঠন ও শব্দচয়ন বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় একই ধরনের বাক্য গঠন বেশি চোখে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সংযুক্তমূলক শব্দ যেমন এ ছাড়া, অতএব, ফলস্বরূপ বেশি ব্যবহার করে এআই মডেলে। আবার বিশেষ কিছু বিশেষণ বারবার ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আর তাই লেখায় যান্ত্রিক শব্দচয়ন বেশি থাকলে বুঝতে হবে সেটি এআই দিয়ে লেখা।

গভীরতার অভাব

এআই তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী হলেও মানুষের মতো জটিল বা মৌলিক বিশ্লেষণ করতে পারে না। আর তাই এআইয়ের তৈরি লেখায় গভীরতা ও বিশ্লেষণের অভাব দেখা যায়। এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় তথ্য উপস্থাপন বেশি থাকলেও লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা মানবীয় ভাব অনুপস্থিত থাকে। এআই দিয়ে তৈরি লেখাতে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, আবেগ বা গভীর চিন্তার অভাব থাকে। ফলে লেখাগুলোতে তথ্যের সারসংক্ষেপ বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেখা যায়। এআই প্রায়ই এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, যা ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন আলাপে অনুপস্থিত থাকে।

আরও পড়ুনএআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা শনাক্ত করবেন যেভাবে২৫ মে ২০২৫মানবিক দিক অনুপস্থিত

খুব স্বাভাবিকভাবে এআই দিয়ে লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আবেগের অনুপস্থিতি থাকে। কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, হাস্যরস বা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এআই মডেল গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেও মানবিক স্পর্শ তৈরি করতে পারে না। যখন লেখা নিরপেক্ষ বা আবেগহীন মনে হয়, তখন তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই দিয়ে তৈরি লেখায় বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি বা তথ্যের ভুল দেখা যায়।

আরও পড়ুনএআই প্রযুক্তি দিয়ে প্রতারণা বাড়ছে জিমেইলে, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এআই দিয়ে লেখা চেনার একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরও নিজের বিচার–বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিষয়ে সঙ্গে লেখার প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে ছোট একটি পরীক্ষা করা যাক। দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন লেখাটি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে।

ক. সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি—বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।

খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।

লেখাগুলো পড়ে অনেকেই বলবেন ‘ক’ অনুচ্ছেদের লেখাটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলবেন ‘খ’ অনুচ্ছেদের কথা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে  ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি অনুচ্ছেদই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে। আর তাই এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।

সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনবেন যেভাবে