বইয়ের আলোয় বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা
Published: 12th, March 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের গণগ্রন্থাগার স্থাপনের উদ্যোগ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী পদক্ষেপ। ৫টি উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে গ্রন্থাগারগুলো স্থাপিত হয়েছে। বাকি ২২টি ইউপি কার্যালয়ে গ্রন্থাগার স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন। লক্ষ্মীপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে গণগ্রন্থাগারগুলো। এতে যুক্ত হয়েছেন শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষ। প্রশাসনের এই প্রচেষ্টা কেবল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবে না, বরং এটি একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভিত্তিও গড়ে তুলতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার এবং বিনোদনের অন্যান্য মাধ্যমের কারণে বই পড়ার হার ক্রমে কমে আসছে।
প্রথম আলোর উদ্যোগে ২০২১ সালে ওআরজি-কোয়েস্ট পরিচালিত এক জরিপে উঠে আসে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে তরুণদের পাঠ্যসূচির বাইরের বই পড়ার হার প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছিল। বাংলাদেশে গ্রামীণ পর্যায়ে পাঠাগারব্যবস্থার অভাব দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগ সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবিদার। এই পাঠাগারে কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত আসা বোঝায়, তারা জ্ঞানার্জনে আগ্রহী। এর ফলে তাদের চিন্তাধারা পরিশীলিত হবে, সৃজনশীলতা বাড়বে এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা গড়ে উঠবে।
তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতায় তরুণেরা মুঠোফোনের স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করছে, যা তাদের মনোযোগের স্থায়িত্ব কমিয়ে দিচ্ছে। পাঠাগার এ সমস্যা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে। এরপরও পুঁথিপাঠের আসর এবং সাহিত্যসভার মতো উদ্যোগ পাঠাগারকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। এ উদ্যোগ থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, একজন সরকারি কর্মকর্তার সদিচ্ছা থাকলে কীভাবে সমাজে ইতিবাচক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা সম্ভব। জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকারের মন্তব্য থেকেও স্পষ্ট, তিনি এ উদ্যোগকে কেবল একটি আনুষ্ঠানিক প্রকল্প হিসেবে নয়, বরং একটি স্থায়ী ও কার্যকর সামাজিক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে দেখছেন। প্রশাসনের পরিকল্পিত বাজেট বরাদ্দ ও সমন্বিত উদ্যোগের ফলে এটি সফল হয়েছে।
তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। পাঠাগারে কী ধরনের বই থাকবে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি পাঠাগারে আকর্ষণীয় ও জ্ঞানসমৃদ্ধ বই না থাকে, তবে এটি তরুণদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারবে না। নিশ্চিত করতে হবে যে এখানে সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শনসহ বহুমুখী বিষয়ের বই থাকবে এবং তা নিয়মিত হালনাগাদ হতে থাকবে। সেই সঙ্গে তরুণদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যেন পাঠাগারগুলো ভূমিকা রাখতে, তা–ও একটি বিবেচনার বিষয়। বাংলাদেশে এ উদ্যোগ অনুকরণীয় হতে পারে।
দেশের অন্যান্য জেলার স্থানীয় প্রশাসন যদি এ মডেল অনুসরণ করে, তাহলে বই পড়ার হার বৃদ্ধি পাবে এবং একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে। প্রশাসনের সদিচ্ছা, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং সঠিক পরিকল্পনার সমন্বয়ে এটি আরও সফল হয়ে উঠবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।