কলকাতার নিউ মার্কেটের ‘সেন্টমার্টিন পরিবহন’ এর কাউন্টার এখন কাপড়ের দোকান। শুধুমাত্র সেন্টমার্টিন পরিবহন নয়, কলকাতার নিউমার্কেটে বাংলাদেশি পর্যটন না থাকায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হোটেল, রেস্টুরেন্টে। বাংলাদেশি পর্যটক না থাকায় নিউ মার্কেটে সন্ধ্যা হলেই এখন ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এমন অবস্থায় ৫ আগস্টের পরও প্রথম কয়েক মাস বাংলাদেশি পর্যটকরা কলকাতায় গেলেও এখন পর্যটকের সংখ্যাও একেবারে নেই বললেই চলে। একসময় ‘মিনি-বাংলাদেশ’ বলে খ্যাত কলকাতার এই নিউমার্কেট বাংলাদেশি পর্যটক শূন্য হলে তার প্রভাব পড়ে স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও।

কিছুদিন আগে কলকাতা থেকে নিয়মিত বাংলাদেশে যাত্রীবাহী বাস পরিসেবা দিত ‘সেন্টমার্টিন পরিবহন’। কলকাতা থেকে ঢাকাসহ বাংলাদেশের শহরগুলোতে চলাচলকারী অন্য নামী পরিবহন সংস্থাগুলোর মতো দুই দেশের যাত্রীদের কাছে ভরসাযোগ্য হয়ে উঠেছিল এই পরিবহন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাসের ব্যবসা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ।

আরো পড়ুন:

বড় স্বপ্ন, হামজা জয়গানে বাংলাদেশের শিলং যাত্রা

কোটি টাকার ভারতীয় পণ্যের চোরাচালান আটক

মাসিক এক লাখ ৪০ হাজার রুপিতে ইজারায় নেওয়া ছিল পরিবহনের অফিসের টাকা পরিশোধ করতে এর কাউন্টার এখন পরিণত হয়েছে কাপড়ের দোকানে। বাংলাদেশিরা না থাকায় সেই কাপড়ের দোকানেও নেই আশানুরূপ বিক্রি। পরিবহন সংস্থা থেকে পোশাকের দোকানের মালিক হয়ে ওঠা মোহাম্মদ সরোজ খান জানান, ‘যাত্রী নেই, বাংলাদেশিরা আসছে না। তাই দোকানও পরিবর্তন করেছি। প্রতি মাসে এক লাখ ৪০ হাজার রুপি ভাড়া দিতে হয়। বাস যদি না চলে সেখানে পরিবহনের ব্যবসা রেখে লাভ কি? বর্তমানে টুরিস্ট ভিসা নেই, মেডিকেল ভিসা নিয়েও খুব কম যাত্রী এপারে আসছেন। ফলে ব্যাবসা বদল করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারণ পেট তো চালাতে হবে।’

মঙ্গলবার তিনি জানান, পরিবহন ব্যবসা যখন রমরমা ছিল তখন দিনে ১৫-২০টা গাড়ি যাতায়াত করত। আর এখন ৩-৪টা গাড়ি চলছে। ফলে আমাকে ব্যবসা পরিবর্তন করতে হয়েছে।

কিন্তু ব্যবসা পরিবর্তন করেও কি সফলতা এসেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কোনরকমে চলছে। স্থানীয় ক্রেতা রয়েছে। প্রতিদিন মাত্র ৭-৮টা পোশাক বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশিরা আসলে নিউমার্কেট জমে উঠবে, বাংলাদেশি না থাকলে পুরো ফ্লপ। নিউমার্কেট, পার্ক স্ট্রিটসহ প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা মূলত বাংলাদেশিদের ওপরেই নির্ভরশীল। স্থানীয় ক্রেতারা দুই একজন আসছেন, কিনছেন। ব্যাস এটুকুই!”

সেন্টমার্টিনের দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যেই নিউ মার্কেটের কলিন স্ট্রিটে অবস্থিত ঢাকা মেজবান রেস্টুরেন্ট, চিটাগং রেস্টুরেন্ট, চট্টগ্রাম মেজবান রেস্টুরেন্ট, সালাহউদ্দিন গেস্ট হাউস, তৈয়ব রেস্টুরেন্ট-প্রতিটিই বন্ধ। কোনো হোটেলের তালা বন্ধ মূল ফটকে রশি টাঙিয়ে শুকাচ্ছে লুঙ্গি বা অন্তর্বাস আবার কারোর গেটের তালায় জমেছে মোটা ধুলোর স্তর। 

‘ঢাকা মেজবান’ বন্ধ রেস্টুরেন্টের সামনেই ঠেলা গাড়িতে কলা, তরমুজসহ মৌসুমী ফল বিক্রি করছেন মোহাম্মদ হালিম। তিনি জানান, গত প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা মেজবান রেস্টুরেন্ট। ভারতে আসার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না ফলে বাংলাদেশ থেকে কোন পর্যটক না যাওয়াই রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হওয়ার মূলত কারণ মনে করেন তিনি। ওই এলাকাতেই ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮-১০টি হোটেল বন্ধ রয়েছে বলেও জানান তিনি। এমনকি পর্যটকের অভাবে নিজের ফলের ব্যবসাও ঠিকঠাক চলছে না বলে অভিযোগ তার।

চিটাগং রেস্টুরেন্ট এর কর্ণধার আবুজার কামাল জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই নিউমার্কেটে যত হোটেল বা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে, ঠেলাগাড়ি, রিকশাওয়ালা, সিএনজি আছে, তাদের সবারই ব্যবসা বন্ধ, প্রায় শূন্য হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার হোটেলে এখানে প্রায় ২০ জন কাজ করতো, সবার চাকরি চলে গেছে। কবে ঠিক হবে, টা জানা নেই। নিউমার্কেট চত্বরে প্রায় ২০টা ভাতের হোটেল এবং ২৫ টা গেস্ট হাউস বন্ধ হয়ে গেছে,”।

তিনি বলেন, “যাদের আগে থেকে ভিসা নেওয়া ছিল, তারা কলকাতায় এসেছিলেন কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশি পর্যটক আসা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।” এমন অবস্থায় বিকল্প রোজগারের চিন্তা ভাবনা করছেন ওই হোটেল ব্যবসায়ী।

কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির যুগ্ম সচিব মনতোষ সরকার জানান, ১৫ রোজার পর বহু পর্যটক বিশেষ করে বাংলাদেশিরা এই নিউমার্কেট এলাকায় আসতো, এখানে কেনাকাটা করতো। কিন্তু এবারে সেই চিত্রটা ভিন্ন। ভিসা জটিলতার কারণে কোন পর্যটকই আসতে পারছেন না। ফলে হোটেল, পরিবহনসহ বাংলাদেশি পর্যটকদের সাথে সম্পৃক্তযুক্ত ব্যবসায়ীরা খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। দিনদিন পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে বলেও দাবি তার।

কলকাতা/সুচরিতা/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন টম র ট ন কলক ত র পর বহন ব যবস অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের বন্দর উপজেলা কমিটি গঠন

বাংলাদেশ বেসরকারি বিদ্যালয় বোর্ড ও বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন (দিদার-অদুদ), নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলা কমিটি গঠিত হয়েছে।

কমিটি গঠনের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও বন্দর উপজেলার নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের (দিদার-অদুদ) কেন্দ্রীয় মহাসচিব কোটা সংস্কার আন্দোলনের রূপকার ও দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সাব এডিটর মোহাম্মদ আবদুল অদুদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি এ এইচ এম শামীম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রুবেলের নেতৃত্বে সম্প্রতি বন্দর উপজেলা সভাপতি ও কলরব মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক হাসান কবির, সহ সভাপতি ও সালাহউদ্দিন কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক শারমীন ফারজানা, সহ-সভাপতি ও স্টাডি কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবু ছারোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক ও সুলতানা মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক  আইরিন সুলতানা এসময় মহাসচিবকে শুভেচ্ছা জানান। মহাসচিবও উত্তরীয় পরিয়ে তাদেরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি এ এইচ এম শামীমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রুবেলের সঞ্চালনায় এক আলোচনা সভায় মোহাম্মদ আবদুল অদুদ বলেন, অচিরেই আমাদের বোর্ড ও এসোসিয়েশনের অধীনে থাকা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই পাঠ্যবই হবে এবং একই সিলেবাসের আলোকে বৃত্তি ও স্কুলের একাডেমিক পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচারি সরকার কিন্ডারগার্টেনের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। ফলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কী পরিণতি হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। আমরা এই সরকারকে বলব, আমাদের সাথে বসে নিবন্ধনের জন্য আরোপিত শর্তগুলো সহজ করে ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেনকে নিবন্ধনের আওতায় এনে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিন।

নইলে আরোপিত সকল শর্ত মেনে দেশের সিংহভাগ স্কুলই নিবন্ধন করতে পারবে না। তিনি বিদ্যমান অবস্থায় লেখাপড়ার মানোন্নয়নে প্রতিটি কিন্ডারগার্টেনকে ১ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন বরাদ্দ দেয়ার দাবি করেন।

আলোচনা শেষে কমিটির তালিকা হস্তান্তর হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় হয় এবং অক্টোবরে মাসে অভিষেক ও এ মাসের মধ্যেই লেখাপড়ার মানোন্নয়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন (দিদার-অদুদ), নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সহ সভাপতি ও প্রাইম কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক জনাব মো. সিদ্দিকুর রহমান, বন্দর উপজেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও হাজী আলী হোসেন আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক  মো. ইকবাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও আল-আরাফাহ ইসলামি কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক (প্রধান শিক্ষক) মাহবুব আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁনপুর আইডিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আলমগীর হোসেন, নির্বাহী সদস্য ও কদম রসুল আইডিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক রিনা আক্তার, নির্বাহী সদস্য ও তাকওয়া মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক সানজিদা আক্তার, নির্বাহী সদস্য ও এডুকেয়ার কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক আমেনা আক্তার প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ