Prothomalo:
2025-08-16@17:11:01 GMT

আত্মরতির মুখোমুখি

Published: 16th, August 2025 GMT

উল্লাস ফিরছে আবার
চারিদিকে কাঁপন—কাঁকন ভেঙেছে কার?
আলোছায়ার দগ্ধ বেড়াল পড়ে আছে রাস্তায়
লুকোচুরি খেলছে সময়ের হাঁস
দুর্বোধ নিশ্চল তিরন্দাজ

আবার লংমার্চ—রাস্তা ছাড়ো
গল্পগুলি মরে যাচ্ছে
চরিত্রগুলি রক্ষা করতে পারছে না সম্ভ্রম
বাঁশিতে বাঁশিতে ঝরে পড়ছে বিনাশ
স্বাধীনতা বিক্রি হয় এখন, ভায়া রাজনীতির বাজার

স্বপ্নের পরাগ জমা রাতে যা ছিল চাঁদের পাহাড়
আজ তার ছিন্ন দেহ পতনের হাড়
বিষাদ হরিণীর মুখে নৈঃশাব্দ্যিক ঘাস
অথবা ঘুঘুর ফাঁদ কিংবা ফাঁদের ঘুঘু
চারিপাশজুড়ে মৃত আর্তনাদ

কোথাও তবু ভাষা আছে
ফাগুন হাওয়ায় আলো ঝলমল করে
শরৎস্মৃতির মুখ দেখে পদ্মের বিলে
যদিও ছোবলসর্বস্ব নীতি সংশয়ের কাশে
দোল খায় হওয়া, নাকি কাশকে দোলায়?

সব বিপন্ন সেতু পার হয়ে রাঙা নিরিবিলির মাঠে
তীব্র প্রযুক্তিরও দুর্ঘটনা ঘটে
রাষ্ট্রধর্ম মনুষ্যত্ব চেনে না!
বিপ্লবীর অঙ্কুশে সব চোখ অন্ধ হলে
কে কাকে কাছে টানে? কেবা হাত ধরে কার?

বহু প্রাচীন শতাব্দীর পথে হেঁটে
কোথাও আরোগ্য পাইনি
রোগে–শোকে সবাই উভচর
জলে ও ডাঙায়—কুমির ও বাঘের সঙ্গে
আমরা সবাই বেঁধেছি ঘর

কলাকৌশলের স্কুলে পাশাপাশি
চুম্বন ও উষ্ণতা ভাগ করে
আমরা হয়েছি রবীন্দ্রনাথ-শেক্‌সপিয়ার
তারপর আলো জ্বেলে দেখেছি কুয়োর ব্যাঙ
আঁঠালো জিহ্বার অদ্ভুত শিকারি

উজ্জ্বল অনন্ত জ্ঞানী মচ্ছবের বিকল্প বুঝিনি
রক্তমূল্যে কিনেছি গৌরব কাহিনি
কত ঝড়—তবু পবন বলে ডেকেছি তাকে
বজ্রের ধমক খেয়ে আজও ওকে বলি বিজলানি
গণিকা গৌরবী বলে আজও অন্ধ পদ্মলোচনী

সমূহ ঢেঁকির কাছে কুমির স্বভাব
ধানকে চাল করে আর তা সমাসে ঢেঁকিছাঁটা
সাপের মন্ত্রে মুগ্ধ সাপ ঝাঁপিতে গিয়ে ঢোকে
দানের সঙ্গেও ওরা বিলি করে খোঁটা
সাপুড়েরা জেনে গেছে কোথায় রয়েছে বিষদাঁত

কে শেখাবে দেশপ্রেম? অনেক গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে
এই সব ভাগ্য রচনা
ভাগ্যকে দেখাশোনা করে নতুন নতুন বিড়ম্বনা
আর পিঠেই ছুরি বসিয়ে হা-হা হাসে মীরজাফর
পাতক ঘাতক অথবা বিচারক—

যে রাস্তায় রোজ যাই, রাস্তাও নারীর মতো
হাসে কাঁদে, ভগ্ন ঊরু মোচড় দেয়
অথবা রঙিন নখে আঁচড়ায়—কাতুকুতু লাগে
পাশে একটু বসি, কাত হই, বাস এলে যাব—
আমরা সবাই যাব দিন শেষের বাসে

বাজনা বাজছে—শুনতে পাও?
দূরে দূরে ঢেউ ওঠে—গল্পগুলি উঠছে নৌকায়
কত দূর যাবে ওরা? এপারে–ওপারে রূপকথা
চুপ করে আছে—মনে হচ্ছে মরা
কাছাকাছি গেলে গিলে গিলে খাবে

শান্তির বার্তা উড়ছে চেনা পাখির মতো
কিন্তু ওদের কারও প্রাণ নেই
ব্যাটারিচালিত হৃদয়—তবু ধুকপুক শোনা যায়
এমন সিনেমা আর মানবিক সাম্রাজ্য
মুকুট পরে বসেছে সম্রাট—অচল পয়সাও সচল হলো

ব্যবসা চলছে, রাজনীতির দাঁড়িপাল্লা ওঠানামা করে
মিছিলে ঊনমুখ সবাই স্লোগান পায়
মরচে পড়া রাষ্ট্র—তবু চকচকে অস্ত্র তার
হাততালির ঝরনায় স্নান করে ফিরছে মজদুর
দু-একটা চিতল মাছ ঘাইকাটে, দেখা হবে আবার

কত দিন পর দেখা হয় রাস্তায়
দেহস্বাদ এখনো লেগে আছে দেহে
পরমার্থ যা কিছু ছিল সব শিকারি নিয়ে গেছে
এখন শুধু ইন্দ্রিয় আর স্থূল পশ্চাৎ
ছোটা যায় না কিছুতেই, হাঁটতেও ভয়

তাকাও তাকাও তবে খোলা জানালায়
দেখো মেঘ জমে, বর্ষণক্লান্ত সব ধূসর ইচ্ছার
নাটকের ফাঁকা মঞ্চে ক্রন্দনের দাগ
ইতিহাসও বৈরাগী এখন নষ্ট মধুমাস
জল নেই তবু থই থই ঢেউ সব ধারণার

সুন্দর ঘোড়াগুলি নেমেছে হাটে
একে একে বিক্রি হলে যাবে যুদ্ধের মাঠে
আমরা ঘোড়ার কঙ্কালে উল্লাস সাজাব
মৃত ঘোড়াদের পিঠেই হব সওয়ার
তারপর কত দিন পর আমরাও মৃত—চেয়ে দেখব পরস্পর

অন্ধকারে যেতে যেতে কিরণমালাকে মনে পড়ে
সকাল সকাল এসেছিল মেঘ না চাইতেই
চিকন শরীরে তার কত উলকি ছিল
উলকিই সভ্যতা তার নদী গিরিখাত—
চোখের ইশারায় ঝড় তোলে, নাভিতে সামলায়

অভিজ্ঞতা যতই দক্ষ হোক, বিসর্জন দিতেই হয় তাকে
প্রতিটি পুরুষ নাবালক, হেরে গেলে ইতিহাস লেখে
বয়স বাড়লেও কোথাও কাতুকুতু থাকে
আগুনের ছোঁয়া পেলে সে–ও যায় গলে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার রংহীন দুপুর গড়ায়

সংস্কৃতির আলো কোথাও জ্বলে না
পতঙ্গদের তবু মোহিনী ব্যথা ওঠে
সবাই পুড়তে চায় নিজেরই আলোতে
পুড়ে পুড়ে আত্মরতির মুখোমুখি
নিজেই নিজের হলাহল—চোখ রাঙাও, কাঁদো,
অথবা বোঝাও।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসকদের নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল ড্যাব

চিকিৎসকদের উদ্দেশ করে আজ শনিবার এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। তারা উপদেষ্টার বক্তব্যকে চিকিৎসকদের জন্য ‘অবমাননাকর’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

প্রসঙ্গত, আজ সকালে রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বিপিএইচসিডিওএ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল চিকিৎসকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘পৃথিবীতে কোন জায়গায় হসপিটালে, প্রাইভেট ক্লিনিকে সব সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট টাইম থাকে ডাক্তারের?...আপনারা ওষুধ কোম্পানির দালাল? এ দেশে বড় বড় হসপিটালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের?।’

ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশীদ এবং মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আইন উপদেষ্টাকে জনস্বার্থে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়।

বিবৃতিতে ড্যাবের নেতারা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েও চিকিৎসকদের নিয়ে এমন অবমাননাকর বক্তব্য চিকিৎসকদের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। এমন বক্তব্য স্বাস্থ্যসেবার প্রতি জনসাধারণের আস্থাকে সংকুচিত করে। ন্যায্য বেতন-ভাতা না পাওয়া সত্ত্বেও প্রত্যন্ত গ্রামীণ ক্লিনিক থেকে শহরের ব্যস্ততম হাসপাতালসমূহে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছেন। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শুরু করে ডেঙ্গুর প্রকোপ পর্যন্ত নানা স্বাস্থ্য সংকটে বহু চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন। তবুও চিকিৎসকরা তাঁদের সেবা ও মানবিকতার পথ থেকে পিছপা হননি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে চিকিৎসকেরা আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। গণ-অভ্যুত্থানে চিকিৎসকদের এক বিশাল অবদান থাকার পরও সরকারের একজন উপদেষ্টা কর্তৃক চিকিৎসকদেরকে ‘অপমান করা এক বিরাট অন্যায়।’

গঠনমূলক সমালোচনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সৌন্দর্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে ড্যাব নেতারা বলেন, ‘তবে সেটি হতে হবে তথ্যনির্ভর ও সম্মানজনক। পুরো চিকিৎসক সমাজকে নিয়ে অযথা বদনাম করা হাজারো সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসকের আত্মত্যাগকে অপমানিত করে, চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সর্বোপরি, মেধাবী তরুণদেরকে চিকিৎসাসেবার মতো মহান পেশায় আসার আগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’

এ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জনাব আসিফ নজরুলকে তাঁর বক্তব্য পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই এবং জনস্বার্থে একটি ব্যাখ্যা বা দুঃখ প্রকাশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ