সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, সেটাকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মনে করছি: হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 21st, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, সেটাকে তাঁরা রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ মনে করছেন । শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যে আলোচনাটি হয়েছে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক। সেটি হচ্ছে আমরা মনে করছি, রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি রাজনীতিবিদেরাই নির্ধারণ করবেন—রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহ বা চলমান যা কিছুই, পরবর্তী রাজনীতি কোন দিকে যাবে, সেটি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। তো সে জায়গায় আমরা সন্দিহান বলেই গতকাল আমার স্ট্যাটাস দিতে হয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, সেখানে সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সব কিছু বলা আছে বলে উল্লেখ করেন হাসনাত। ওই স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন ও তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। ১১ মার্চ সেনানিবাসে হাসনাত আবদুল্লাহসহ দুজনের কাছে এমন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো।’
সেনানিবাসে কেন গিয়েছিলেন, সে প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা জানেন যে বর্তমানে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন (আইনশৃঙ্খল পরিস্থিতি) নিয়ে আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিছু দিন আগে আপনারা সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্য দেখেছেন, যে বক্তব্যকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বা আমরা অনেকেই, দেশের মধ্যে এটা নিয়ে কথা হয়েছে যে এটাকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অসমীচীন হিসেবে ধরা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে যেভাবে অ্যাড্রেস করা হয়েছে, যে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের ইঙ্গিত করা হয়েছে আওয়ামী লীগসহ তো সার্বিক বিষয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে, সে জন্য গিয়েছি।’
বর্তমানে নিরাপত্তার ঝুঁকি অনুভব করছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেখুন ৫ আগস্টের আগে ছাত্র–জনতাকে নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি। ফ্যাসিবাদবিরোধী একটা শক্তি ছিল, এজেন্সি ছিল। সরকারপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে ছিলে, তখন তো আমরা বারবার বলেছি, লড়াই চলমান, এখনো সে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ রয়েছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কোনো নিরাপত্তার ঝুঁকি অনুভব করছি না।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবির বিষয়ে হাসনাত বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে আপনারা কোথাও দেখেছেন যে আওয়ামী লীগ অনুশোচনা ফিল করেছে? ওরা যে একটা গণহত্যা চালাইছে, এটা তো স্বীকারও করেনি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগের আগে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, তাকে দল হিসেবে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ স্বীকার করতে হবে, তারপর অন্য কোনো আলোচনা হলে হতে পারে, এর আগে কোনো আলোচনা নয়।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্টের পরে বলেছি, আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা ও আদর্শ—এই তিনটি হচ্ছে অপ্রাসঙ্গিক। এখানে যদি বিদেশি ষড়যন্ত্র অথবা দেশি ষড়যন্ত্র বা এজেন্সি থেকে কোনো অপচেষ্টা চালানো হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা ছাত্ররা কমিটেড (অঙ্গীকারাবদ্ধ), যারা নির্যাতিত–নিপীড়িত, হত্যার শিকার হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের কাছে কমিটেড আওয়ামী লীগের কোনো রিফর্ম হতে দেওয়া যাবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক আম দ র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ‘নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বের ষড়যন্ত্র’ রুখে দিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন সেনপাড়ায় সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তরের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের এই শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লূনা নূর, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোতালেব হোসেন ও মহানগর কমিটির সদস্য রিয়াজ উদ্দিন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত চার মূলনীতি সমুন্নত রাখতে হবে। শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে শ্রমিক, কৃষক, যুব ও নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। বামপন্থীদের সরকার গঠন করতে সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাঁদের নেতৃত্বেই আগামী দিনের ক্ষমতায় লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে।
সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল, আজ তারাই রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, ব্যবস্থার পরিবর্তনই সময়ের দাবি। কমিউনিস্টরা সেই ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আহ্বান জানাই, গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। আগামীকাল থেকেই আমরা জাতীয় নির্বাচনের কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) দেখতে চাই।’
নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু না হলে জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট ও শোষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে জনগণের আন্দোলনে রূপ দেবে।’
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দেশীয় দোসরদের হাতে দেশের সম্পদ লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখনো অনিশ্চিত যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না। কারণ, বর্তমান সরকার এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি। জনগণ আজ অর্থনৈতিক সংকট, বৈষম্য ও দুর্নীতির শিকার। একদিকে জনগণের ঘামঝরানো টাকায় দেশ চলছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা দেশের সম্পদ লুট করছে। সমুদ্রবন্দর, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।