থিয়াগো আলমাদা: রাস্তা থেকে উঠে এসে যেভাবে মেসির উত্তরসূরি
Published: 22nd, March 2025 GMT
ব্যতিক্রম—থিয়াগো আলমাদার নাম শুনলে প্রথমেই মনে আসে এই কথা। সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে কেউ জিজ্ঞেস করতেই পারে, কেন ব্যতিক্রম? ২০২২ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে আর্জেন্টাইন ক্লাব ভেলেজ সার্সফিল্ড ছেড়ে আলমাদা পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব আটলান্টা ইউনাইটেডে।
ইউরোপ কিংবা লাতিন আমেরিকার ফুটবলাররা সাধারণত ক্যারিয়ারের শেষ দিকে গিয়ে বেছে নেনে মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাবগুলোকে। সেখানে একজন তরুণ আর্জেন্টাইন ফুটবলার ক্যারিয়ারের শুরুতেই পাড়ি জমাচ্ছেন আটলান্টিক পাড়ের দেশে। ব্যতিক্রম নয়তো কী!
আলমাদা যতটা ব্যতিক্রম ততটা অনালোচিতও বটে। এমনকি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হওয়ার পরও! কাতার বিশ্বকাপের পর শিরোপাজয়ী আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে, তখন আলমাদাকে তেমন কোনো আলাপই হয়নি। কেউ চাইলে অবশ্য বলতেই পারেন, পুরো বিশ্বকাপে যিনি মাত্র ৬ মিনিট খেলেছেন, তাঁকে নিয়ে কি এমন আর আলোচনা হবে!
বিশ্বকাপে বেশির ভাগ সময় বেঞ্চে বসে কাটলেও এত কাছ থেকে দেশকে বিশ্বকাপ জিততে দেখা এবং সেই দলের অংশ হওয়া নিশ্চিতভাবেই ২০ বছর বয়সী একজন ফুটবলারের জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা নিয়েও কখনো খুব একটা উচ্চকিত হতে দেখা যায়নি আলমাদাকে। এই তরুণ ফুটবালের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে বিশ্বকাপ জয়ের পরপর কিছু ছবি পোস্ট করা ছাড়া তেমন কিছুই আর দেখা গেল না। অদ্ভুত এক নির্লিপ্ততাই বটে।
আরও পড়ুনআলমাদা-ম্যাজিকে আর্জেন্টিনার ২০০০তম গোলে হার উরুগুয়ের১৬ ঘণ্টা আগেআলোচনা যেমন নিজে করেননি, তেমনি সংবাদমাধ্যমগুলোতেও আলমাদাকে নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে সামান্য। তবে কোলাহলের বাইরে থেকেও নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে গেছেন এ মিডফিল্ডার। যখনই কোনো সুযোগ পেয়েছেন, চেষ্টা করেছে তার পূর্ণ ব্যবহারের। যা এখন তাঁকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষত গতকাল চোখধাঁধানো এক গোলে আর্জেন্টিনাকে জেতানোর পর আলমাদা এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
আর্জেন্টিনা দলে খুব একটা সুযোগ না পেলেও আলমাদা বরাবরই ‘আন সাং হিরো’। জাতীয় দলের হয়ে আলমাদা এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলে করেছেন ৩ গোল। এই ম্যাচগুলোতে সব মিলিয়ে তিনি মাঠে ছিলেন মাত্র ২৪৯ মিনিট। অর্থাৎ মিনিট বিবেচনা করলে খেলেছেন তিন ম্যাচেরও কম।
আলমাদার গোলের পর আর্জেন্টিনার উদ্যাপন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ব শ বক প ফ টবল র আলম দ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।
ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’
মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।
ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।
তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।
মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।
আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।
আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদআনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।
সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।