ইসরায়েলের হামলায় গাজায় হামাস নেতা নিহত
Published: 23rd, March 2025 GMT
নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে গতকাল শনিবার অন্তত ৩৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যার এক দিন পর গাজার খান ইউনিসে হামলা চালিয়ে হামাসের এক নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
নিহত ওই নেতার নাম সালাহ আল-বারদাউইল। তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সদস্য ছিলেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় হামলায় তিনি স্ত্রীসহ নিহত হন।
গাজায় কয়েক দিন ধরে তুমুল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ওই রকেট হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননেও আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসরায়েলের হামলায় দক্ষিণ লেবাননে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন এবং চার মাস আগে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, সেটাও ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইয়েমেনের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের হোদেইদা বিমানবন্দরে তিনটি এবং লোহিত সাগরের আস-সালিফ বন্দরে আরেকটি আক্রমণ চালিয়েছে।
আরও পড়ুনহুতিদের হাতে ইসরায়েলি ধনকুবেরের জাহাজ আটক কী বার্তা দিচ্ছে২১ নভেম্বর ২০২৩গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৯ হাজার ৭৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি।
গাজার ‘গভর্নমেন্ট মিডিয়া অফিস’ নিহত মানুষের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ জনের বেশি বলে জানিয়েছে। তারা আরও বলেছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজারো ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন‘কাজ শেষ না হওয়া’ পর্যন্ত ইয়েমেনে হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর, জাতিসংঘের উদ্বেগ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল