দিনাজপুরের পাঁচ বছরের সেই শিশু ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলামকে আজ সোমবার বেলা আড়াইটায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় সাইফুল ইসলামের আত্মীয়ের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍‍্যাব)-১৩। সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের তথ্যের সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১৩ দিনাজপুর কোম্পানি কমান্ডার মহিদুল ইসলাম।

সাড়ে আট বছর আগে জনন অঙ্গ কেটে দিনাজপুরের সেই শিশুটিকে ধর্ষণ করেন সাইফুল ইসলাম। এর ফলে শিশুটির মূত্রথলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একাধিকবার অস্ত্রোপচার হলেও এখনো প্রস্রাব ঝরে তার। শিশুটির বয়স এখন ১৩ বছর।

এর আগে ৮ বছর ৪ মাস কারাদণ্ড ভোগের পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন আসামি সাইফুল ইসলাম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন নিয়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় নারী ও শিশু অধিকারকর্মীদের মধ্যে। এই পরিস্থিতির মধ্য রাষ্ট্রপক্ষ বাদী হয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে জামিন বাতিলের আবেদন করে। ৫ মার্চ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত আসামি সাইফুল ইসলামের হাইকোর্ট থেকে পাওয়া জামিন আদেশের ওপর আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। সেই সঙ্গে আসামিকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গতকাল প্রথম আলোতে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় ‘দিনাজপুরে শিশু ধর্ষণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন স্থগিত, আসামির এলাকা ছাড়ার খবর’ শিরোনামে।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘যাবজ্জীবনের আসামি ছাড়া পাইল ক্যানে?’—ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবার আক্ষেপ শিরোনামে আসামির জামিন হওয়ার সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো।

র‌্যাব-১৩–এর কোম্পানি কমান্ডার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলোর সংবাদটি দেখার পর র‍‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের সহযোগিতায় র‍‍্যাব-১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। দিনাজপুর পুলিশের কাছে আসামিকে হস্তান্তর করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামি সাইফুল ইসলাম ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র তৈরি করছিলেন।

২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর এক প্রতিবেশীর একই বয়সী মেয়ের সঙ্গে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশুটি। পরদিন শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। শিশুটির প্রজনন অঙ্গ, মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকার ক্ষত ছিল। শিশুটির বাবা ওই বছর ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ঘটনার পরপরই প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি আলোচিত হয়। বিচারে সাইফুল ইসলামের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঘটনার ৮ বছর ৪ মাস পর ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাইফুল ইসলাম। দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা এক আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট সাইফুল ইসলামের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।

আসামিকে গ্রেপ্তার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিশুটির বাবা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, র‍‍্যাব তৎপর হয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করায় তিনি অনেক খুশি। তাঁর খুব ভালো লাগছে। আসামি জামিনে মুক্ত থাকায় তাঁরা যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন; সেটা দূর হলো বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমি চাই যাবজ্জীবনের যে রায় দেওয়া আছে, সেটি যেন কার্যকর হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর প রথম আল

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ফতুল্লার লামাপাড়ায় মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, কোর্স সমাপনী সনদ প্রদান, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থতার বর্ষপূর্তি ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।

মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়াস বিগত ২২ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা করে যাচ্ছে।

সব ধরনের আইন ও বিধি-বিধান মেনে সেবার মানোন্নয়ন প্রয়াসের বর্তমান লক্ষ্য। শুধু চিকিৎসা সেবা প্রদান নয়, বরং মানসম্পন্ন টেকসই সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম কেন্দ্রটি পরিচালনা করে থাকে।

জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়াসে চিকিৎসা কোর্স সম্পন্নকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান, প্রাক্তন সদস্যদের মনিটরিং, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থ থাকার স্বীকৃতি ও জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারনায় অংশগ্রহণ প্রয়াসের টেকসই চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ।

তিনি আরো বলেন, আমরাই প্রথম নারায়ণগঞ্জে ৪০ বেডে লাইসেন্স প্রাপ্ত মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রয়াসের প্রতিষ্ঠা ২০০৩ সালে হলেও আমরা লাইসেন্স পেয়েছি ২০০৬ সালে। গত ২০২১ সাল থেকে আমরা প্রতিবছর সরকারি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসছি।

এসময় তিনি অভিভাবক প্রতিনিধি ও প্রাক্তন সদস্যদের প্রয়াসের সামগ্রিক কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের কাউন্সিলর মোঃ সাইফুল ইসলাম, অফিসার এডমিন সাজ্জাদ হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ফরিদ উদ্দিন ও মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, শওকত হোসেন, লিটন, আমজাদ, বাবুসহ  রিকোভারীবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ