দেশে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল আমদানি দ্রুত বাড়ছে। গত তিন বছরে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল বা ই–বাইক আমদানি বেড়ে চার গুণ হয়ে গেছে। খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ই–বাইক আমদানি বাড়লেও এখনো দেশে জ্বালানিচালিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি। জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় খরচ ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ই–বাইকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে।
খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশে আসা ই–বাইকের বড় অংশই সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় আমদানি করা হয়। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ই–বাইক আমদানি করা যন্ত্রাংশ সংযোজন করে বিক্রি করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ৪৪৬টি বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল আমদানি করা হয়, যার মোট আমদানি মূল্য ছিল ৯ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫৩। যার আমদানি মূল্য ৪৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন বছরের ব্যবধানে ই–বাইক আমদানি বেড়ে চার গুণ হয়েছে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে যেসব ই–বাইক আমদানি হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির গড় আমদানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৭৫২ টাকা। তবে এ আমদানি মূল্য হিসাব করা হয়েছে আমদানি শুল্কসহ কর বাবদ অন্যান্য খরচ বাদে।
এ দেশে ই–বাইক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের একটি রিভো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা জানান, গত তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ২১০টি ই–বাইক বিক্রি করেছে। যার বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।
খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে প্রথম ই–বাইক আমদানি করা হয় ২০১৭ সালে। ওই বছর আমদানি হয় ২ হাজার ৮৬২টি ই–বাইক। আমদানি শুরুর পাঁচ বছরের মাথায় এসে ২০২২ সালে আমদানি হয় ৩ হাজার ১২৮টি ই–বাইক।
ধীরে হলেও আমদানি বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে অটোমোবাইল খাতের দেশি কোম্পানি রানার অটোমোবাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে জ্বালানির দাম দিন দিন বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজট। এতে জ্বালানিচালিত মোটরসাইকেলের জ্বালানি খরচ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে একটি শ্রেণির মধ্যে ই-বাইকের চাহিদা বাড়ছে। জ্বালানিচালিত মোটরসাইকেলের চেয়ে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলে খরচ কম। চাহিদা বাড়তে থাকায় আমরাও সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের ই–বাইক আমদানি করছি।’
বড় হচ্ছে বাজার
খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ই-বাইকে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ১০ থেকে ৩০ পয়সা। সেখানে তেলচালিত মোটরসাইকেলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয় দু–তিন টাকা। সেই হিসাবে ই-বাইক অনেক বেশি সাশ্রয়ী। রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম। এ ছাড়া ই–বাইক পরিবেশবান্ধব। এ কারণে তরুণদেরও আগ্রহ বাড়ছে। দেশে বর্তমানে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ই–বাইক আমদানি, সংযোজন ও বাজারজাত করছে। ই–বাইকের বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি দখলে রয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান রিভো ও ইয়াদিয়া। ইয়াদিয়ার বাংলাদেশে পরিবেশক হিসেবে কাজ করছে রানার অটোমোবাইলস। এরপর রয়েছে দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন, আকিজ, আইমা, সালিদা ও টেইলজি ব্র্যান্ডের ই–বাইক। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরঞ্জাম আমদানি করে দেশেই সংযোজন করছে ই–বাইক। অন্যরা সরাসরি আমদানি করছে। দেশে বর্তমানে ব্র্যান্ডভেদে একেকটি ই–বাইকের দাম ৭০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত।
জানতে চাইলে ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তেলচালিত মোটরসাইকেলের বদলে ই–বাইক ব্যবহারে মাসে জ্বালানি খরচ প্রায় ৮০ শতাংশ সাশ্রয় করা সম্ভব। তেলচালিত একটি মোটরসাইকেলের পেছনে জ্বালানি খরচের বাইরে দুই বছরে অন্যান্য খরচ বাবদ অতিরিক্ত যে খরচ হয়, তা দিয়ে একটি ই–বাইক কেনা যায়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী অলি আহমেদ দেড় বছর ধরে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। আগে তিনি ১৫০ সিসির তেলচালিত মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল ব্যবহারে আমার মাসে পাঁচ হাজার টাকা খরচ কমেছে।’
ই-বাইকের চাহিদা ঢাকার তুলনায় খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি। দেশে ই–বাইক সংযোজন শুরু করেছি। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সড়কে ই–বাইকের চার্জের সুযোগ এখনো সীমিত। তাই ই–বাইক কিনতে অনেকের আগ্রহ কমতৌহিদুর রহমান, প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজচার্জিং অবকাঠামো ও সম্ভাবনা
খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলসহ বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ই-বাইক উৎপাদনে করছাড় দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদনে ৫ শতাংশের বেশি সব কর মওকুফ করা হয়েছে। আর ই-বাইকের যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রেও সব ধরনের ভ্যাট, আগাম কর ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তবে খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে ই-বাইকের বাজার বড় হওয়ার পেছনে বড় বাধা চার্জিং–সুবিধার অভাব। সড়কে পর্যাপ্তসংখ্যক চার্জিং–স্টেশন না থাকায় ব্যবহারকারীরা ই-বাইকের দিকে ঝুঁকতে অনীহা বোধ করছেন। বিশেষ করে দীর্ঘ ভ্রমণে চার্জের সুবিধা নিয়ে শঙ্কায় থাকেন ব্যবহারকারীরা।
ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘ই-বাইকের চাহিদা ঢাকার তুলনায় খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি। দেশে ই–বাইক সংযোজন শুরু করেছি। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সড়কে ই–বাইকের চার্জের সুযোগ এখনো সীমিত। তাই ই–বাইক কিনতে অনেকের আগ্রহ কম। ব্যাটারির দ্রুত চার্জিং ও সোয়াপিং (ব্যাটারি পরিবর্তন) কেন্দ্রের সুবিধা কার্যকর করা গেলে দ্রুত এই বাজার বড় হবে।’
খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসায় একটি ই-বাইক সম্পূর্ণ চার্জ দিতে সাত–আট ঘণ্টা সময় লাগে। অন্যদিকে চার্জিং স্টেশনের মাধ্যমে মাত্র ৪০ মিনিটেই চার্জ করা সম্ভব। বর্তমানে দেশে চার্জিং স্টেশনের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় ব্যবহারকারীদের নিজস্ব ব্যবস্থায় চার্জ দিতে হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবে, দেশের মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ। এর মধ্যে ৪৭ লাখের বেশি মোটরসাইকেল। আর নিবন্ধিত বৈদ্যুতিক যানবাহনের সংখ্যা ৪৭৪। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের ও স্কুটারের সংখ্যা ২৬১। বিআরটিএর হিসাবে, দেশে কয়েক হাজার বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল চললেও বেশির ভাগের নিবন্ধন নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র স য জন বলছ ন ব যবস প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার কোনো গডফাদার নেই’
তখন সন্ধ্যা নেমেছে। খিলগাঁও তালতলা মার্কেট এলাকায় মানুষের ভিড়। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো লাইভ লোকেশন ধরে খুঁজতে থাকি জাহের আলভীকে। মার্কেটের পাশের এক গলিতে ঢুকতেই একজন এগিয়ে নিতে এলেন। তাঁর সঙ্গে গলির শেষে ছোট্ট একটা বাড়িতে ঢুকে দেখা মেলে অভিনেতার। মনোযোগ দিয়ে নিজের নির্দেশিত নাটকের সম্পাদনার কাজ তদারক করছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই চলল আড্ডা। আলাপের শুরুতে আলভী ফিরে গিয়েছিলেন কৈশোর, সংগ্রামের দিনগুলোতে। উঠে এল প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তি, আক্ষেপ থেকে নতুন স্বপ্ন।
গায়ক হতে এসে নায়ক
গানের গলা ছিল। কৈশোরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় গলা ছেড়ে গাইতেন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে গানের অনুরোধ করতেন সবাই। ২০১৩ সালে আলভী নাম লেখান রিয়েলিটি শো চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠে। কয়েক ধাপ পেরিয়ে থামেন সেরা পনেরোতে। প্রচণ্ড মন খারাপের সঙ্গে জেদ চাপে নিজের মধ্যে।