মিছিল নিয়ে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে শহীদ পরিবার, চিফ প্রসিকিউটরের পদত্যাগ দাবি
Published: 24th, March 2025 GMT
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গিয়েছিলেন জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। আজ সোমবার দুপুর একটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাঁরা অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান। কিন্তু ফটকের সামনেই তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ফটকের সামনে অবস্থানের পর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। কর্মসূচিতে শাহবাগে অবস্থান করা জুলাই মঞ্চের সদস্যরা অংশ নেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে অবস্থানের সময় শহীদ পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম যাতে তাঁদের সঙ্গে এসে দেখা করেন, কথা বলেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা শহীদ পরিবারের সদস্যদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে ভেতরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ভেতরে যেতে রাজি হননি। ফটকের সামনেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। চিফ প্রসিকিউটর তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। শেষে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা চিফ প্রসিকিউটরের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।
এর আগে বেলা একটার কিছু পরে প্রেসক্লাব থেকে মিছিল নিয়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে পৌঁছান মানববন্ধনকারী শহীদ পরিবারের সদস্যরা। হাইকোর্ট মাজার ও মসজিদসংলগ্ন ট্রাইব্যুনালের ফটকের সামনে মিছিল নিয়ে যাওয়া শহীদ পরিবারের সদস্যদের বাধা দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে যুক্ত হন শাহবাগে অবস্থান করা জুলাই মঞ্চের সদস্যরা। পরে এই দুই পক্ষ মিলে ফটকের সামনে বসে-দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
ট্রাইব্যুনালের সামনে এই অবস্থানে শহীদ শাহরিয়ার হাসানের বাবা আবুল হাসান বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি, তিনি (চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম) আসামিদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন (সমঝোতা) করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।.
আবুল হাসান আরও বলেন, ‘ঈদের পরে আমরা যেদিন আসব সেদিন আমরা ট্রাইব্যুনাল ভাঙচুর করব, যদি তিনি (তাজুল) এই ট্রাইব্যুনালে থাকেন। দফা এক দাবি এক—তাজুলের পদত্যাগ। তাঁকে আমরা এখানে আর দেখতে চাই না। তিনি গোটা শহীদ পরিবারকে অপমান করেছেন, অপদস্থ করেছেন। তিনি শহীদ পরিবারের শত্রু, জাতির শত্রু। শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। নাম্বার ওয়ান মিরজাফর।’
তাজুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করে সন্তানহারা এই বাবা আরও বলেন, ‘তিনি যদি ঈদের পরে এই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বসেন, এই রঙ্গমঞ্চ ভেঙে ছারখার করে দেব। টুকরো টুকরো করে দেব। ওনার মতো অপরাধীর এখানে বসার কোনো অধিকার নাই।’
জুলাই মঞ্চের পক্ষ থেকে আরিফ তালুকদার বলেন, ‘আমরা জুলাই মঞ্চ থেকে বলে দিতে চাই, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, অন্তর্বর্তী সরকার আমরাই বসিয়েছি। এই সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, সবাই সাক্ষী আছেন তিনি (চিফ প্রসিকিউটর) দেখা করেননি। ...তার পদত্যাগ আমরা করিয়েই ছাড়ব।’ জুলাই মঞ্চ থেকে ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যের জন্য আরও বেঞ্চ বাড়ানোর এবং তাজুল ইসলামের অবস্থান পরিষ্কারের দাবি জানানো হয়।
গুম, খুনের বিচারের দাবিতে ‘জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে যায়। আজ সোমবার দুপুরেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত জ ল ইসল ম র পদত য গ অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫