পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের জানালা ভেঙে পালানো সেই যুবক গ্রেপ্তার
Published: 25th, March 2025 GMT
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের জানালার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যাওয়া মাদক মামলার আসামি রয়েল হোসেনকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া পাথরখনি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আফতাবগঞ্জ পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল হক।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত রোববার ভোরের দিকে উপজেলার কাজীপাড়া এলাকায় একটি মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে যৌথ বাহিনী। এ সময় রয়েল হোসেনকে মাতলামি করতে দেখেন তাঁরা। এ অবস্থায় তাঁকে আটক করে আফতাবগঞ্জ পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে সেখানে এক পুলিশ সদস্যের পাহারায় তাঁকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ রাখা হয়। পুলিশের দাবি, সাহ্রির সময় সবার ব্যস্ততার সুযোগে ঘরটির পেছন দিকের জানালার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যান রয়েল।
সিরাজুল হক আজ সকালে জানান, রয়েল হোসেন পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে আফতাবগঞ্জ পুলিশ তদন্তকেন্দ্র ও নবাবগঞ্জ থানা-পুলিশ। গতকাল রাতে পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া পাথরখনি এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের হেফাজত থেকে গ্রিল ভেঙে পালানোর ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়েছে। আজ তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে আপস নয়
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন। সেই রক্ষাঢাল ধ্বংস করে গুটিকয় ব্যক্তি যখন গোটা জনগোষ্ঠীকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, এর থেকে ভয়াবহ নৈরাজ্যের বার্তা আর কী হতে পারে। কেননা প্রভাবশালী নামে পরিচিত এসব ব্যক্তি এই অপরাধ যে সরকারি সব কর্তৃপক্ষের অজান্তে করেছেন, তা তো নয়। সবার চোখের সামনেই খননযন্ত্র এনে বন সাবাড় করে মাটি খুঁড়ে মাছ চাষের ঘের তৈরি করছেন।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বরগুনার তালতলী উপজেলায় আন্ধারমানিক নদের দুই তীরে প্রায় ২০ কিলোমিটার বাঁধের ঢালে ৫০টির বেশি ঘের গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এতে শুধু ম্যানগ্রোভ বনই উজাড় হচ্ছে না, সঙ্গে বাঁধও হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, বাঁধের ২০ ফুটের মধ্যে পুকুর, দিঘি বা ঘের নির্মাণ করা যাবে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই আইন বাস্তবায়নে বন বিভাগ, পাউবো ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কার্যকর কী পদক্ষেপ নিয়েছে? তাহলে কি আমরা ধরে নেব, ভূতটা শর্ষের ভেতরেই বিদ্যমান? ঘের তৈরির সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় স্থানীয় মানুষেরা কিছু বলতে পারেন না। তাঁদের অভিযোগ, নেপথ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
যদিও বন বিভাগ যথারীতি দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু বন বিভাগের তথ্যই প্রমাণ করছে যে তারা যে শম্বুকগতিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে প্রক্রিয়াটা শেষ হতে অনন্তকালও লেগে যেতে পারে! কেননা, ছয়জন ঘেরমালিকের বিরুদ্ধে তারা মামলা করেছে আর কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
বন উজাড় করে ঘের কেটে যাঁরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছেন, তাঁদের যুক্তি হলো জমি তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন। আবার কেউ যুক্তি দিয়েছেন, সরকারের কাছ থেকে তাঁরা বন্দোবস্ত পেয়েছেন। কিন্তু নদীর চরের জমি কীভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা যেখানে জড়িত, সেখানে আইনি যুক্তির বাইরে আর কোনো যুক্তিতর্ক কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
আমরা মনে করি, বন বিভাগ, পাউবো ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণেই তালতলীর উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে। প্রভাবশালীরা যে দলের হোক না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্ধারমানিক নদের ঢালের অবৈধ ঘেরগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করে সেখানকার ভূগঠনকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া জরুরি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস নয়।